যে ৯টি সত্য জেনে রাখা উচিত প্রত্যেক কন্যার পিতারই
শুনতে খারাপ শোনালেও এটাই সত্য যে এখনো আমাদে সমাজে অসংখ্য পিতার কাছে কন্যাসন্তান অবহেলিত। ঘরে কন্যা সন্তান জন্ম নিলে এখনো অন্ধকার হয়ে যায় বিপুল সংখ্যক পিতার মুখ। কেবল গ্রামে নয়, শহরেও অসংখ্য পরিবারে কন্যাকে মনে করা হয় কেবলই এক বোঝা! আপনিও কি একজন কন্যা সন্তানের বাবা? তাহলে জেনে নিন এমন ৯টি সত্য, যা হয়তো কেউ আপনাকে আগে বলেনি। কন্যার পিতা হিসাবে এই কথাগুলো হয়তো বদলে দেবে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি।
১) কন্যার পিরিয়ড শুরু হয়েছে মানেই সে বড় হয়ে গেছে, তাঁকে এখনোই বিয়ে দিয়ে দিতে হবে, বিষয়টি কিন্তু মোটেও তেমন নয়। মাত্র পিরিয়ড শুরু হওয়া একটি মেয়ের জন্য বিয়ে কেবল মানসিক নির্যাতনই নয়, ভয়াবহ এক শারীরিক নির্যাতনও। পুরুষ হিসাবে কোন ধারণাই নেই আপনার যে কিশোরী মেয়েটিকে কম বয়সে বিয়ে দিয়ে কি অমানবিক নির্যাতনের মাঝে ঠেলে দিচ্ছেন আপনি। দয়া করে এই কাজটি একজন বিবেকবান মানুষ হয়ে থাকলে করবেন না।
২) পুত্র আপনাকে ভবিষ্যতে উপার্জন করে খাওয়াবে, তাই পুত্র সম্পদ। কন্যাকে বিয়ে দিয়ে দিতে হবে, তাই কন্যা বোঝা। এমন কি ভাবেন আপনিও? আশেপাশে তাকিয়ে দেখুন, আজকাল অনেক কন্যাই বৃদ্ধ পিতামাতার দায় বহন করছেন যেখানে পুত্ররা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। কন্যাকে উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত করলে, যোগ্য মানুষ হিসাবে বড় করলে কোনায় আপনার সম্পদ। সন্তান আপনার অবলম্বন হবে কি হবে না, সেটা সন্তানের লিঙ্গের ওপরে নির্ভরশীল না। বরং এটার ওপরে নির্ভরশীল যে আপনি তাঁকে কীভাবে মানুষ করলেন।
৩) কন্যা আপনার সম্পত্তি নয়, সম্পদ। তাই কন্যাকে বস্তু মনে করা বন্ধ করুন প্লিজ। আপনার পুত্রের মত কন্নার অধিকার আছে নিজের বিয়েতে নিজের মতামত দেবার। এটা তাঁর জীবনের প্রশ্ন। কেবল আপনার পছন্দ হলো বলেই কারো সাথে ধরে কন্যাকে বিবাহ দেবার পাঁয়তারা করবেন না।
৪) আমাদের দেশে অনেক পিতাই কন্যা থেকে দূরত্ব বজায় রাখেন। তাঁরা কখনো জানতেও পারেন না যে কন্যারা পিতার একটুখানি ভালোবাসার জন্য মুখিয়ে থাকে। কন্যা বলেই তাঁকে দূরে সরিয়ে রাখবেন না। কন্যা বড় হয়ে যাবার পর কন্যাকে নিজের জীবন থেকে দূরে ঠেলে দিতে হবে, এমন কোন কথা নেই।
৫) কন্যার চোখে পিতাই তাঁর হিরো। প্রত্যেক মেয়ে মনে মনে ধরে রাখেন যে পিতা তাঁকে সমস্ত বিপদ থেকে বুকে আগলে রক্ষা করবেন, তাঁর কোন ক্ষতি হতে দেবেন না। তাই, এমন কোন কাজ করবেন না যে কারণে কন্যার সামনে আপনার এই সম্মান নষ্ট হয়ে যায়।
৬) একটা জিনিস মনে রাখবেন, আপনি স্ত্রীর সাথে কেমন আচরণ করেন সেটা কিন্তু কন্যাই সবচাইতে বেশী লক্ষ্য করে। আর এটার ওপরেই নির্ভর করে পুরুষ সম্পর্কে কন্যার ধারণা তৈরি হয়। কারণ মেয়েদের দেখা প্রথম পুরুষ তাঁর বাবাই। স্ত্রী প্রতি যত্নশীল হোন, কন্যাও আপনাকে সম্মান করবে।
৭) আমাদের সমাজে যে কোন সময়, যে কোন পরিস্থিতিতে একটি মেয়ে নানান রকম নির্যাতনের শিকার হতে পারেন। তাঁর পিতা হিসাবে আপনার দায়িত্ব সবসময় একটু বাড়তি খেয়াল রাখা। আর কখনো যদি কোন বাজে পরিস্থিতি ঘটেই যায়, কন্যাকে দোষারোপ না করে তাঁর পাশে দাঁড়ান। এটা লজ্জার কিছু নেই। বরং এটাই বীরত্বের কাজ।
৮) আমাদের সমাজে এখনো একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর কন্যা বিয়ে করে আরেকটি সংসারে চলেই যায়। পিতা মাতার ঘরে কন্যা আসলেই থাকে খুবই কম একটা সময়। তাই আপনার সময় কন্যাকে একটু বেশী দিলে ক্ষতি নেই কোন। বরং সেটাই উচিত। কন্যার জীবনে সামিল হন, তাঁর গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো জানুন ও বুঝুন, তাঁর জন্মদিন ও বিশেষ দিনগুলো আনন্দের সাথে উদযাপন করুন। দেখবেন, কন্যা কোনদিনও আপনাকে ভুলে যেতে পারবে না।
৯) কন্যাকে স্বনির্ভর ও আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তোলার দায়িত্ব কিন্তু পিতারই। কেবল লেখাপড়া শেখালে বা বিয়ে দিয়ে দিলেই দায়িত্ব শেষ হয় না। কন্যাকে আত্মরক্ষার কৌশল ও জীবনের পথে এগিয়ে যাবার রাস্তা দেখানোও পিতারই কাজ।
লিখেছেন-
রুমানা বৈশাখী
কথা সাহিত্যিক
মন্তব্য চালু নেই