প্রকৌশলী মাসুমের লাশ দিনাজপুরে পৌঁছার পর নেমে এসেছে শাকের মাতম

গাজীপুরে অপহরণের পর খুন হওয়া প্রকৌশলী মাসুমের লাশ দিনাজপুরে পৌঁছার পর শোকের মাতম নেমে এসেছে। তার জানাজায় অংশ নিয়েছে অসংখ্য মানুষ।

দিনাজপুর শহরের দক্ষিণ মুন্সিপাড়া (গোলকুঠি) আলহাজ্ব মোঃ আবুল কাশেমের চতুর্থ পুত্র টেক্সটাইল প্রক্যেশলী মোহাম্মদ মাসুম (৩০) ঢাকার অদূরে গাজীপুর কালিয়াকৈড় চন্দ্রা নামক স্থানে অপহরণ কারী দূর্বৃত্তদের হাতে নৃশংসভাবে খুন হয়। দিনাজপুর শহরের ঐতিহ্যবাহী মাসুম বেকারী ও মাসুম খাওয়া দাওয়া হোটেল প্রকেশরী মাসুমের নামকরণেই পরিবারবর্গ করে ছিলেন। তার অকাল মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আে ছে দিনাজপুরে। মাসুমের নৃশংস মৃত্যুর খবর শুনে হুইপ ইকবালুর রহিম তাৎনিকভাবে মরহুমের বাসভবনে ছুঁটে আসেন। শোক সমতপ্ত পরিবারবর্গকে গভীর শোক ও সমবেদনা জানান।

নিহত মাসুম গাজীপুর কালিয়াকৈড় চন্দ্রায় ডিভাইন টেক্সটাইল মিলের প্রিন্টিং ম্যানেজার ছিলেন। গত ৯ আগষ্ট রোববার রাত ১০টায় টেক্সটাইল মিল থেকে বের হয়ে মোবাইলে ৫ বছরের শিশু কন্যা অরিনের সঙ্গে কথা বলেন। শিশুকন্যা অরিন বাবা মাসুমকে জিজ্ঞাসা করেন-বাবা বাসা আসতে এতো দেরী হচ্ছে কেন?

পরিবার সুত্রে জানা গেছে, মাসুম জানায়-‘আমি অফিস থেকে বের হলাম বাড়ী এখনই আসছি।’ একথাই শেষ কথা হবে কেউ বুঝতে পারেনি। রাত গড়িয়ে গেল, তবুও বাবা ফিরে এলো না। পরিবারবর্গ সকলেই উদ্বিগ্ন। এক পর্যায়ে টেক্সটাইল অফিসেও খোঁজ নেওয়া হলো কখন সে বের হয়েছে তার অবস্থানইবা কোথায়? ব্যবহৃত মোবাইলটিও বন্ধ কেন? উদ্বিগ্নতা নানা প্রশ্ন জন্ম দিল।

কালিয়াকৈড় থানায় সাধারণ ডায়েরিও করা হলো। যার নং-৪০৯, তাং-১০-০৮-১৫ইং। খোঁজাখোজি চলল সব প্রান্তে। খবর এলো-১০ আগষ্ট বিকাল সাড়ে ৪টায় গাজীপুর শাখা ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে ৫০ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। টাকা যাক-সন্তান, পিতা, স্বামী ফিরে পাওয়ার আশায় সকলেই অস্থির। উদ্বিগ্নতা আরো বাড়িয়ে তোলে পুলিশ প্রশাসনকে।

এটিএম বুথের টাকা উত্তোলন অথচ অপহৃত ব্যাক্তির খোঁজ নেই। সব আশাকে নিরাশা করে ১১ আগষ্ট মঙ্গলবার সকালে খবর পাওয়া গেল-কর্মস্থলের পাশের ডোবায় মাসুমের নিষ্প্রাণ দেহ পড়ে রয়েছে। হাত-পা, চোখ বেঁধে গলায় দড়ি দিয়ে নৃশংসভাবে তাকে হত্যা করে ডোবায় ফেলে রাখে ঘাতকরা। শিশু অরিনের প্রতিক্ষার শেষ হলো। তার পিতা চলে গেছে না ফেরার দেশে।

এক বছরের অপর শিশু পুত্র আল আমিন বুঝতেই পারলো না-সেও জীবনে কি হারালো। অপহরণকারীদের হাতে নৃশংসভাবে নিহত মিছিলের দীর্ঘ হলেও অপহরণকারীরা থেকে যাচ্ছে ধরা-ছোঁয়ার বাহিরে। এভাবে আর কত অরিনকে এতিম হতে হবে? এ প্রশ্ন আজ সবার চোখে-মুখে। মাসুমের অপহরণ ও হৃদয়বিদায়ক ঘটনার বর্ণনা করতে গিয়ে সাংবাদিকদের সামনেই অশ্র“তে সিক্ত হয়ে পড়েন এলাকার অনেকেই।

সদালাপি মিষ্টভাষী মাসুমের নৃশংস মৃত্যু এলাকার আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সব শ্রেনীর মানুষ মেনে নিতে পারে নি। তাই দুপুরের মধ্যেই মাসুমের বাড়ির সামনের সড়কে এলাকার যুবকেরাই নিজ উদ্যোগে মাসুমের ছবি দিয়ে “দুর্বৃত্তদের হাতে নৃশংসভাবে হত্যায় আমরা মর্মাহত ও শোকাহত” ব্যানার টাঙ্গিয়ে দেয়।

মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টায় গাজীপুর থেকে মাসুমের মৃতদেহ দিনাজপুরের নিজ বাড়ীতে আনা হয়। রাতের নিরবতাকে ভেঙ্গে গগনবিদারী কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। রাত সাড়ে ১০টায় দিনাজপুর জিলা স্কুল মাঠে মাসুমের জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। জানাযার নামাজ শেষে ফরিদপুর গোরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়।

জানাযার নামাজে জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি, জেলা বিএনপি’র সভাপতি আলহাজ্ব লুৎফর রহমান মিন্টু, দিনাজপুর প্রেসকাবের সহ-সভাপতি এ্যাডঃ আমিনুল হক পুতুল, শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম, সদর উপজেলার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ ঘোষ কাঞ্চন, জেলা সেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আবু ইবনে রজব, বিশিষ্ট সমাজসেবী আলহাজ্ব আবুল হোসেন পাটোয়ারী, দিনাজপুর সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোঃ ওয়াহেদুল আলম আটিস্ট, পৌর কাউন্সিলর জিয়াউর রহমান নওশাদ, সাবেক প্যানেল মেয়র আলতাফ হোসেন, দিনাজপুর টাইমস এর সম্পাদক জিন্নাত হোসেন,চ্যানেল আই’র স্টাফ রিপোর্টার শাহ আলম শাহী সহ সর্বস্তরের মানুষ অংশগ্রহন করেন।

কালিয়াকৈর থানার এসআই সানোয়ার হোসেনের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, নিখোঁজের দুইদিন পর গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বস্ত্র কারখানার এক কর্মকর্তার হাত-মুখ ও চোখ বাঁধা লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে উপজেলার চন্দ্রা পল্লীবিদ্যুৎ এলাকার একটি ডোবা থেকে ‘ডিভাইন টেক্সটাইলে’র প্রিন্টিং ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুমের লাশ উদ্ধার করা হয়। তিনি বলেন, আনসার একাডেমির এক নম্বর গেইটের কাছে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশে একটি ডোবায় মাসুমের লাশ পাওয়া যায়। মৃতদেহে আঘাতের চিহৃ রয়েছে। কাপড় দিয়ে হাত, মুখ ও চোখ বাঁধা ছিল।

দুর্বৃত্তরা তাকে অন্য কোথাও শ্বাসরোধে হত্যার পর লাশটি সেখানে ফেলে যেতে পারে বলে জানান তিনি। শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মর্গে নেওয়ার পর ডিভাইন কারখানার কর্মকর্তারা মাসুমের লাশ সনাক্ত করেন। রোববার রাত থেকে মাসুমের খোঁজ না পেয়ে পরদিন তার ছোটভাই সোহেল একটি জিডি করেছিলেন বলে জানান এসআই সানোয়ার। মাসুম পরিবার নিয়ে গাজীপুর সদরে থাকতেন। তার বাড়ি দিনাজপুরের সদরের দক্ষিণ মুন্সীপাড়া এলাকায়।

এদিকে দূর্বৃত্তদের হাতে নৃশংসভাবে অকালে নিহত হওয়ায় জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন। এ শোক বার্তায় তিনি নিহত মাসুমের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনাসহ শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।



মন্তব্য চালু নেই