১৬০ টাকার অভাবে এইচএসসি পরীক্ষা দিতে পারেননি কাদির
থার্মেক্স গ্রুপের কর্ণধার কাদির মোল্লা এখন একজন আলোকিত মানুষের মডেল ও উন্নয়নের রূপকার। তাকে বলা যায় শীর্ষ বিজনেস আইকনেদের একজন। একে একে প্রতিষ্ঠা করেছেন ১২টি প্রতিষ্ঠান। যাতে কাজ করছেন প্রায় ১৬ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী। তার অনুদানে চলছে অন্তত একশ’রও বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। অথচ মাত্র ১৬০ টাকার অভাবে সেই তিনিই একদিন অংশ নিতে পারেন নি এইচএসসি পরীক্ষায়। সেই কষ্ট তাকে এখনও তাড়া করে ফেরে। বেসরকারি টেলিভিশন এনটিভিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে নিজ মুখেই জীবনের সংকটকালীন মুহূর্তের নানা জানা-অজানা গল্প বলেছেন কাদির মোল্লা।
৪ টাকা পুঁজি নিয়ে শুরু করেছিলেন কাদির মোল্লা
জীবনে প্রথম ধাক্কাটা খান ১৯৭৪ সালে অষ্টম শ্রেণীতে থাকা অবস্থায় বাবা আবদুল মজিদ মোল্লার মৃত্যুতে। সে সময় টাকার অভাবে বিনা চিকিৎসায় বাবার মৃত্যু এখনও বিমর্ষ করে তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার বড় কাদির মোল্লাকে। তাই বাবার নামে প্রতিষ্ঠিত ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে দুস্থ মানুষদের সেবা করে সেই কষ্ট কিছুটা হলেও ভুলে থাকতে চান। দিনমজুর বাবার বড় ছেলে কাদির মোল্লা অনেক চড়াই উৎরাই পার করে এসেছেন আজকের অবস্থানে। টিউশনি আর সপ্তাহে দুইদিন মাথায় কাপড়ের বোঝা বহন করে পাস করেছেন এসএসসি। টাকার অভাবে পৌঁছাতে পারেন নি উচ্চ শিক্ষার দরজায়। এইচএসসি পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ৩৬০ টাকার মধ্যে ২০০ টাকা ধার করে যোগাতে পারলেও বাকি টাকা না থাকায় পরীক্ষা আর দেয়া হয়নি। সেই কষ্ট বুকে চেপে সিদ্ধান্ত নিলেন ঢাকায় এসে রিকশা চালাবেন। চড়ে বসলেন ‘ভাই ভাই’ পরিবহনের বাসে। ভাড়া না থাকায় নরসিংদীর ইটাখোলায় নামিয়ে দিলেন কন্ডাক্টর। সেখানে ময়মনসিংহ থেকে আসা কামলাদের কাছে অনুরোধ করে পাট ও আউশ ক্ষেতে চার দিন কাজ করলেন। সেই মজুরির ৪ টাকাই তার জীবনের প্রথম পুঁজি। এবার চাপলেন ট্রেনে। তাতেও বিপত্তি। ভুল ট্রেনে উঠে নামলেন মদনগঞ্জে। তবে এই ভুল ট্রেনই জীবনের ‘টার্নিং পয়েন্ট’ বলে মনে করেন এই বিশিষ্ট ব্যবসায়ী।
সকালে ট্রেন থেকে নেমেই পত্রিকার পাতায় চোখ পড়লো ‘মেরিন টেকনোলজি’ নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞপ্তি। মাসে ১০ টাকা স্টাইপেন, ফ্রি ছাত্রাবাস আর তিন বছরের কোর্স শেষে চাকরির নিশ্চয়তা। খুব বেশি না ভেবেই ভর্তি হলেন। এখানেও লড়াই করতে হয়েছে তাকে। সোনাকান্দায় ১৪ বাচ্চা পড়িয়ে খেয়েছেন এক বেলা। তিন বছরের কোর্সের ২ বছর শেষ করতেই সিঙ্গাপুরে চাকরির ডাক পড়লো। পাঁচ বছর চাকরি শেষে দেশে ফিরে চাকরি নিলেন তিতাস গ্যাসে। মাত্র সাত বছরের চাকরি জীবনে ঘন ঘন বদলি তাকে বিরক্ত করলো। দায়ী করলেন রাজনীতি না করাকে। এবার সিদ্ধান্ত নিলেন চাকরি ছেড়ে ব্যবসা করবেন। সেই শুরু, এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। গত বছর সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেলো এক ভাইয়ের, আর অনেক আগেই অসুখে মারা গেছেন বোনটিও। মা নূরজাহান বেগম, স্ত্রী, তিন মেয়ে, ইঞ্জিনিয়ার দুই মেয়ে জামাই ও নাতি-নাতনীদের নিয়ে জীবনের বাকি সময়টা কাটাতে চান নরসিংদীর নিজ বাসা ‘পড়ন্ত বেলা’য়। বড় ব্যবসা আর পরিবারকে সময় দিতে নিয়ম মেনে চলার চেষ্টা করেন তিনি। সকাল ৮টার দিকে ঘুম থেকে উঠে যান নিজ বাসায় প্রতিষ্ঠিত ব্যায়ামাগারে। প্রায় এক ঘণ্টা ব্যায়াম করে প্রয়োজনীয় কাজ শেষে বেরিয়ে পড়েন কারখানার উদ্দেশে।
মন্তব্য চালু নেই