উন্মুক্ত পদ্মাপাড়: ব্যবসা কেন্দ্রে পরিণত করার প্রক্রিয়া চলছে
দর্শনাথীদের উন্মুক্ত বিনোদন কেন্দ্র পদ্মার পাড় এখন ব্যবসা কেন্দ্রে পরিণত হতে চলেছে। আর এ কাজটি করছে রাজশাহী সিটি করপোরেশন। এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে পদ্মাপাড়ে টিকেট কেটে প্রবেশ করতে হবে দর্শনার্থীদের।
নগরীর দরগাপাড়া শাহ মখদুম মাজারের সামনে থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠ সংলগ্ন বিজিবি বিনোদন কেন্দ্র পর্যন্ত লোহার ক্লাম দিয়ে ঘিরে দেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে পদ্মার বাঁধের ধার দিয়ে মাটি পর্যন্ত কনক্রিটের তৈরি ১৯৭টি পিলার বসানো হয়েছে।
মাটির উপরের পিলার থেকে প্রায় ১০ ফিটের মতো উপরে লোহার ক্লাম দিয়ে ঘেরা হয়েছে। এখন শুধু বাকি লোহার ক্লামগুলো তার কাটা দিয়ে বাঁধানো। এই লোহার পিলারের ক্লামগুলোর মাঝে মাঝে কয়েকটি প্রবেশ পথ রাখা হয়েছে। এই প্রবেশ পথ দিয়ে দর্শনার্থীরাই শুধু পদ্মার পাড়ে যেতে পারবে।
এ বিনোদন কেন্দ্রের প্রবেশ পথগুলো থেকে টিকেটের মাধ্যমে যে অর্থ আয় হবে তা সিটি করপোরেশনের রাজস্ব খাতে জমা হবে না। রাসিক কর্তৃপক্ষ যে প্রতিষ্ঠানকে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দায়িত্ব দিবেন তারাই এ অর্থ নিবে জানায় রাসিক কর্তৃপক্ষ। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে এখানে একটা ক্ষমতাসীন বড় কোনো মহল রাসিককে ব্যবস্থা করে পরিকল্পিতভাবে এ অর্থ আয়ের একটা কৌশল গ্রহণ করেছেন।
একমাস আগে প্রায় ৩৭ লাখ টাকা ব্যয়ে বাঁধের এ কাজ শুরু করেছে সাম ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘আবদুল খালেক শান্ত’। অক্টোবর মাসের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা। অথচ রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ বাঁধের স্বত্বাধিকারি হলেও ওই কাজ সম্পর্কে তারা কিছুই জানেন না। রাসিক কর্তৃপক্ষ এ কাজ করছেন। বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্তের মধ্যে তারকাঁটা দিয়ে যেভাবে ঘেরা আছে ঠিক একইভাবে পদ্মাপাড়ের ওই স্থান তারকাঁটা দিয়ে ঘেরা হচ্ছে।
রাজশাহীর কয়েকটি বিনোদন কেন্দ্রের মধ্যে নগরীর বড়কুঠি থেকে শুরু করে টি বাঁধ পর্যন্ত পদ্মার পাড় সবচেয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিনোদন কেন্দ্র দর্শনার্থীদের কাছে। এই স্থানে যেকোনো মানুষ ইচ্ছে মতো যখন তখন ঘুরে বেড়াতে পারে। পদ্মাপাড়ের শীতল বাতাসে প্রাণ জুড়াতে পারে। দেশ স্বাধীনেরও আগে থেকে পদ্মাপাড় দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত অবস্থায় ছিল। এতে প্রবেশ করতে দর্শনার্থীদের কোনো ধরাবাঁধা নিয়ম ছিল না।
বর্তমানে পদ্মাপাড় তারকাঁটা দিয়ে ঘিরে টিকিটের মাধ্যমে দর্শনার্থীদের প্রবেশ করিয়ে অর্থ আয়ের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এতে নগরবাসীর পদ্মাপাড়ে উন্মুক্ত চলাফেরা বাঁধাগ্রস্ত হবে বলেই দর্শনার্থীরা মনে করছে।
রাজশাহীর বিনোদন কেন্দ্র শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান উদ্যান ও শহীদ জিয়া শিশু পার্কে প্রবেশ করতে শুধুমাত্র টিকেট কাটতে হয়। কারণ এই বিনোদন কেন্দ্রগুলো মাঝে মাঝে সংস্কারের প্রয়োজন হয়। তাই দর্শনার্থীদের থেকে টিকেট কাটার মাধ্যমে অর্থ সরবরাহ করা হয় সংস্কারের জন্য। কিন্তু পদ্মার পাড়ে এধরনের কার্যক্রম শুরু হলে দর্শনার্থীদের জন্য একটি বড় সমস্যার সৃষ্টি হবে বলে জানান বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা দর্শনার্থীরা।
জানা যায়, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৩ সালে পাঠানপাড়া বালুরঘাটে লালন শাহ পার্কের উদ্বোধন করা হয়। ওই সময়ের পার্কের উদ্বোধন করেন, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক। লালন শাহ পার্কের আশেপাশের প্রায় জায়গায় দর্শনার্থীদের বসার সু ব্যবস্থা আছে। সেসময় এ পার্ক স্থাপন করার উদ্দেশ্য ছিল পদ্মার পাড়ের সুন্দর ও মনোরম পরিবেশে দর্শনার্থীদের সময় কাটানোর ব্যবস্থা করা। পদ্মপাড়ের এই অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য জনাব এইএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন প্রশংসিত হয়ে আসছেন।
এবিষয়ে রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, রাজশাহীর মানুষের একমাত্র উন্মুক্ত বিনোদন কেন্দ্র পদ্মার পাড়। যদি কেউ বিনোদন কেন্দ্র দখল বা জিম্মি করে পদ্মার পাড়কে আয়ের উৎস করে তা মেনে নেবে না রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদ। আর এ ধরনের কার্যক্রম বন্ধ না হলে রক্ষা সংগ্রাম পরিষদ রাজশাহীবাসীকে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে জানান তিনি। তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এবিষয়ে সুষ্ঠু ব্যবস্থা গ্রহণ করার আহ্বান জানান।
এ বিষয়ে ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর একেএম রাশেদুল হাসান জানান, সিটি করপোরেশন থেকে এ কাজ করা হচ্ছে। আমি এ সর্ম্পকে কিছু জানি না। সিটি করপোরেশন সবকিছু জানে। ওয়ার্ডের এ খবর আমি জানি না।
পদ্মাপাড় সংলগ্ন এলাকাবাসীরা জানান, সারাজীবন পদ্মার পাড় উন্মুক্ত ছিল। কিছুদিন আগে থেকে বাঁধের ধার দিয়ে পিলার বসিয়ে পদ্মার পাড় ঘিরে দেয়া হবে শুনছি। এতদিন ধরে নদীর পাড়ে যেকোনো মানুষের বেড়াতে কোনো সমস্যা ছিল না। কিন্তু এখন তারকাঁটা দিয়ে ঘিরে দিলে পদ্মার পাড়ের সৌন্দর্য নষ্ট হবে।
বুধবার সকালে এবিষয়ে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক বলেন, বাঁধ রক্ষণাবেক্ষনের জন্য ওই স্থান ঘিরে দেয়া হচ্ছে। পদ্মাপাড়ে প্রবেশের জন্য দর্শনার্থীদের ৫ টাকা করে টিকেট কাটতে হবে। টিকিটের টাকা রাসিকের রাজস্ব আয় হবে কিনা তা জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান, এ টাকা যারা বাঁধের রক্ষণাবেক্ষণ করবেন তারাই গ্রহণ করবেন।
আশরাফুল হক আরো বলেন, শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান উদ্যান ও শহীদ জিয়া শিশু পার্কেও টিকিটের মাধ্যমে প্রবেশ করতে হয়। তাই পদ্মাপাড়ে প্রবেশের জন্য এ টিকিটের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আর এ জায়গা খাসজমি। পানি উন্নয়ন বোর্ড বা রাসিকের না। জেলা প্রশাসকের তত্ত্বাবধানে আছে এই জায়গা। এ কাজের জন্য কবে টেন্ডার ডাকা হয়েছে এবং পরবর্তীতে কারা লিজ বা দেখাশুনা করবেন জিজ্ঞেস করলে তা তিনি বলতে অস্বীকৃতি জানান।
রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হারুন অর রশীদ জানান, পদ্মার বাঁধের উপর পিলার দিয়ে যে বিনোদন কেন্দ্র ঘেরা হচ্ছে তা আমাদের জানা নাই। রাজশাহী সিটি করপোরেশনও এ বিষয়ে কিছু জানায় নি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে। যদি রাসিক এ কাজ করে থাকে তাহলে তাদের পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানোর প্রয়োজন ছিল।
মন্তব্য চালু নেই