ইঁদুরের মাথায় মানুষের মস্তিষ্ক

ইঁদুরের মগজে মানবমস্তিষ্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ জিন বসিয়েছেন বিজ্ঞানীরা, যার ফলে ইঁদুরদের নাকি বুদ্ধি বেড়ে গেছে! এতে তাড়াতাড়ি খাবার খুঁজে পাচ্ছে তারা।

গবেষণাটির অভিনবত্ব হলো, বিভিন্ন প্রজাতির মস্তিষ্কের আংশিক ‘মানবিকীকরণ’ করলে তাদের ‘কগনিশন’ অর্থাৎ অবধারণ বা বোধ সংক্রান্ত মুখ্য কর্মক্ষমতাগুলো কিভাবে প্রভাবিত হয়৷

বিজ্ঞানীরা মানবমস্তিষ্কের যে জিনটি নিয়েছিলেন, সেটি বাকশক্তি ও ভাষাজ্ঞানের সঙ্গে যুক্ত৷ দৃশ্যত সেই জিনের কল্যাণে সাধারণ ইঁদুরদের গোলকধাঁধায় ছেড়ে দিলে তারা আরো তাড়াতাড়ি খুদকুঁড়ো খুঁজে পায়৷

শুধুমাত্র একটি জিনের প্রভাব থেকেই বোঝা যাচ্ছে, কি ধরনের বিবর্তনবাদী, বৈপ্লবিক পরিবর্তনের ফলে মানব মস্তিষ্ক তার অসাধারণ ক্ষমতার বিকাশ ঘটাতে পেরেছে৷

গবেষণার জন্য বিজ্ঞানীরা জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে শত শত ইঁদুরের মগজে এফওএক্সপি২ নামধারী মানব জিনটি ঢুকিয়ে দেন৷ এর আগে ২০০৯ সালেও একটি অনুরূপ পরীক্ষা করা হয়েছিল, যা থেকে দেখা গিয়েছিল যে, এফওএক্সপি২ জিন-যুক্ত ইঁদুরদের মস্তিষ্কে আরো জটিল নিউরোন ও ব্রেন সার্কিটের বিকাশ ঘটেছে৷

সেই পরীক্ষার ওপর ভিত্তি করে এবার ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির নিউরোসায়েন্টিস্টরা ইঁদুরদের একটি ‘মেইজ’ বা গোলকধাঁধার মাঝখানে ভুট্টার দানা খুঁজে বার করতে শিখিয়েছেন৷

ইঁদুরদের শুধু দু’টি বিকল্প ছিল: প্রথমত গোলকধাঁধা থেকে পরীক্ষাগারের অন্যান্য যন্ত্রপাতি ও আসবাবপত্রের যেটুকু দেখা যাচ্ছে, সে অনুযায়ী পথ চলা: তিন-কোণা বাঁকে চেয়ারের দিকে মোড় নাও; জমিটা মসৃণ হলে ডানদিকে যাবে, খরখরে হলে বাঁ দিকে৷

মানব জিনসমৃদ্ধ ইঁদুরদের পথের খুঁটিনাটি চিনতে সময় লেগেছে সাতদিন, মানবজিনবিহীন ইঁদুরদের লেগেছে ১১ দিন- প্রোসিডিংস অফ দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস-এ জানিয়েছেন এমআইটির বিজ্ঞানীরা৷

মজার কথা, বিজ্ঞানীরা যখন কক্ষটি থেকে সব ধরনের ‘ল্যান্ডমার্ক’, অর্থাৎ পরিচিতি চিহ্ন সরিয়ে ফেলেন, যার ফলে শুধুমাত্র পায়ের তলার জমি কিরকম, তাই দিয়ে পথ চেনার উপায় বাকি থাকে- তখন কিন্তু মানবজিনবর্জিত ইঁদুররাই ‘মানবিকীকৃত’ ইঁদুরদের চেয়ে ভালো ফলাফল করেছে।

মানবজিনটি বোধশক্তির নমনীয়তা বাড়ায়৷ মানবজিনের ফলে সজ্ঞানে স্মরণ করা, আর সহজাত প্রবৃত্তির ফলে পথের খুঁটিনাটি থেকে পথ চিনতে পারা- এই দুই পন্থাকে মেলাতে পারে মানবজিন। মানবমস্তিষ্কও যে কখন শিক্ষাদীক্ষা, স্মরণশক্তি থেকে সহজাত প্রবৃত্তির জগতে চলাফেরা করে সেটাও আজ কেউ বুঝে উঠতে পারেনি৷

তবে এফওএক্সপি২ জিনটি বাকশক্তি ও ভাষাজ্ঞানের সঙ্গে যুক্ত। শিশুরা যখন কথা বলতে শেখে, তখন তারা প্রথমে শব্দের আওয়াজ শুনে শব্দগুলো নকল করে- সহজাত প্রবৃত্তি থেকে৷

মধ্যপর্যায়ে তারা শেখে সেই সব শব্দের অর্থ ও তাৎপর্য৷ তৃতীয় পর্যায়ে তারা আবার সেই সব শব্দই ব্যবহার করে অনায়াসে অবলীলায় যেন ভাষা ও বাচনভঙ্গিটা তাদের সহজাত৷সূত্র : ইন্টারনেট



মন্তব্য চালু নেই