লজ্জার হারে সিরিজ হারলো মুশফিকরা
সেই চিরচেনা দৃশ্য, সেই ব্যর্থতার পুনমঞ্চায়ন। হারের পুরান কিংবা শিশুতোষ ভুলের পুনরাবৃত্তি। ফলাফলটা তাই প্রত্যাশিতই। সেজন্য টানা হারের চক্কর কাটাতে পারলো না বাংলাদেশ।
শুক্রবার গ্রানাডাতে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বাঁচন-মরণ ম্যাচে লেজে-গোবরে অবস্থা করে হারলো টাইগাররা। পরাজয়ের ব্যবধানটা ১৭৭ রানের। ফলে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের একটি খেলা বাকি থাকতেই ২-০ ব্যবধানে সিরিজ খোয়ালো বাংলাদেশ।
অথচ ব্যাথার নীল ত্যাগ করে বিজয়ের আনন্দ প্লাবনে যোগ দিতে বোলাররা কিন্তু নিজেদের সর্বোচ্চটাই উপহার দিয়েছেন দলকে। টস জিতে বোলিংয়ে নেমে শুরুতেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের উইকেট শিকার করে নেন তরুণ বোলার আল আমিন হোসেন। গ্রানাডা স্টেডিয়ামে ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলেই কার্ক এডওয়ার্ডের স্টাম্প উড়িয়ে দেন তরুণ এই পেসার। স্কোরবোর্ডে উইন্ডিজের নামের পাশে তখন সবেমাত্র ৫ রান।
পরের বিশ ওভার অবশ্য খেলার লাগাম বাংলাদেশের হাতে ছিল না। দীর্ঘদিন রান খরায় ভুগতে থাকা ক্রিস গেইল ও ড্যারেন ব্রাভো দারুণ জুটি গড়ে স্বাগতিকদের এগিয়ে নিচ্ছিলেন। শেষে ২২তম ওভারে গিয়ে এই জুটি ভাঙে মাহমুদুল্লাহ’র কল্যাণে। গেইল ৬৭ বলে ৫৮ রান করে বিদায় নিলে। জ্যামাইকান দানবের বিদায়ে উইন্ডিজের রানের চাকা কিছুটা শ্লথ হয়ে যায়। ফলে ৩২ ওভারের শেষের বলে ড্যারেন ব্রাভো যখন হাফ সেঞ্চুরি করে প্যাভিলিয়নে ফিরছেন তখন উইন্ডিজের সংগ্রহ কেবল ১৪৪ রান। ইনিংসের দ্বিতীয় অর্ধ শতক উপহার দেয়ার পর গাজীর বলে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে পড়েন ব্রাভো।
বিরুপ এই অবস্থায় আগের ম্যাচের অন্যতম আকর্ষণ দিনেশ রামদিন দ্রুত এই অবস্থাটা বদলে দেন। প্রথা বিরুদ্ধ রকমারি শট খেলে দলকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা চালান তিনি। উইকেটরক্ষক এই ব্যাটসম্যানের সেই প্রচেষ্টার যবনিকাপাত হয় আল আমিনের হাতে। ২৬ রান করা রামদিনকে মুশফিকের তালুবন্দি করান টাইগার দলের পেসার। এরপর স্বচ্ছন্দ বেগে আগুয়ান কাইরন পোলার্ডকে আঘাত হানেন ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’ মাশরাফি। ২০ বলে ২৬ রান করা বার্বাডিয়ানকে বোল্ড করেন তিনি। ৪৭তম ওভারের চতুর্থ বলের ঘটনা এটা। যখন ক্যারিবিয়দের নামের পাশে ২২২ রান।
কিন্তু তারপরেও নির্ভার হতে পারছিল না বাংলাদেশ। লেন্ডন সিমন্স যে অনেক ক্ষণ ক্রিজে থেকে হুমকি পাঠাচ্ছিলেন সফরকারী শিবিরকে। এ অবস্থায় ফের রক্ষাকর্তা হয়ে আর্বিভূত হন সাবেক বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফিই। ২৩১ রানে সিমন্সকে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের হাতে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেন তিনি। এরপর মাত্র ৬ রান করে মাশরাফির বলে সাজঘরে ফেরেন ডোয়াইন ব্রাভোও। তারপরেও নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে সাত উইকেটে ২৪৭ রান সংগ্রহ করে ব্রাভো বাহিনী। সফরকারী দলের পেসার মাশরাফি ১০ ওভার বল করে ৩৯ রান দিয়ে তিনটি উইকেট নেন। দুটি উইকেট গেছে আল আমিনের দখলে। একটি করে শিকার মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও সোহাগ গাজীর।
কিন্তু এরপর ব্যাটিংয়ে নেমে যেমন দায়িত্ব নিয়ে খেলা দরকার ছিল বাংলাদেশের তা পারেনি তারা। টপ অর্ডারে তামিম ইকবাল ছাড়া আর কেউ দুই অঙ্কের ঘরে প্রবেশ করতে পারেননি। তামিম ৮১ মিনিট ক্রিজে থেকে ৫০ বল মোকাবেলায় সর্বোচ্চ ৩৭ রান সংগ্রহ করেন। এছাড়া টপ অর্ডারের বাকি তিন ব্যাটসম্যান আনামুল হক (৭), ইমরুল কায়েস (১) ও শামসুর রহমানের (৪) ব্যাটে এসেছে মাত্র ১২ রান। ব্যর্থতার এই নাগপাশ ভেদ করতে পারেননি অপরাপর ব্যাটসম্যানরাও। সেজন্য মিডল অর্ডারের চার ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম (৬), মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (০), নাসির হোসেন (৬) ও সোহাগ গাজীর (২) সংগ্রহ ১৪ রান। এরপর মাশরাফি বিন মর্তুজা ২ আর আল আমিন রানের খাতা খোলার আগেই রান আউট হলে ১৭৭ রানের হারের লজ্জা পেতে হয় বাংলাদেশকে।
যখন মাত্র ২৪.৪ ওভার ব্যাট করে ৭০ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। উইন্ডিজের কেমার রোচ ও সুনীল নারাইন তিনটি করে উইকেট নেন। দুটি উইকেট গেছে রবি রামপালের দখলে। একটি জেসন হোল্ডারের দখলে।
মন্তব্য চালু নেই