বিশ্বের সবচেয়ে বড় গিরগিটি, যা মানুষও গিলে ফেলতে পারে!
কমোডো ড্রাগন হলো বিশ্বের সবচেয়ে বড় গিরগিরটি। এরা ঘণ্টায় প্রায় ১৫ মাইল বেগে দৌড়াতে পারে। প্রখর ঘ্রাণশক্তির অধিকারী এ প্রাণীটি অনেক দূরের শিকারও শনাক্ত করতে পারে। লম্বায় এটি ৯ ফুট হতে পারে। ওজন হতে পারে ১০০ কেজি পর্যন্ত। এর ধারালো দাঁত দিয়ে শিকারকে ছিড়েখুড়ে খাওয়ার আগে সেটির শরীরে বিষ ঢুকিয়ে দেয় দুর্ধর্ষ এই প্রাণীটি।
কমোডো ড্রাগনের ৬০টির মতো ধারালো দাঁত আছে। আর কামড়ের সময় এরা বেশ শক্তিশালী বিষক্রিয়া করে। এরা একবারে নিজ দেহের ওজনের ৮০ শতাংশ পর্যন্ত খাবার খেতে পারে। ২০০৭ সালের জুন মাসে কমোডো দ্বীপে কমোডো ড্রাগন নয় বছরের একটি ছেলেকে গিলে ফেলেছিল।
প্রাণী বিজ্ঞানের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি রহস্য সৃষ্টি করে রেখেছিল এটি। যদিও স্থলচর দীর্ঘাকৃতির সরীসৃপ এটি; তবু এটি সাধারণ মানুষতো বটেই এমনকি প্রাণী বিজ্ঞানীদেরও চোখ এড়িয়ে চলেছিল বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্যন্ত।
ইন্দোনেশিয়ার কমোডো এবং আশেপাশের তিনটি দ্বীপে ছিল এদের বসতি। এই দ্বীপে আগমণকারী কিছু নাবিক ও জেলেদের মাধ্যমে প্রথম এদের কথা মানুষ জানতে পারে। অবশ্যই অনেক বাড়িয়ে, রঙ চড়িয়ে।
কথিত আছে, ১৯১২ সালে ওই আগ্নেয়দ্বীপে ভেঙে পড়েছিল এক যুদ্ধবিমান। কিন্তু বেঁচে গেলেন বৈমানিক। গভীর জঙ্গলের পথ ধরে কয়েক গজ যেতে না যেতেই একেবারে হাঁপিয়ে ওঠেন বৈমানিক। হঠাৎই শোনা গেল তীক্ষ্ণ হিস-হিসানি। চোখ তুলে সামনে তাকাতেই দেখতে পান ডাইনোসরসদৃশ প্রাণীটি। রূপকথার পাতা থেকে যেন জ্যান্ত হয়ে উঠে এসেছে ভয়ঙ্কর ওই ড্রাগন।
তের ফুটের বেশি লম্বা, মাংসল, গাঢ় বাদামি দেহের রং, লম্বা, সামনের পা দুটো মোটাসোটা। পেছনের পা দুটো অপেক্ষাকৃত ছোট। আর তার ভয়াল মুখের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসছে কমলা রঙের জিহবা। একে ক্লান্ত বৈমানিক, তার ওপর এই জ্যান্ত বিভীষিকা বেশিক্ষণ সইতে পারলেন না। জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়লেন মাটিতে। ঘটনাক্রমে জ্ঞান হবার পর একটি মাছধরা জাহাজের সাহায্যে ঘরে ফিরে আসেন তিনি।
কমোডো ড্রাগন শিকার ধরে হত্যা করতেও খুব দক্ষ। আকারে একজন মানুষের চেয়ে অনেক বড়। যে কোনো সময় বিষাক্ত দাঁতের কামড়ে ছিড়ে নিতে পারে শরীরের মাংস। জাপানের একটি টেলিভিশন প্রোগ্রামের জন্য বিষাক্ত এ প্রাণীটির সঙ্গে জাপানের এক নারী রোমাঞ্চকর এক দৌড়ে লিপ্ত হন। দেশটির দুঃসাহসিক অভিযাত্রী এবং সেলিব্রেটি এ নারীর নাম আয়াকো ইমোতো।
ভিডিওতে দেখা যায়, এ সাহসী নারী তার পিঠে মাংসের টুকরো বাঁধছেন। কিন্তু বাধা শেষ না হতেই কমোডো ড্রাগন তার দিকে তেড়ে আসে। তিনিও ওই প্রাণীর হামলা থেকে বাঁচতে দৌড়ে পালাতে শুরু করেন। এভাবে প্রাণীটি দ্রুতবেগে তার দিকে ধাবিত হলেও দৌড়ে প্রাণীটিকে পেছনে ফেলে তিনি এগিয়ে যান।
জানা গেছে, প্রায় এক কোটি বছর আগে অস্ট্রেলিয়ার মূলভূমিতে বাস করত কমোডো ড্রাগনের আদি পূর্বপুরুষরা। মনিটর জাতীয় বিশাল গিরগিটির জাতিভাই এই ড্রাগন। শ্রীলংকার কাব্রাগোয়াকেও এর নিকটতম প্রজাতি বলে মনে করা হয়। বর্তমানে এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গিরগিটি। এরা মাংসাশী, তবে হিংস্র নয়। নির্জনতাপ্রিয়।
শুকর, হরিণ, কাঁকড়া, পাখি যা পায় সব খায়। গায়ে প্রচ- শক্তি, বিশেষ করে লেজে। লেজের এক ঘায়ে একটা শক্তিশালী ঘোড়াকেও কাবু করে ফেলতে পারে। বর্তমানে তাদের সংখ্যা দুই হাজার ছাড়িয়ে গেছে। শিকারিরা যাতে কমোডো আর তিনটি দ্বীপের ছায়াও মাড়াতে না পারে সে জন্যে আইনও করা হয়েছে।
মন্তব্য চালু নেই