প্রেমের ‘অপরাধে’ এ কেমন নির্মম বর্বরতা?
পারভেজ পিতাহারা এক নির্মাণ শ্রমিকের নাম। বাড়ী চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পৌরসভার গোডাউন এলাকায়। বৃদ্ধ মা ও ছোট বোনকে নিয়েই তার ছোট এই জগৎ সংসার। দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে সংসার জীবনের ছোট্ট নৌকাটির হাল একাই টেনে চলছিলেন আপন মনে।
কিন্তু ২০১৪ সালের শেষের দিকে ২০ বছরের এ যুবকের মনেও উঁকি দিয়েছিল এক প্রেমপাখি! তবে পারভেজের মন মন্দিরের দরজায় নাজমা আক্তার নামে এক ছলনাময়ী প্রেমপাখি বারবার কড়া নাড়লেও সেই ডাকে প্রথমে সাড়া দেননি নির্মাণ শ্রমিক পারভেজ। প্রেম আহ্বানকারী নাজমাদের চেয়ে আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল হওয়ায় নিজেকে রাখতে চেয়েছেন প্রেম নামের সেই ‘ভয়ংকর’ খেলার বাইরে। তবে নাজমা নামের তরুনীটির প্রায় দু’মাসের প্রাণপণ চেষ্টায় অবশেষে খুলেছিল পারভেজের মন মন্দিরের কপাটটি!
এরপর থেকে পারভেজ-নাজমা নামে এই প্রেমিক জুটির মধ্যে চলে নিয়মিত বিরতিতে রুটিন করে দেখা-সাক্ষাৎ। পারভেজ কাজের ফাঁকেই ঠিকই সময় বের করে সেরে নিতেন ডেটিং-পর্বটি। তাদের এই দেখা-দেখিতে রুটিন থেকে একটু দেরি হলেই নাজমা হাত কেটে নিজের রক্ত দিয়ে চিঠি লিখে পাঠিয়ে দিতেন প্রেমিক পারভেজের কাছে! রক্তের কালিতে লেখা সেই চিঠি পেয়ে প্রেমিক পারভেজও উন্মাত্তাল হয়ে উঠতেন! প্রেমের টানে ছুটে যেতেন প্রিয়তমা নাজমার কাছে।
তাদের এই প্রেমকাহিনী এক কান দুই কান করে জানাজানি হয় পরিবার থেকে সমাজে। এতে এক সময় বাধ সাধে অবস্থাসম্পন্ন নাজমার পরিবার। তাদের প্রেমে যত বাধা আসছিল, বিপরীতে তাদের প্রেমের তীব্রতা ও আকর্ষণও বাড়ছিল দ্বিগুণ গতিতে! প্রেমের বয়স ৯ মাস পার হতে না হতেই গত ২০ জুন এক সাথে ঘর বাঁধার স্বপ্ন নিয়ে পারভেজ-নাজমা ঘর থেকে বের হয়ে পাড়ি দিয়েছিলেন অজানার উদ্দেশ্যে।
তাদের সেই পথ গিয়ে থেমে ছিল সমুদ্রকন্যা কক্সবাজার জেলা সদরের কতুবদিয়া বাজারে। সেখানে পরিচিত এক ‘বড় ভাইয়ের’ বাসায় দু’জনেই এক সাথে সংসার জীবন কাটানোর পর এক পর্যায়ে প্রেমিকা নাজামার পরিবারের মিথ্যা আশ্বাসে পাঁচ সপ্তাহ পর আপন গৃহে ফিরে আসেন নাজমা, সাথে পারভেজও।
আর নাজমার পরিবারের কৌশলের কাছে হেরে গিয়ে ‘জামাই আদার’ পেতে ছুটে গিয়েছিলেন পারভেজও। তবে তার কপালে জামাই আদর না জুটলেও জুটেছে প্রেম করার ‘অপরাধে’ নির্মম এক নির্যাতন। তার শরীরের ওপর দিয়ে চালানো হয়েছে ভয়াবহ নির্যাতন। তাকে এক রাত এক দিন অবর্ণণীয়ভাবে আঘাত করে গুরুতর আহত করে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় স্থানীয় ইউপি সদস্যের সহযোগিতায় তুলে দেয়া হয় পুলিশের হাতে।
পুলিশও বিনা বাক্যে প্রেমের ‘অপরাধে’ অপরাধী পারভেজকে অপহরণ ও নারী নির্যাতনের মত গুরুতর মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে। এরপর থেকে দিনমজুর ‘প্রেম অপরাধী’ পারভেজের ঠাঁই হয় চট্টগ্রাম কেন্দ্রিয় কারাগারের হাসপাতালে। সেখান থেকে অবস্থার অবনতি হওয়ায় গত ৬ আগস্ট থেকে তাকে ভর্তি করানো হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
চমেক হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছেন পারভেজ।
শনিবার বিকেলে চমেক হাসপাতালের ৫ম তলায় ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে তিন কারারক্ষী ও একজন পুলিশ সদস্যের উপস্থিতিতে হাতকড়া পরা অবস্থায় কথা হয় ‘প্রেম অপরাধী’ পারভেজের সাথে। গুরুতর আহত হওয়ায় কথা বলতে চাইলে অনেক কষ্ট করেও কথা বলতে পারছিলেন না পারভেজ। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে দীর্ঘ কয়েক ঘন্টা সময় নিয়ে তার সাথে কথা বলার চেষ্টার কমতি ছিল না এ প্রতিবেদকের। তার জবানিতেই উঠে এসেছে প্রেম-পালিয়ে সংসার-পুলিশের মামলা ও নির্মম নির্যাতনের করুন কাহিনী।
নিজের পরিবার সম্পর্কে পারভেজ বলেন, ‘রাঙ্গুনিয়া উপজেলার গোডাউন এলাকায় আমাদের বাড়ী। আমার আব্বা বজল আহম্মেদ মারা গেছেন অনেক আগে, ছোট বেলায়। তখন থেকে দুই বোন ও এক মাকে নিয়ে আমার সংসার জীবনের সংগ্রাম শুরু। পরিবারের দায়িত্ব নিজের কাঁধে উঠায় লেখাপড়াও প্রাইমারি স্কুলের বেশি করতে পারিনি। এলাকায় রাজমিস্ত্রির কাজ করতাম। আমার বড় এক বোনের বিয়ে হয়েছে, আরেক বোন আমার ছোট এবং মা খুব বৃদ্ধ। এই দু’জনকে নিয়ে বাড়ীতে থাকি।’
প্রেমের সম্পর্ক শুরুর কথা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালের শেষের দিকে রাঙ্গুনিয়ার পোমরা ইউনিয়নের শান্তিরহাট এলাকায় একটি পাকা ভবন নির্মাণের কাজ করতে যাই। তার পাশের বাড়ীতে থাকতো নাজমা আক্তার নামে এক মেয়ে। দীর্ঘ দিন সেখানে কাজ করার সুবাধে নাজমার সাথে প্রায়ই আমার কথা-বার্তা হতো। তবে কিছু দিনপর সে নিজেই আমাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে বসে। আমি প্রায় দুই মাস তা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। তাকে বলেছি, আমি একজন গরীব সাধরণ রাজমিস্ত্রি আর তোমরা অনেক পয়সা ওয়ালা। এরপরও নাজমা বলেছিল, “টাকা পয়সা বড় না এগুলো আমিই ম্যানেজ করবো। আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না।”’
পারভেজ আরো বলেন, ‘এত কিছুর পরও আমি তাকে পাত্তা না দিয়ে অন্য মেয়েদের সাথে বেশি করে কথা বলতে থাকি। কিন্তু সে কিছুতেই আমাকে ছাড়ছে না। বারবার বিরক্ত করতে থাকে। হাত কেটে রক্ত দিয়ে চিঠি লিখে, মোবাইল ফোনের সেই হাতের কাটা ছবি তোলে আমার কাছে পাঠায়। এসব দেখে এক পর্যায়ে আমিও তার প্রেমে পড়ে যায়। এভাবে চলতে থাকে আমাদের কথা-বার্তা, দেখা-সাক্ষাৎ।’
‘আমাদের এই প্রেমের ঘটনা তখন নাজমার পরিবার থেকে শুরু করে তার আত্মীয়-স্বজনরা জেনে যায়। তখন তাকে আমার সাথে কথা বলতে, দেখা করতে বাধা দেয়া হয়। এই বাধা পেয়ে সে আরো পাগল হয়ে উঠে। এক সময় নাজমা আমাকে জানায় তাকে নিয়ে বাড়ী ছেড়ে পালিয়ে যেতে হবে। আমিও সিদ্ধান্ত নিলাম তাকে নিয়ে দূরে কোথাও পালিয়ে যাবো। তবে টাকা পয়সা না থাকায় সংশয়ে ছিলাম।’ বলেন-পারভেজ।
পালিয়ে জীবনের গাঁটছড়া বাঁধা প্রসঙ্গে প্রেমের অপরাধে নির্মমতার শিকার এই প্রেমিক বলেন, ‘২০ জুন সকালে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী টেইলার্স থেকে সেলাই করতে দেয়া বোরকা ও কাপড় নিয়ে নগরীর বহদ্দারহাট বাস টার্মিনালে চলে আসি। সেখান থেকে বাসে করে পূর্ব পরিচিত এক বড় ভাইয়ের কক্সবাজারের কতুবদিয়া পাড়ার বাসায় উঠি। সেখানে গিয়ে হুজুর ডেকে আমরা বিয়ে করি। শুরু করি নতুন জীবন সংসার। নাজমা প্রেমিকা থেকে তখন হয়ে যায় আমার স্ত্রী। ফলে দায়িত্বও বেড়ে যায়। ওই ভাইয়ের সহযোগিতায় স্থানীয় একটি চায়ের দোকানে কতদিন পানি টানার কাজ করি। আবার মাঝে মাঝে রাজমিস্ত্রির কাজও করেছি সেখানে।’
চট্টগ্রামে ফিরে আসা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘শুনেছি আমার নামে রাঙ্গুনিয়া থানায় একটি অপহরণ ও নারী নির্যাতন মামলা করেছে নাজমার পরিবার। তবে পুলিশ কখনো আমাদের ধরতে কক্সবাজার যায়নি। এরই মাঝে নাজমার সাথে মোবাইল ফোনে তার পরিবারের লোকজন যোগাযোগ করে বাড়ীতে চলে আসতে বলেন। কিন্তু নাজমা তখন একটি কথাই বলতো,“এখান থেকে আমার লাশ যাবে আমার জীবন্ত শরীর নয়। মরলে একসাথে মরবো, বাঁচলে একসাথে বাঁচবো।”’ এরপরও তার পরিবারের নানা কৌশলের কাছে আমরা হেরে গিয়ে ২৮ জুলাই নাজমাকে নিয়ে চট্টগ্রাম চলে আসলাম। তাকে একটি সিএনজি টেক্সি করে রাঙ্গুনিয়ায় পাঠিয়ে দিলাম। তবে আমি ভয়ে রাঙ্গুনিয়ায় যাইনি।’
নিজের ওপর বর্বর সেই নির্মমতার কথার বর্ণনা দিয়ে পারভেজ বলেন, ‘২৮ জুলাই নাজমাকে তার বাড়ীতে পাঠিয়ে দিলেও আমি এলাকায় যাই আরো তিনদিন পর। ৩১ জুলাই শুক্রবার জুমার নামাজের পর নাজমার বড় ভাইয়ের ফোন পেয়ে প্রথমে যাই রাউজানের নোয়াপাড়ায় তার ভাড়া বাসায়। সেখানে আসেন নাজমার এক বড় বোনও। এসময় তারা দু’জনেই বলেছিলেন, যা হওয়ার হয়ে গেছে, এখন বাড়ীতে গিয়ে মুরব্বীদের কাছে মাফ চেয়ে নিলে হবে। সেই কথা বিশ্বাস করে, তাদের দু’জনের সাথে সিএনজি টেক্সি করে ১ আগস্ট শনিবার সন্ধ্যার দিকে রাঙ্গুনিয়ার শান্তিরহাট এলাকায় পৌঁছি। রাতে খাওয়া দাওয়ার পর নাজমাসহ সকলের সাথে কথা বলে যখন ঘুমাতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। ওই সময়ে নাজমার বাবা নুরুল ইসলাম আমাকে ডেকে নেন। এসময় তার সাথে ছিল, রাশেদ, শাহেদসহ নাজমার আপনভাই, চাচাতো ভাই মিলে মোট ১০-১২ জন।’
তিনি বলেন, ‘প্রথমে নাজমার পিতা নুরুল ইসলাম আমার মুখে আঙ্গুল ঢুকিয়ে দিয়ে মাথায়, বুকে, পেটে ঘুষি মারতে থাকে। আমি কান্না করলে জানতে চাই কোন পরিবারের ছেলে হয়ে কোন পরিবারের মেয়ের দিকে হাত দিয়েছি। এই বলে আমার হাতে লাটি ও লোহার রড দিয়ে আঘাত করা হয়। এরপর তার ভাইরা সকলে মিলে আমাকে ওজন মাপার সিলসহ লোহার রড, লাটি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করা হয়। একপর্যায়ে তারা আমাকে চিৎ করে মাটিতে ফেলে বুকের ওপর পা দিয়ে ব্যাপকভাবে আঘাত করতে থাকে। এরপর আমি অজ্ঞান হওয়ায় আর কিছু আমার জানা নেই। সকালে জ্ঞান ফিরলে দেখি আমার সারা শরীর রক্তাত। জ্ঞান ফেরার পর আবার দ্বিতীয় দফায় মারধর করা হয়। এরপর স্থানীয় মেম্বার (ইউপি সদস্য) জসিমের সাহায্যে আমাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়।’
থানার কথা বলতে গিয়ে নির্মমভাবে নির্যাতিত এ প্রেমিক বলেন, ‘থানায় ওসি আমাকে রক্তাত অবস্থায় দেখে নাজমাকে ডেকে পাঠান। তাকে আমার মুখোমুখি করে জানতে চান, আমার সাথে তার কি সম্পর্ক? এর উত্তরে নাজমা বলেছে, তার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই! এরপর পুলিশ আমাকে কোর্টে পাঠিয়ে দেয়। এরপর জেলখানার মেডিকেল হয়ে গত বৃহস্পতিবার থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে।’
এঘটনার পরও তার পরিবারের কেউ আসেনি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার এক বোন বিয়ে হয়ে গেছে। আরেক বোন ছোট এবং মা বৃদ্ধ। এছাড়া তাদের হাতে কোন টাকা পয়সা না থাকায় আমাকে দেখতে আসেনি মনে হয়।’
পরিশেষে হতভাগা এই যুবক বলেন, ‘আমি যদি প্রেম করার অপরাধে নারী নির্যাতন ও অপহরণের মামলার আসামী হতে হয় হবো। কিন্তু আমাকে যে এভাবে নির্মমভাবে নির্যাতন করে মেরে ফেলতে চেয়েছে নাজমার পরিবার তার বিচার কি কখনো পাবনা? আমার শরীরের কী অবস্থা সেটি আমি জানি না, তবে মনে হচ্ছে আমি আর বাঁচবো না। তবে সমাজের কাছে এই বিচার দিয়ে দিলাম।’
সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতলের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে বারান্দায় এক্সটারা বেডে শুয়ে থাকা পারভেজের সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন। হাতের নখ থেকে শুরু করে মাথার চুল, ঠোট, পা শরীরের কোনো অংশ বাদ পড়েনি নাজামার পরিবারের হিংস্রতার থাবা থেকে। ঘটনার এক সপ্তাহ পরেও তার পায়ুপথ দিয়ে অনবরত কালো রক্ত বের হচ্ছে। হাঁছি-কাঁসির সময়ও তার মুখ দিয়ে মরা রক্ত বের হচ্ছে। এছাড়া পিঠে, পায়ে, শরীরে গোপন অংঙে আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায় সেখান থেকেও রক্ত ঝরছে। পরিবারের কেউ না থাকায় তাকে সার্জারি ওয়ার্ডে অনেক রোগীর স্বজনরা তাকে বিভিন্ন খাবার দিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি মহেশখালী থেকে রোগী নিয়ে আসা মুক্তা বেগম নামে এক নারী পারভেজকে গোসল করানো থেকে শুরু করে কাপড় পর্যন্ত পরিস্কার করে দিচ্ছেন।
তিনি বলেন, ‘এরকম অমানবিকভাবে প্রেমের জন্য মারতে পারে সেটি কল্পনা করতে পারছিনা। একজন চোর-ডাকাতকেও তো কেউ এরকম মারেনা। কেউ না থাকায় বিবেকের তাড়নায় একটু সহযোগিতা করছি। আমার দেখা দেখিতে অনেকে তাকে সহযোগিতা করছেন।’
এসময় পাশে থাকা বেশ কয়েকজন রোগরীর স্বজন এই নির্মম জঘন্য ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করে বিচারের দাবি জানান। এমনকি তারা এই ঘটনাকে সিলেটের শিশু সামিউল আলম রাজন হত্যাকাণ্ডের সাথে তুলনা করেছেন।
কারারক্ষী প্রহরায় হাসপাতালের বেডে চিকিৎসাধীন পারভেজের বর্তমান শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে সার্জারি ওয়ার্ডে কর্তব্যরত মেডিকেল অফিসার ডা. আখিরা আব্দুর রহিম বলেন, ‘কাগজপত্র দেখে মনে হচ্ছে তার আউট সাইড ফিজিক্যাল ইনজুরি হয়েছে। এখন পায়ুপথ দিয়ে ও মুখ দিয়ে যে মরা রক্ত বের হওয়ার কথা বলা হচ্ছে সেটি হয়তো শরীরের ভেতরে কোনো আঘাতের কারণে হচ্ছে। আজকে তাকে এক্সরে করানো হয়েছে রিপোর্ট পেলে কি হয়েছে বলা যাবে।’
নির্যাতনের শিকার পারভেজ জানিয়েছিলেন তার বাড়ী সরফভাটা ইউনিয়নে। জানতে চাইলে রাঙ্গুনিয়ার সরফভাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মজিবুল ইসলাম শরফী বলেন, ‘এই ধরণের ঘটনা মনে হয় আমার এলাকায় ঘটেনি। এটি পৌরসভায় ঘটতে পারে। তবে আমি খবর নিচ্ছি।’
ঘটনাস্থল অর্থ্যাৎ নাজামার বাড়ী রাঙ্গুনিয়ার পোমরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়াম্যান গিয়াস উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি আওয়ার নিউজ বিডিকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। যদি এধরণের ঘটনা ঘটে থাকে সেটি অবশ্যই নিন্দনীয় ও অন্যায়। আমি কালকে এ বিষয়ে খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। প্রয়োজনে সোমবার হাসপাতালে ছেলেটিকে দেখে আসবো। এই ঘটনার একটি সুরাহা অবশ্যই হবে।’
পারভেজের নামে গত ১৭ জুলাই অপহরণ ও নারী নির্যাতনের একটি মামলা দায়ের করেন নাজমার পিতা নুরুল ইসলাম। সেই মামলায় নাজমার পরিবারের হাতে নির্মম নির্যাতনের পর আশংকাজনক অবস্থায় গ্রেপ্তার করা হয় পারভেজকে। যেই থানা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছিল। সেই রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি হুমায়ূন কবিরের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওই ছেলেটির বিরুদ্ধে অপহরণ ও নারী নির্যাতন মামলা থাকায় তাকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি। গ্রেপ্তারের আগে সে গণপিটুনির শিকার হওয়ায় তাকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। এখন তার কী অবস্থা তা আমার জানা নেই।’
মামলার আসামি হলেও কেউ আইন হাতে তুলে নিয়ে এভাবে আশংকাজনক অবস্থায় কাউকে পুলিশের হাতে তুলে দিলে সেখানে কি পুলিশের কোনো ভূমিকা নেই? এমন প্রশ্নের উত্তরে ওসি বলেন, ‘বিয়ষটি যদি এমন হয়ে থাকে, তহালে আমি খতিয়ে দেখছি।’
মন্তব্য চালু নেই