মেডিকেল শিক্ষার কফিনে শেষ পেরেক
টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব ডা. আবদুন নূর তুষার তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল দেখেই বোঝা যায় যে পরীক্ষাটি সঠিকভাবে হয়নি। পরীক্ষার ফলাফলকে পরিসংখ্যান এর হিসাবের মাধ্যমে যাচাই করা যায়। এটা নিয়ে অর্থনীতিবিদ লেভিটের মজার বই ফ্রিকোনমিকসে একটা পরিচ্ছেদও আছে। যাই হোক, ৯৮% এরও বেশী নম্বর পাওয়া প্রয় অসম্ভব। সেই অসম্ভবকে সম্ভব করেছে এবারের প্রশ্ন ফাঁসকৃত মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা। এমন মেধাবীদের দিয়ে নিশ্চয়ই মেডিকেল কলেজ আলোয় আলোয় ভরে উঠবে। তবে হাসপাতালে রোগীদের ভবিষ্যত যে অনন্ত অন্ধকার হবে সেটা বুঝতে ৯৮% নম্বর পেতে হয় না। সাধারণ মানুষও এটা বোঝে। ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে, ঘোষণা দিয়ে নকলবাজরা যখন একে অন্যকে প্রশ্ন সরবরাহের জন্য ধন্যবাদ দেয় তখন মনে হয়, জীবনানন্দ দাস লিখেছিলেন, যারা অন্ধ সবচেয়ে বেশী নাকি তারাই চোখে দেখে, সেই অন্ধকারের কথা। সেই অদ্ভুত আঁধারে আমরা পথ চলতে পারি না। দেশের মানুষের প্রাণ নিয়ে যারা কাজ করবেন সেই ভবিষ্যত চিকিৎসকেরা প্রশ্ন চুরি করে ভর্তি হয়েছেন, এটা ভাবলেই গা শিউরে ওঠে। কতজন প্রশ্ন পেয়ে এভাবে পরীক্ষায় টিকেছেন সেটা বড় কথা নয়, বড় কথা হলো অযোগ্য একজনও যদি এভাবে যোগ্যতা পেয়ে যান, একসময় কার্ডিয়াক বা নিউরোসার্জন হবার, সেটা কি ভয়ংকর হবে, সেটা ভেবে দেখা দরকার। মাননীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রী, আপনার সরকার মানুষের মঙ্গল চায় বলেই বিশ্বাস করি। দেশের মানুষের চিকিৎসা কিছু প্রশ্নচোর অযোগ্য মানুষ করবে ,এটা কি আপনি চান? আপনি কি চান যারা প্রশ্ন চুরি করে ফাঁস করে দেয় , তারা অন্ধকারেই থেকে যাক? আপনি কি মনে করেন না যে, নিশ্চিদ্র নিরাপত্তার মধ্য থেকে প্রশ্ন চুরি করা, কোন ভেতরের মানুষ ছাড়া সম্ভব নয়? দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বারোটা বাজিয়ে দিয়ে আপনারা সিঙ্গাপুর, লন্ডন, আমেরিকায় চিকিৎসা নিতে পারেন হয়তো, কিন্তু দেশের সাধারন মানুষের বিশ্বাসের জায়গা ধ্বংস করে, মেডিকেল শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়ে ২০৪১ সালের বাংলাদেশ পাওয়া সম্ভব না। এই রকম হাস্যকর পরীক্ষা নিয়ে মেডিকেলে ছাত্র ভর্তি করে মেডিকেল শিক্ষার কফিনে শেষ পেরেক ঠোকার মহান দায়িত্ব পালন করবেন না, প্লিজ। এই পরীক্ষা বাতিল করে আবার পরীক্ষা নিন। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিন। নইলে একদিন কোন এক জরুরী মুহুর্তে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুর যাবার আগেই আপনাদেরই কোন বংশধর, নিকাটাত্মীয়, এইসব অযোগ্যদের হাতে মারা যাবে।
মন্তব্য চালু নেই