চট্টগ্রামে জঙ্গি দমনে সিএমপি’র সাফল্য

চট্টগ্রামে জঙ্গি তৎপরতা দমনে সাফল্যের দাবি করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। নগরীর কর্ণফুলী থানাধীন খোয়াজনগর এলাকায় জঙ্গি আস্তানার সন্ধান ও গ্রেনেডসহ ৫ জঙ্গিকে গ্রেফতারের পর মঙ্গলবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ সাফল্য দাবি করেন চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (প্রশাসন, অর্থ ও ট্রাফিক) শহীদুর রহমান।

সংবাদ সম্মেলনে শহীদুর রহমান বলেন, অতীতে চট্টগ্রামে বড় ধরনের নাশকতা কিংবা জঙ্গি তৎপরতা চালানোর আগেই পুলিশ গোয়েন্দা তৎপরতার মাধ্যমে জঙ্গি দমনে সাফল্য দেখিয়েছে। সর্বশেষ একটি ছিনতাইয়ের ঘটনার সূত্র ধরে সোমবার সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে নয়টি গ্রেনেড, পিস্তল ও ১১৫ রাউন্ড গুলিসহ ৫ জঙ্গিকে হাতেনাতে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে।

গ্রেফতারকৃত জঙ্গিদের মধ্যে জেএমবির চট্টগ্রাম অঞ্চলের সামরিক কমান্ডার জাবেদকে নিয়ে মঙ্গলবার ভোরে নতুন আস্তানায় গেলে গ্রেনেড বিস্ফোরণে জেএমবি নেতা জাবেদ নিহত হয়। আহত হয় তিন পুলিশ সদস্য। সংবাদ সম্মেলনে সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার সাংবাদিকদের জানান, চট্টগ্রামে জেএমবি সংগঠিত হচ্ছিল। এ লক্ষ্যে ফান্ড সংগ্রহে ছিনতাই করতে গিয়ে প্রথমে তারা গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটায়।

এ ঘটনায় দুই জঙ্গি সদস্য এবং ছিনতাইয়ের শিকার ব্যবসায়ী সত্য গোপাল নিহত হয়। ওই ঘটনার সূত্র ধরে অনুসন্ধান করতে গিয়েই চট্টগ্রামে জেএমবির আস্তানার সন্ধান পায় পুলিশ। চট্টগ্রাম নগরবাসীকে আশ্বস্ত করে অতিরিক্ত কমিশনার শহীদুর রহমান বলেন, বিচ্ছিন্নভাবে জঙ্গিরা সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করলেও চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের কঠোর তৎপরতা ও নজরদারির কারণে তারা কখনো সফল হতে পারেনি। আগামীতে চট্টগ্রামে সব ধরনের জঙ্গি তৎপরতা বন্ধ করা হবে।

প্রেস ব্রিফিং করছেন সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার শহীদুর রহমান চট্টগ্রামে আর কোনো জঙ্গি ঘাঁটি বা জেএমবির সদস্যদের অবস্থানের তথ্য পুলিশের কাছে আছে কি না, এ প্রশ্নের জবাবে সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, গ্রেফতারকৃত জঙ্গিদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এই ব্যাপারে তথ্য উঘাটনের চেষ্টা চলছে। এই জঙ্গি তৎপরতার সঙ্গে খুব সীমিত সংখ্যক মানুষ জড়িত। গ্রেনেড বিস্ফোরণে নিহত জেএমবি নেতা জাবেদ জীবিত থাকলে হয়ত আরো কিছু তথ্য পাওয়া সম্ভব হতো।

কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সে নিহত হওয়ায় কিছু তথ্য হয়ত জানা সম্ভব হবে না। তবে এই দলের আরো চার সদস্য পুলিশের হেফাজতে থাকায় তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জঙ্গি তৎপরতার বিস্তারিত তথ্য উ™ঘাটন করা হবে। সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) দেবদাস ভট্টাচার্য্য, জঙ্গি আস্তানার সন্ধান ও গ্রেফতার অভিযানে নেতৃত্বদানকারী নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (উত্তর ও দক্ষিণ) বাবুল আক্তার।

বাবুল আক্তারের নেতৃত্বে চাঞ্চল্যকর এই অভিযানে আরো অংশ নেন নগর গোয়েন্দা পুলিশের এসআই সন্তোষ কুমার চাকমা, এসআই লিয়াকত আলী, এসআই ইলিয়াছ খাঁন, এসআই শিবেন বিশ্বাস, এসআই রাজেশ বড়–য়া, এস আই রাসেল মিয়া, এসআই আফতাবসহ গোয়েন্দা পুলিশের একটি চৌকস দল। পুলিশ সংবাদ সম্মেলনে আরো জানায়, গ্রেফতারকৃত জঙ্গিরা জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানায়, তারা নিষিদ্ধ ঘোষিত জেএমবি সদস্য।

গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে জাবেদ জেএমবির চট্টগ্রাম অঞ্চলের সামরিক বিভাগের প্রধান। আসামি ফুয়াদ চট্টগ্রাম অঞ্চলের সেকেন্ড ইন কমান্ড। সে আদর্শগত কারণে এবং তহবিল সংগ্রহের উদ্দেশ্যে গত ২৪ সেপ্টেম্বর সদরঘাট থানাধীন শাহ করপোরেশনের টাকা ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে। ছিনতাইয়ে জেএমবির আট সদস্য অংশ নেয়। এর মধ্যে চারজন দুটি মটরসাইকেলে অপারেশন টিম হিসেবে এবং অপর চারজন রেসকিউ টিম হিসেবে কাজ করে।

এ ঘটনায় শাহ করপোরেশনের ৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা ছিনতাইকালে তারা গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটায়। গ্রেনেডের আঘাতে জেএমবির সদস্য রবিউল ও রফিক ঘটনাস্থলেই মারা যায় এবং শাহ করপোরেশনের ম্যানেজার সত্য গোপাল চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ছিনতাইয়ে আরো অংশ নেয় ফারদিন, পিয়াস, সজিব, হাবিব, কালাইয়া প্রকাশ মটু ও ফুয়াদ।

এর আগে গত ৪ সেপ্টেম্বর বায়েজিদ বোস্তামী থানাধীন বাংলাবাজার এলাকায় ল্যাংটা ফকির ও তার খাদেম খুনের ঘটনায় গ্রেফতারকৃত আসামি বাবু জড়িত ছিল বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানায়। মাজার সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম ইসলামবিরোধী, ওসব ইসলাম ও শরিয়তবিরোধীদের খুন করলে জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়। এ বিশ্বাস ধারণ করে বাবু ফকিরের মাজারে একা প্রবেশ করে প্রথমে ঘুমন্ত ফকিরকে ও পরে তার খাদেমকে খুন করে এবং গ্রেনেড বিস্ফোরণ করে ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে পালিয়ে যায়।

গ্রেফতারকৃত জাবেদ (পরে নিহত) জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে স্বীকার করে যে, তাদের ব্যবহৃত আরো কিছু গ্রেনেড পরিবহণজনিত অসুবিধার কারণে বায়েজিদ বোস্তামী থানাধীন কোয়াইশ এলাকায় লুকিয়ে রাখা হয়েছে। সে তা বের করে দিতে পারবে। তাকে সঙ্গে নিয়ে মঙ্গলবার ভোরে গোয়েন্দা বিভাগের একটি দল গ্রেনেড উদ্ধারে গেলে ওই স্থানে পৌঁছামাত্র জাবেদের সহযোগীরা গ্রেনেড ছুঁড়ে মারে। এতে জাবেদ গুরুতর আহত হয়। তিন পুলিশ সদস্যও আহত হয়।

আহত সবাইকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জাবেদকে মৃত ঘোষণা করেন।

জঙ্গীদের হেফাজত থেকে উদ্ধারকৃত অস্ত্রগুলিসহ বিভিন্ন সামগ্রী জঙ্গিদের হেফাজত থেকে জব্দকৃত মালামাল : হ্যান্ড গ্রেনেড ৮টি, পয়েন্ট ২২ বোর পিস্তল ১টি, বিভিন্ন সাইজের খালি ম্যাগাজিন ৪টি, একটি অক ২২ রাইফেলের বাট, ২২ বোরের ১১৫ রাউন্ড গুলি, একটি চাইনিজ কুড়াল, ১০টি স্টিলের টিপ ছোরা, ছোরা রাখার ১০টি বিভিন্ন সাইজের কাপড়ের প্রসেস কভার, ৭টি পলিথিনের প্যাকেট ভর্তি স্টিলের রিং (প্রতি প্যাকেটে ১৩৫টি করে মোট ৯৪৫টি), ৩টি পলিথিনের প্যাকেট ভর্তি সার্কিট বোর্ড (প্রতি প্যাকেটে ৩০০টি করে মোট ৯০০টি), ৩টি পলিথিনের প্যাকেট ভর্তি ক্যাপাসিটার ফিতা (প্রতি প্যাকেটে ৩০০টি করে মোট ৯০০টি ক্যাপাসিটার), ৩টি পলিথিনের প্যাকেট ভর্তি টগল সুইচ (প্রতিটি প্যাকেটে ২৭৫টি করে মোট ৮২৫টি, ৩টি পলিথিনের প্যাকেট ভর্তি ডায়ট (রোধক) (প্রতি প্যাকেটে ৩০০টি করে মোট ৯০০টি), ৩টি পলিথিনের প্যাকেট ভর্তি তার কাটা ¯িপ্রং (প্রতি প্যাকেটে ৩০০টি করে মোট ৯০০টি, ৩টি পলিথিনের প্যাকেট ভর্তি পিন (প্রতি প্যাকেটে ৩০০টি করে মোট ৯০০টি, ৮টি প্লাস্টিকের বান্ডিলে ভর্তি আইসি (প্রতি বান্ডিলে ২৫টি করে মোট ২০০টি, ৮টি বিভিন্ন সাইজের স্টিলের প্যানেল, ৬৪টি স্টিলের প্যানেলের টুকরা, ৯টি পলিথিনের ব্যাগে ভর্তি স্টিলের বল বিয়ারিং (প্রতিটিতে ১৫০টি করিয়া মোট ১৩৫০টি) ১টি পলিথিনের ব্যাগে লোহার পেরেক ১৫০টি, বিভিন্ন সরঞ্জাম দিয়ে তৈরি তারযুক্ত সার্কিট ১০টি, ছোট ছোট তারের টুকরা ২০টি, ছিদ্রযুক্ত থ্রেড কাটা এও পাইপের মুখ ২টি, পলি ব্যাগ ভর্তি নাটসহ স্ক্রু ১০০টি, ২ প্যাকেট ফলা, একটি পুরাতন কাটার, ১টি নোস প্লাস, একটি মিটার বোড (তারসহ), একটি ইলেক্ট্রিক আয়রন, একটি মটরসহ ড্রিল মেশিন, ছোট কাঁচি ১টি, একটি কালো স্কচটেপ, স্কচটেপে মোড়ানো পেন্সিল ব্যাটারি ৮টি, ১১টি নিউজ প্রিন্ট দ্বারা মোড়ানো ডিনামাইটের বান্ডিল, একটি মাল্টি প্লাগ, একটি কালো রঙের গ্ল“ গানের টেগার, একটি হাতঘড়ি, মোবাইল ফোন সেট ৩টি, জিহাদী বই ৬৯টি, মোটরসাইকেল ২টি, বাইসাইকেল ২টি।



মন্তব্য চালু নেই