উখিয়ায় পর্যটকদের জন্য আন্তর্জাতিক মানের হোটেল
উখিয়া উপজেলার ইনানীর জালিয়াপালং এলাকায় সমুদ্রের কোল ঘেঁষে ১৫ একর জমির ওপর নির্মিত হয়েছে আর্ন্তজাতিক মানের টিউলিপ সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা লিমিটেড নামে হোটেল। এর পাশেই রয়েছে সরকারি উদ্যোগে নির্মিত হচ্ছে কক্সবাজার ভ্রমণের সবচেয়ে আকর্ষণীয় মেরিন ড্রাইভ রোড। বিশ্ববিখ্যাত লোভার গ্রুপ অব হোটেলস’র গোল্ডেন টিউলিপ হসপিটালিটি ব্র্যান্ডের প্রিমিয়াম ব্র্যান্ড ‘রয়েল গোল্ডেন টিউলিপ’র চেইনে নির্মাণ করা হয়েছে টিউলিপ সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা লিমিটেড।
রয়েল গোল্ডেন টিউলিপ বিশ্বের ৪০টি দেশে এক হাজারের বেশি হোটেল পরিচালনা করছে। সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা লিমিটেডও আর্ন্তজাতিক মানেই পরিচালিত হবে। এতে ৪৯৩টি কক্ষে এক সঙ্গে থাকা যাবে ৬শ’ জন। রয়েছে ৪টি রেস্টুরেন্ট। ইন্টারন্যাশনাল টাইম শেয়ারিংয়ের ভিত্তিতে হোটেলটিকে সবচেয়ে বড় হোটেল বলে দাবি করছে কর্তৃপক্ষ।
যার প্রতিটি কক্ষের ন্যূনতম ভাড়া প্রতি রাত ৯ হাজার টাকা। যেখানে থাকা যাবে ৪ জন। একই খরচে সকালের নাস্তাও মিলবে। এ ধরনের কক্ষে রয়েছে দু’টি টয়লেট, খাবার প্লেট, গ্লাস, চামচ, রান্নার চুলা থেকে শুরু করে কিচেনের সব সরঞ্জাম। হোটেলটির সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো-প্রতিটি কক্ষ থেকেই সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ দেখা যায়। আধুনিক পর্যটন কেন্দ্রের সব সুযোগ-সুবিধা সংবলিত এ হোটেলটিতে দু’টি কৃত্রিম ‘প্রাইভেট বিচ’রয়েছে। যার একটি বিদেশি পর্যটকদের, অন্যটি দেশি পর্যটকদের জন্য।
এ হোটেলের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে-ডেসটিনেশন স্পা ও বিভিন্ন ধরনের খাবার ব্যবস্থা। ঐতিহ্যবাহী থাই স্পা ও নানা প্রকারের এ্যারোমা থেরাপি, আইসক্রিম স্টল, পার্লার, কন্টিনেন্টাল, প্যান এশিয়ান, ইতালিয়ান ও বাঙালিসহ হরেক স্বাদের খাবার আইটেম। আরও আছে-বড় দুইটি সুইমিং পুল, থাই স্পা, নিজস্ব ব্যবস্থাপনার সমুদ্র সৈকত, ফিটনেস সেন্টার, শিশুদের জন্য থ্রিডি ভিডিও গেইমস কর্নার, দেশের সানকিন বার, ইন্টারন্যাশনাল বার, লবি জুস বার ও ক্যাফে।
এছাড়া, রয়েছে ১০ হাজার বর্গফুটের মিলনায়তন। যেখানে দেশি ও আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজনের ব্যবস্থা। যার ধারণ ক্ষমতা এক হাজার জন। হোটেলটি নির্মাণে প্রায় পাঁচশ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে বলে জানান হোটেলটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক আমিনুল হক শামীম। এর মধ্যে দুইশ কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ। আর বাকি টাকা তার নিজস্ব বিনিয়োগ।
এই হোটেল নির্মাণে দেশের ৯টি বেসরকারি ব্যাংক যৌথভাবে ঋণ (সিন্ডিকেট লোন) দিয়েছে। এই ঋণের প্রধান আয়োজক প্রাইম ব্যাংক লিমিটেড। ব্যাংকটি দিয়েছে ৯৭ কোটি টাকা ঋণ। বাকি ১০৩ কোটি টাকা দিয়েছে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, স্টান্ডার্ড ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক ও মধুমতি ব্যাংক।
প্রাইম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ কামাল খান চৌধুরী বলেন, এ দেশে পর্যটন খাতের সম্ভাবনা রয়েছে। কক্সবাজারকে কেন্দ্র করে সরকারের যে পরিকল্পনা রয়েছে, সেটার ভিত্তিতে এখানকার সম্ভাবনা আরও বেশি উজ্জ্বল।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের আয় বাড়ছে, অভ্যন্তরীণ পর্যটক বাড়ছে, সবকিছু মিলিয়ে প্রকল্পটিকে গ্রহণযোগ্য মনে হওয়ায় আমরা অর্থায়ন করেছি। হোটেলটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিনুল হক শামীম আরও বলেন, আমরা আধুনিক পর্যটন ব্যবস্থার সব আয়োজন এখানে রেখেছি। বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে খাদ্যের ক্ষেত্রে। তাই এখানে ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের খাবারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আছে বেশ কয়েক ধরনের স্পা’র ব্যবস্থা।
তিনি জানান, পার্ল’র সদস্য হতে ছয় থেকে আট লাখ টাকা ফি লাগবে। বিনিময়ে দুইশ দেশের আড়াই হাজার হোটেল ও রিসোর্টে বছরে সাত দিন বিনাখরচে থাকা-খাওয়ার সুবিধা পাবেন সদস্যরা। কক্সবাজারে ছোট বড় প্রায় ৪৫০টি আবাসিক হোটেল ও রিসোর্ট রয়েছে। যেখানে মোট ২৭ হাজার কক্ষ রয়েছে।
এরপরও পর্যটন মৌসুমে পর্যটকদের থাকার সংকট তৈরি হয় বলে জানায় বলে সি পার্ল কর্তৃপক্ষ। সারা বছরে কয়েক লাখ দেশি-বিদেশি পর্যটক কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ভ্রমণে আসেন। সেই সঙ্গে বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক অনুষ্ঠানসহ নানা ধরনের অনুষ্ঠান এখানে হয়ে থাকে। গত ১৭ সেপ্টেম্বর বিকেলে রয়েল টিউলিপ সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা লিমিটেডের উদ্বোধন করেছেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম এমপি, বেসরকারি বিমান চলাচল ও পর্যটন বিষয়ক সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান ফারুক খান, স্থানীয় সাংসদ আব্দুর রহমান বদি এমপি, বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম, স্বরাষ্ট্র সচিব, স্থানীয় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং হোটেলটিতে অর্থায়নকারী নয়টি ব্যাংকের প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য চালু নেই