তদন্ত কমিটি ও বরখাস্তেই শেষ রেল দুর্ঘটনার অ্যাকশন!
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের আওতায় চট্টগ্রামের সর্বত্র ছড়িয়ে আছে অসংখ্য অবৈধ লেভেল ক্রসিং। যেগুলো সম্পূর্ণ অরক্ষিত। এসব লেভেল ক্রসিংয়ে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। মঙ্গলবার ভোরে সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ড এলাকায় লেভেল ক্রসিংয়ে ময়মনসিংহ থেকে ছেড়ে আসা বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনের সঙ্গে কাভার্ডভ্যানের সংঘর্ষে নিহত হয় এক ব্যক্তি। লাইনচ্যুত হয় রেলের চারটি বগি। ঘটনা তদন্তে রেলওয়ে বিভাগীয় প্রকৌশলী আবিদুর রহমানকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে রেল কর্তৃপক্ষ। যাকে দায় এড়ানোর কৌশল হিসেবে দেখছে সচেতন মহল।
সচেতন মহলের মতে, চট্টগ্রামে এ যাবতকালে সংঘটিত সবকটি ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছে অবৈধ ও অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ে। এরপরও এই অবৈধ লেভেল ক্রসিংয়ের নিরাপত্তায় রেলওয়ে বা কারোই কোনো উদ্যোগ নেই। শুধু তদন্ত কমিটি গঠন ও সাময়িক বরখাস্তেই শেষ রেল দুর্ঘটনার অ্যাকশন। প্রতিটি দুর্ঘটনায় তদন্ত কমিটি ও রেল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও কমেনি রেল দুর্ঘটনা।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের অতিরিক্ত পরিবহন কর্মকর্তা রোকনুজ্জামান অবৈধ এবং অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ের কারণে রেল দুর্ঘটনার কথা স্বীকার করে বলেন, পূর্বাঞ্চলের আওতায় মোট এক হাজার ২৪৫টি লেভেল ক্রসিং (এলসি) রয়েছে। এরমধ্যে বৈধ লেভেল ক্রসিং মাত্র ৪৩৪টি, বাকি ৮১১টিই অবৈধ। যার সবকটিই সম্পূর্ণ অরক্ষিত।
আর এসব অবৈধ লেভেল ক্রসিংগুলো এলজিইডি, সড়ক ও জনপথ, সিটি করপোরেশন, জেলা পরিষদ, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ, বেসরকারি সংস্থা এবং বেশ কিছু অজানা সংস্থার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। যেখানে বারবার দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনা ঘটছে।
তিনি জানান, গত ২০ বছরে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে ৫৫৭টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে জান-মালের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। যার অধিকাংশই পতিত হয়েছে এসব অবৈধ লেভেল ক্রসিংয়ে। সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার নিয়ন্ত্রণে থাকায় এসব অবৈধ লেভের ক্রসিংয়ের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থাও নিতে পারছে না রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
রেলওয়ে কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও স্থানীয়দের বিরোধিতার কারণে এসব ক্রসিং বন্ধ করা যাচ্ছে না। মামলা করেও কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। বরং বিভিন্ন সময়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা হামলার শিকার হয়েছেন।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী একেএম মাহবুবুল আলম বলেন, অবৈধ লেভেল ক্রসিং বন্ধ করতে বেশ কয়েকটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আরও কয়েকটি মামলার প্রস্তুতি চলছে। অবৈধ লেভেল ক্রসিং না থাকলে রেল চলাচল আরও স্বাভাবিক হতো। দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেত জান ও মাল।
মাহবুবুল আলম আরও বলেন, কিছুদিন আগে নগরীর ঝাউতলা এলাকায় অবৈধ লেভেল ক্রসিং এ দুর্ঘটনার পর ওই গেইটটি বন্ধের সুপারিশ করেন রেল কর্মকর্তারা। রেলওয়ের এরকম সিদ্ধান্তের পর ক্রসিংটি বন্ধ করা হলেও পরদিন স্থানীয়রা তা না মেনে খুলে দেয়।
প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, লেভেল ক্রসিং নিয়ন্ত্রণে কর্মচারীরা দায়িত্বে থাকার পরও রেল দূর্ঘটনা ঘটছে। যার দায় এড়াতে পারে না দায়িত্বশীল কর্মচারীরা। ফলে দায়ী কর্মচারীদের সাময়িক সাসপেন্ড করার মতো পদক্ষেপ নিতে হয় রেল কর্তৃপক্ষকে।
অপর প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রেলে প্রয়োজনীয় লোকবলের অভাব। এরপরও বিভাগীয় নিয়মানুযায়ী দুর্ঘটনার পর তদন্ত কমিটি গঠন বা সাময়িক বরখাস্তের পদক্ষেপ নিতে হয়। দায় এড়ানোর জন্য এই বিধান প্রয়োগ করা হয় না।
প্রসঙ্গত, সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার অধীনে যেসব অবৈধ লেভেল ক্রসিং রয়েছে তার মধ্যে এলজিইডির অধীনে ২৫৩টি। সড়ক ও জনপথের ৬, পৌরসভা ৬৫, সিটি করপোরেশন ১৯, ইউনিয়ন পরিষদ ৩২৪, জেলা পরিষদ ১৩, বেসরকারি সংস্থা ৩, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ৩ এবং অন্যান্য সংস্থার অধীনে ৯২টি ক্রসিং রয়েছে। এছাড়া আরও ৩৩টি ক্রসিং কার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এখনও তা জানেন না বলে জানান অতিরিক্ত পরিবহন কর্মকর্তা রোকনুজ্জামান।
মন্তব্য চালু নেই