ধোনির চেয়েও ইডেনে বড় পরীক্ষা সৌরভের
বারাবাটিতে দর্শকদের উসৃঙ্খল আচরণ বেশ সমালোচনা তৈরী করেছে। পুরো ক্রিকেট বিশ্বেই ভারতীয় দর্শকদের নিয়ে ছি ছি পড়ে গেছে। বলা হচ্ছে ক্রিকেট বিশ্বে সবচেয় উন্মাতাল, বাজে দর্শক হলো ভারতের। বারাবটির পর এবার কলকাতার ইডেন গার্ডেনের পালা। এখান দর্শকদেরও তো ভালো সুনাম নেই। সুতরাং, দর্শকদের নিয়ন্ত্রণের সব ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করা হয়ে গেছে। তবুও তো চ্যালেঞ্জটা আসলে কম নয়।
মঙ্গলবার মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে দমদম এয়ারপোর্টে যতটা ফুরফুরে লেগেছে, ততটা নাকি আদতে মোটেও ছিলেন না। দুপুর-দুপুর এয়ারপোর্টের বাইরে পরিচিত সিএবি সদস্যকে দেখে হাত মেলানো থেকে শুরু করে ফোটোগ্রাফারদের আবদারে চিলতে হাসি— এমএসডি খুব একটা কার্পণ্য করেননি।
কিন্তু শোনা গেল, আলিপুরের অভিজাত টিম হোটেলে চেক-ইন করার পর ছবিটা প্রায় পুরোটাই পাল্টে যায়। ভারত অধিনায়ককে বেশ বিমর্ষ, চুপচাপই দেখিয়েছে। কথাবার্তা বিশেষ বলেননি নাকি কারও সঙ্গে। লাঞ্চ সেরে রুমে ঢুকে পড়ার পর সন্ধে পর্যন্ত তাঁকে হোটেল লবিতে দেখা গিয়েছে বলেও শোনা গেল না।
মহেন্দ্র সিংহ ধোনির এমন বিপরীতধর্মী আচরণের পিছনে যথেষ্ট যুক্তিও আছে। বুধবারের ইডেনে তিনি টিম নিয়ে নামবেন ঠিকই, কিন্তু ম্যাচটাই তো অর্থহীন হয়ে গিয়েছে। ধর্মশালার পর কটক— ফ্যাফ ডু’প্লেসিসের দক্ষিণ আফ্রিকা ধোনিদের দু’জায়গাতেই উড়িয়ে দিয়ে সিরিজের মৃত্যু ঘটিয়ে দিয়েছে। কেউ কেউ বলতে পারেন যে, এত কিছুর পরেও আগ্রহের একটা বিষয় থাকবে।
ধোনির অধিনায়কত্ব, ফর্ম নিয়ে ইদানিং যে কড়া প্রশ্নগুলো উঠছে, তার যোগ্য উত্তর ইডেনে তিনি দিতে পারবেন কি না, নিয়মরক্ষার ম্যাচেও সেটা তো দেখতে চাইবে কলকাতা; কিন্তু বাস্তব হল, কলকাতা অনেক বেশি আগ্রহী থাকবে অন্য একটা পরীক্ষার রেজাল্ট আউটে। আর এক জনের পরীক্ষার এবং নিশ্চিত ভাবে তার নামটা মহেন্দ্র সিংহ ধোনি নয়।
তিনি, ভারতীয় ক্রিকেটে ধোনির পূর্বসুরি। সৌরভ গাঙ্গুলি এবং বাইশ গজে নয়, পরীক্ষাটা তাঁর বাইশ গজের বাইরের। ক্রিকেট নয়, প্রশাসনিক দক্ষতার।
সিএবিতে গত কয়েক দিন ধরে দেখা যাচ্ছিল, ম্যাচের সাংগঠনিক ব্যাপার-স্যাপারে প্রবল ভাবে ঢুকে পড়তে চাইছেন সৌরভ। সিএবি প্রেসিডেন্ট (ঘোষিত) হিসেবে এটাই তাঁর প্রথম প্রশাসনিক-যুদ্ধ এবং সেটা— মেগা-যুদ্ধ। যতই হোক টি২০, যতই হোক গুরুত্বহীন, কিন্তু আদতে তো বৃহস্পতিবারের ইডেনে আন্তর্জাতিক ম্যাচ। আর সেটা নিখুঁত শেষ করা খুব সহজ চ্যালেঞ্জ নয়।
লেটার মার্কস না এলেও চলবে। কিন্তু পাস মার্ক না উঠলে তো বদনামের শেষ থাকবে না। কাজও এক-আধটা নয়, এক হাজার। স্টেডিয়ামে পানির ব্যবস্থা থেকে শুরু করে উইকেট চরিত্র— প্রশ্নের তো শেষ থাকে না। সৌরভকে দেখা গেল এদিনি একের পর বৈঠক করছেন। মাঝে একবার সময় করে ঘুরে এলেন টিকিট কাউন্টার। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি যাকে বলে। সন্ধ্যের দিকে সিএবিতে সৌরভ বলছিলেন, ‘স্যার (ডালমিয়া) ছাড়াও ইডেনে ম্যাচ আয়োজন হয়েছে। টিমওয়ার্কে এটা বের করতে হবে।’
সিএবি কোষাধ্যক্ষ বিশ্বরূপ দেও বলে দিলেন, ‘ডালমিয়ার কথা মাথায় রেখেই আমাদের সবাইকে দেখতে হবে ম্যাচে যাতে কোনও রকম অসুবিধে না হয়।’
কিন্তু হবু সিএবি প্রেসিডেন্টের চেষ্টা শেষ পর্যন্ত কতটা মর্যাদা পাবে, কে জানে। এমনিতে কলকাতায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মানে, সেটা নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে কোনও একটা সময়। সাধারণত, নভেম্বর থেকেই ক্রিকেট-উৎসবের শুরু হয়; কিন্তু এবার সেটা এক মাস এগিয়ে এসে পড়ছে ঠিক পুজার মুখে।
কলকাতার ক্রিকেট-দর্শকের ট্রেন্ড হল, ম্যাচের সাত দিন আগে থেকে উত্তেজনা বাড়তে বাড়তে তা চরমে পৌঁছায় দল শহরে ঢুকে পড়লে। মঙ্গলবার দুপুরে দু’টো টিম ঢুকে পড়ল; কিন্তু তাতে বাড়তি একটা টিকিটও বিক্রি হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেল না। বরং বলা হচ্ছে, গ্যালারির অর্ধেক ভরলেও নাকি ধরতে হবে যথেষ্ট!
গ্যালারি নিয়ে আরও একটা ভাবনা চলছে। তবে সেটা নাকি ভারতীয় শিবিরে। শোনা গেল, এ দিন টিম বাসে করে হোটেলে আসার পথে রোহিত শর্মা পরিচিত একজনকে বলে ফেলেছেন যে, গত কাল বরাবাটি দর্শকের আচরণে দল বেশ দুঃখই পেয়েছে। দেশের কথা মাথায় রেখেই সব সময় মাঠে নামেন প্লেয়াররা। সমর্থকদের আবেগকে যথেষ্ট শ্রদ্ধার চোখে দেখাও হয়।
সেখানে একটা ম্যাচে হারকে ঘিরে গ্যালারি থেকে এমন বোতল-বৃষ্টি কি ভারতীয় টিমের প্রাপ্য? এমন অনুযোগও নাকি করা হয় যে, পূর্ব ভারতেই এমন প্রবণতা দেখা যায়। মুম্বই বা অন্য কোথাও হারলে এমন পরিস্থিতির সামনে পড়তে হয় না। টিম নাকি আশা করে যে, কটক যে দুঃখ দিয়েছে, ইডেন সেই ক্ষতে প্রলেপ দিয়ে যাবে।
সম্ভবও নয়। যা খবর, ম্যাচের দিন চার স্তরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকছে ইডেনে। প্রত্যেকটা গেটে দর্শকদের তল্লাশি আরও কঠোর করা হচ্ছে। দেখা হবে, কেউ এমন কোনও বস্তু নিয়ে না ঢুকতে পারেন যা মাঠে ছুড়ে মারা যেতে পারে। বোতলের প্রশ্নই নেই, কোনও শক্তপোক্ত জিনিস নিয়েই মাঠে ঢোকা যাবে না।
সব মিলিয়ে কী দাঁড়াল?
একটা আন্তর্জাতিক ম্যাচকে জমজমাট করে তুলতে যা যা উপাদান দরকার, বৃহস্পতিবারের ইডেনে তার সবই থাকবে। এমএস ধোনি, বিরাট কোহলিরা থাকবেন। থাকবেন ‘থ্রি সিক্সটি ডিগ্রি’ এবি ডি। আর থাকবে টি২০ সিরিজে তাদের শেষ যুদ্ধকে ঘিরে অভূতপূর্ব নিরাপত্তা।
মন্তব্য চালু নেই