প্রচণ্ড গরমে বর্জন করবেন যে ১০টি খাবার

যখন প্রচণ্ড গরম পড়ে তখন বিভিন্ন ধরনের অসুস্থতাও দেখা দেয়। কারন তখন কোনো খাবার খেলে সেই খাবারও দেহের ভেতরে তাপ উৎপন্ন করে। তাই যখন অনেক গরম পড়ে তখন বেশ কিছু ধরনের খাবার বর্জন করাই দেহের জন্য তথা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।

অত্যাধিক তাপ দেহের জন্য বিরক্তির সৃষ্টি করে, একাগ্রতার অভাব ঘটায়, অবসাদগ্রস্ত করে তোলে এবং এইসব কিছুর সাথে ঘুমেরও ব্যাঘাত ঘটায়। তাই গরমের মধ্যে বর্ষা কাল আসার আগ পর্যন্ত যেসব খাবার ও পানীয় খাবেন সেই খাবারগুলো দেহের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে। এবং এই গরমের সময় নিয়মিত খাদ্যাভাসের থেকে সরে এসে গরমের সময়ের উপযোগী কিছু খাবার যদি গ্রহন করা হয় তাহলে তা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভাল হয়। এই সময়টাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, যতোটা সম্ভব বেশি পানি পান করা এবং পানি যুক্ত ঠাণ্ডা রসালো ফল খাওয়া উচিত। মোট কথা স্বাস্থ্যকর যেকোনো খাবারই খাওয়া যাবে।

গরমে ভালো এবং সুস্থ থাকতে হলে এই ১০ ধরনের খাবার খুবই কম খাওয়া বা বর্জন করাই ভালো-

অতিরিক্ত মশলাযুক্ত খাবার
আমাদের বেশিরভাগ খাবারই বেশ মশলাযুক্ত। তাই গরমের সময় সুস্থ থাকার জন্য হলেও খাবারে মশলার পরিমান কমিয়ে দিতে হবে। বিশেষ করে মরিচ, গোলমরিচ, আদা, জিরা এবং দারুচিনি এই মশলাগুলো শরীরকে গরম করে কারণ এই খাবারগুলো শরীরের বিপাক ক্রিয়ার হার বৃদ্ধি করে এবং এবং দেহের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করতে বেশ শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে।

প্রাণীজ প্রোটিন
প্রাণীজ প্রোটিন যেমন গরুর বা খাসির মাংস, ডিম, চিংড়ি, কাঁকড়া ইত্যাদি খাবারগুলো দেহের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয় তাই গরমের সময় এই খাবারগুলো না খাওয়াই ভালো। এছাড়া এই খাবারগুলো গ্রহনের ফলে অনেক সময় পেটের সমস্যা বা ডায়রিয়াও হতে পারে যার ফলে দেহ থেকে প্রচুর তরল বের হয়ে গিয়ে অনেক বড় ধরনের চিকিৎসারও প্রয়োজন হতে পারে।

আটার রুটি
আমাদের দেশের বেশির ভাগ মানুষের সকালের খাবার আটার রুটি। তবে এই আটার রুটি অনেক সময়ই সহজে হজম হয়না এবং হজম হতে দেহের তাপমাত্রা বৃদ্ধি হয়। তাই খুব ভাল হয় যখন খুব গরম পড়ে তখন দিনের বেলার দিকে রুটি না খান। এর পরিবর্তে চাইলে অন্য খাবার বা ভাত খান।

তেলে ভাজা খাবার
তেলে ভাজা খাবার বা তন্দুর খাবার গুলো আমাদের দেশের কম বেশি সবার মাঝেই জনপ্রিয়। গরমে কিন্তু এই খাবারগুলো দেহের তাপমাত্রা বাড়ায় এবং এর ফলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে।

আম
গরমকালের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ফল হচ্ছে আম। তবে দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে এই আমও দেহের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে। খুব বেশি পরিমান যদি আম খাওয়া হয় তাহলে তা দেহে গরমের ফুসকুড়ির সৃষ্টি করে বিশেষ করে কিশোর বয়সীদের মাঝে ও বাচ্চাদের মাঝে।

দুধ ও দুগ্ধ জাতীয় খাবার
গরমকালে ভাল থাকতে হলে প্রতিদিনের খাবার তালিকা থেকে দুধ ও দুগ্ধ জাতীয় খাবার গুলো বাদ দিতে হবে যেমন দুধ, পনির, দই ইত্যাদি। কারন এইসব খাবারগুলোও তাপ উৎপাদক খাবার। তাই গরমের সময় এই জাতীয় খাবার যত কম খাবেন তত ভাল থাকবেন।

তৈলাক্ত খাবার ও জাঙ্ক ফুড
বার্গার, পিজ্জা, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই এবং এই ধরনের তৈলাক্ত জাঙ্ক ফুড গুলো হজম ক্রিয়ার জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বিশেষ করে গরমকালে। প্রচণ্ড গরমে এই খাবারগুলো খেলে অনেক সময় ফুড পয়জনিংও হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

আইসক্রিম এবং ঠাণ্ডা গ্যাস ড্রিংকস
আপাতদৃষ্টিতে আমরা অনেকেই মনে করি যে আইসক্রিম এবং ঠাণ্ডা গ্যাস ড্রিংকসগুলো গরমের সময় আমাদের দেহের গরম কমাতে খুব বেশি কার্যকরী। কিন্তু বাস্তবদিক হচ্ছে এগুলো আসলে পেটকে ঠাণ্ডা করার পরিবর্তে গরম করে দেয়। এর ফলে এগুলো খেয়ে গরম থেকে রক্ষা পাওয়া যায় না।

চা এবং কফি
চা এবং কফি উভয়েরই দেহকে গরম করে দেয়ার প্রবণতা রয়েছে। তাই গরমকালের প্রচণ্ড গরমে ভালো এবং সুস্থ থাকতে হলে যতটুকু সম্ভব কম চা এবং কফি পান করুন।

শুকনো ফল
যদিও শুকনো ফল খুবই স্বাস্থ্যকর খাবার কিন্তু এগুলো দেহের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে। তাই সবচেয়ে ভাল হয় গরমকালে যদি এই খাবারগুলো কম পরিমানে খাওয়া হয়।

উপরোক্ত খাবারগুলোর মাঝে সবগুলো খাবারই যে অস্বাস্থ্যকর তা নয়, কিন্তু যেহেতু খাবারগুলো দেহের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয় তাই সবচেয়ে ভাল হয় যখন খুব বেশি গরম পরে তখন এই খাবারগুলো বর্জন করা।

লেখিকা
শওকত আরা সাঈদা(লোপা)
জনস্বাস্থ্য পুষ্টিবিদ
এক্স ডায়েটিশিয়ান,পারসোনা হেল্‌থ
খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান(স্নাতকোত্তর)(এমপিএইচ)
মেলাক্কা সিটি, মালয়েশিয়া।

সূত্র: boldsky.com



মন্তব্য চালু নেই