কারাগারে থেকেই বাবা হয়েছে শীর্ষ সন্ত্রাসী কাইল্যা পলাশ
কারাগারে থেকেই সন্তানের বাবা হয়েছে রামপুরার শীর্ষ সন্ত্রাসী কাইল্যা পলাশ। অভিযোগ রয়েছে, সে কারাবন্দি অবস্থায় মাঝে মধ্যেই রামপুরার বাসায় যায়। স্ত্রী পরিবারের সঙ্গে একান্তে কিছু সময় কাটিয়ে আবার ফিরে যায় কারাগারে।
যুবদল নেতা মিজান হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত এই আসামি ১৩ বছর ধরে কারাবন্দি। কারাগারে থেকেই নিয়ন্ত্রণ করে রামপুরা এলাকার চাঁদাবাজি। সম্প্রতি ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া কাইল্যা পলাশের ভাগ্নে অপর শীর্ষ সন্ত্রাসী তুষারকে জিজ্ঞাসাবাদে ও তার মোবাইল রেকর্ড বিশ্লেষণ করে এমন তথ্য পেয়েছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
কারাগারে থেকে ৮/৯টি সিম ব্যবহারের তথ্যও রয়েছে পুলিশের কাছে। এসব সিম দিয়ে পলাশ নিয়মিত যোগাযোগ রাখে স্ত্রী, আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদের সঙ্গে। এসব সিম ব্যবহার হতো চাঁদাবাজির কাজেও।
কারা অধিদফতরের কর্মকর্তাদের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তারা বলছেন, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। ডিবি পুলিশের খিলগাঁও জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ইকবাল হোসেন জানান, কাইল্যা পলাশ ৮/৯টি সিম ব্যবহার করে বিভিন্ন সময় কারাগার থেকে কথা বলার বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে তার ভাগ্নে তুষারকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। সে বিষয়টি স্বীকার করেছে।
সূত্র জানায়, ২০০২ সালের ২৯ মে রামপুরায় যুবদল নেতা মিজানুর রহমান মিজানকে গুলি করে হত্যা করে কাইল্যা পলাশ ও তার সহযোগীরা। ওই ঘটনায় খিলগাঁও থানায় কাইল্যা পলাশসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়। হত্যাকাণ্ডের পর খিলগাঁও থানা পুলিশ কাইল্যা পলাশকে গ্রেফতার করে। আদালত কাইল্যা পলাশকে মৃত্যুদণ্ড দেন। উচ্চ আদালত তার সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।
গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে একবারের জন্যও জামিন পায়নি পলাশ। বেশিরভাগ সময় থেকেছে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১ এ। কারাগার থেকেই মাঝেমধ্যে রামপুরার বাসায় যেত পলাশ। পুলিশি প্রহরায় আবার ফিরে যেত। এলাকার লোকজনও তাকে বাসায় যেতে দেখেছে।
ডিবির একজন সিনিয়র কর্মকর্তা জানান, কারাগার থেকে আদালতে হাজিরা দিতে আসা-যাওয়ার পথে বা এক কারাগার থেকে অন্য কারাগারে চালান করার পথে পলাশ বাসায় গিয়ে থাকতে পারে। কারণ এক কারাগার থেকে অন্য কারাগারে চালানের পথে রাস্তায় কিছু সময় পাওয়া যায়। সেটা কোনো কোনো সময় ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত হয়।
এ সময় পাহারায় থাকা পুলিশ কিংবা কারারক্ষীদের ম্যানেজ করে বাসা বা অন্য কোথাও পরিবারের লোকজনের সঙ্গে একান্তে সাক্ষাৎ করে থাকতে পারেন। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে পলাশ এরকম কিছু করেছে বলে ওই পুলিশ কর্মকর্তা জানান।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য পলাশের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। কাইল্যা পলাশ কারাবন্দি অবস্থায় নিজ বাসায় যাওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কামিশপুর-১ কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুব্রত কুমার বালা জানান, কোনো আসামি আদালতে হাজিরা দিতে যাওয়ার সময় পুলিশকে বুঝিয়ে দেয়া হয়।
হাজিরা শেষে পুলিশ পুনরায় কারাগারে পৌঁছে দেয়। আসা-যাওয়ার সময়ে পুলিশ যদি কাউকে বাসায় বা অন্য কোথাও নিয়ে যায় সেটা কারাকর্তৃপক্ষ জানার কথা নয়। কারণ ওই সময় কারারক্ষী বা কারাগারের কোনো প্রতিনিধি সঙ্গে থাকেন না। তাছাড়া জেলখানায় বসে পরিবারের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ থাকলেও একান্তে মেলামেশা সম্ভব নয়। তিনি আরও বলেন, অভিযোগ উঠেছে পলাশ দুই বছর আগে সন্তানের বাবা হয়েছে। ওই সময় পলাশ কামিশপুর-১ এ ছিল না।
কারাগারের অপর একজন কর্মকর্তা জানান, সম্প্রতি কাইল্যা পলাশকে কাশিমপুর-১ কারাগার থেকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে চালান করা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে পলাশকে রাজশাহীতে পাঠানো হয়। ওই কর্মকর্তার দাবি কারাগারে বসে কাইল্যা পলাশ বা অন্য কোনো আসামির পক্ষে টেলিফোন ব্যবহারের সুযোগ নেই। আদালতে আসা-যাওয়ার পথে কেউ মোবাইল ব্যবহার করে থাকতে পারে। সেই দায় পুলিশের। কারাকর্তৃপক্ষের নয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, কারাগার থেকেই কাইল্যা পলাশ টেলিফোনে রামপুরা এলাকায় চাঁদাবাজি করছে। তার প্রধান সহযোগী হিসেবে কাজ করছে একজন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা। প্রতি মাসে পলাশ বাহিনীর হাতে ৮/১০ লাখ টাকা চাঁদা আসে। কারাগারে আয়েশি জীবনযাপনের জন্য প্রতি মাসে দেড়-দুই লাখ টাকা ব্যয় করে পলাশ।
ডিবির একটি সূত্র জানায়, বর্তমানে রামপুরা এলাকায় চারটি গ্রুপ চাঁদাবাজি করে। এর মধ্যে কারাবন্দি কাইল্যা পলাশ, সম্প্রতি ডিবির হাতে গ্রেফতার হওয়া ভাগ্নে তুষার, শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহজাদা ও তপুর গ্রুপ। শাহজাদার সঙ্গে তুষার ও তপুর সম্পর্ক ভালো।
তবে শাহজাদার সঙ্গে বিরোধ রয়েছে। ১৪ সেপ্টেম্বর ডিবি তুষারকে গ্রেফতার করে। তুষারের কাছ থেকে পুলিশের খোয়া যাওয়া একটি পিস্তলসহ দুটি আগ্নেয়ান্ত্র উদ্ধার করা হয়। পুলিশের অস্ত্রটি তুষার অপর সন্ত্রাসী তপুর কাছ থেকে কিনেছে বলে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে।
সূত্র: যুগান্তর
মন্তব্য চালু নেই