দীর্ঘ ২ বছর যাবত শিকলবন্দি রয়েছেন ঠাকুরগাঁওয়ের আঃ হালিম

থাকবো নাকো বদ্ধ ঘরে দেখবো এবার জগৎটাকে, কেমন করে ঘুরছে মানুষ যুগান্তরের ঘুর্নিপাকে।কবির এই কবিতাকে উপজীব্য করে মানুষ যখন নিজের ,পরিবারের বা দেশের উন্নয়নে ছুটে বেড়াচ্ছে ,তখন জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার এক টকবগে যুবক দীর্ঘ ২ বছর যাবত শিকল বন্ধি জীবন যাবন করছে। ইতোমধ্যে নাওয়া খাওয়া ও চিকিৎসার অভাবে কঙ্কালসার হয়ে পড়েছে আঃ হালিম নামে ওই যুবক।

ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার উত্তর গুয়াগাঁও (কলেজ পাড়া) গ্রামের বাসিন্দা আঃ হালিম।তার পিতার নাম বজির উদ্দীন ও মাতা হালিমা বেগম। কয়েক বছর পূর্বেও সে রাইস মিলে কাজ করে সংসার পরিচালনা করলেও এখন সে মানসিক প্রতিবন্ধি।
১০ বছর বয়সে সে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে।এরপর মানসিক চিকিৎসায় সে কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠলেও অথাভাবে চিকিৎসা অব্যাহত রাখতে না পারায় কয়েক বছর পর আবার সে মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে।

সে সময় সে যখন তখন রাস্তাঘাটে লোকজনের উপর চরাও হয় এবং গাড়ি ঘোড়ার উপর হামলা চালিয়ে প্রতিবেশি ও পরিবারের ক্ষয়ক্ষতি শুরু করে। যখন তখন বিদ্যুতের পিলারে উঠে তার জড়াজড়ি করে এবং চলন্ত গাড়ির সামনে ঝাপ দিয়ে গাড়ি থামানোর চেষ্টা করতে থাকে আবার কখনো গলায় ফাঁস দিয়ে আত্বহত্যা করতে যায়। নিজের একমাত্র বোনের মাথায় গরম কড়াই দিয়ে আঘাত করে।

তার অত্যাচারে প্রতিবেশি ও পরিবারের লোকজন অতিষ্ঠ হয়ে পড়লে প্রায় ২ বছর পূর্বে তাকে বাড়ির উঠানে একটি গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়।এভাবে কেটে গেছে প্রায় ২ বছর।শীত বর্ষা বাদল কোনটাতে তার ঘরে থাকার সুযোগ হয়নি।এ বছর একদিন আষাঢের রাতে ঝড় বৃষ্টিতে ভিজে হালিমের পাগলামী আরো বেড়ে যায় ।ওইদিন পিতামাতা ঘরে আর হালিম খোলা আকাশের নীচে বৃষ্টিতে ভিজে কান্নাকাটি করতে থাকে।এতে সে প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে পড়ে ।এমতাবস্থায় পরিবারের পক্ষ থেকে বাড়ির উঠানে একটি টিনের ছাউনি দিয়ে থাকার ব্যবস্থা করা হয়।

আঃ হালিমের মা হালিমা বেগম জানান,তার স্বামী বজির উদ্দীন (৭০) প্যারালাইসিস রোগে আক্রান্ত হয়ে ৩ বছর যাবত শয্যাশায়ী। তার উপর বড় ছেলে আঃ হালিম (৩৫) পাগল হয়ে পড়ায় ২ বছর যাবত শিকলবন্দি রাখা হয়েছে। এক ছেলে (এরশাদ) অন্যের বাড়িতে দিনমজুরী করে যা আয় হয় তা দিয়ে সকলের মুখের খাবার জোটানো হয়।পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে স্বামী ও সন্তানের চিকিৎসা করতে পারছেন না।এতো সমস্যার পরও সরকারি ও বেসরকারিভাবে কেউ তাদের কোন খোঁজ খবর নেয়নি।এমনকি ওই পরিবারকে একটি বয়স্ক ভাতার কার্ডও দেওয়া হয়নি।

হালিমের পিতা বজির উদ্দীন জানান, খোলা থাকলে হালিম পরিবারের এবং প্রতিবেশিদের ক্ষয়ক্ষতি করে। এজন্যই তাঁর পাঁয়ে শিকল পরিয়ে রাখা হয়েছে।তিনি আরো জানান, আঃ হালিম তার ছোট বোনের মাথায় গরম কড়াই দিয়ে আঘাত করায় সে পরপর ২ বার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েও পাশ করতে পারছেনা।

এ ব্যাপারে পীরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র রাজিউর রহমান রাজু জানান, তিনি কিছুদিন পূর্বে পত্রিকা পড়ে ওই পরিবারের সমস্যার কথা জানতে পেরে তাৎক্ষনিকভাবে সেখানে যান এবং পৌরসভার পক্ষ থেকে খাদ্য সামগ্রী ও কাপড় চোপড় প্রদান করেন।তিনি আগামী ২ মাসের মধ্যে ওই পরিবারকে একটি বয়স্ক ভাতা বা প্রতিবন্ধি ভাতা প্রদানের জন্য সংশি¬ষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন।। সেই সাথে হালিমের চিকিৎসার্থে নিজের ও পৌরসভার পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন।



মন্তব্য চালু নেই