সিরিজ জেতাই লক্ষ্য বাংলাদেশের

বাংলাদেশর লক্ষ্য সিরিজ জয়! তাও আবার নাম্বার ওয়ান দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। যেখানে ৯টি টেস্ট খেলে মাত্র একটি ড্র এবং বাকি ৮টিতে ম্যাচে বড় ব্যবধানে হার। চট্টগ্রাম টেস্ট ড্র হওয়ায়, ঢাকা টেস্ট হয়ে দাঁড়িয়েছে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচ। মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সকাল সাড়ে ৯টায় মুখোমুখি হবে দু’দল।
এই ম্যাচে আত্মবিশ্বাসের রসদ নিয়ে মাঠে নামতে প্রস্তুত বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। শুধু তাই নয়, দক্ষিণ আফ্রিকার পেস আক্রমণের বিপক্ষে কিভাবে নিজেদের ইনিংসগুলোকে আরও বড় করা সেই চ্যালেঞ্জ নিয়ে প্রস্তুত টেস্ট স্কোয়াডে থাকা ১৪ যোদ্ধা। বুধবার সংবাদ সম্মেলনে মুশফিক সরাসরিই জানিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১-০ ব্যবধানে সিরিজ জেতার কথা।
গত এক বছর আগেও কোনো দলের বিপক্ষে এভাবে বলে কয়ে মাঠের লড়াইয়ে নামেনি বাংলাদেশ। তবে গত ৮-৯ মাসে আমূল বদলে গেছে বাংলাদেশের ক্রিকেট। সেখানে প্রতিপক্ষ দলকে সমীহ করলেও বিন্দুমাত্র ছাড় দিতে নারাজ মুশফিক-তামিমরা। তাদের শরীরী ভাষাতেও এসেছে পরিবর্তন। মুশফিকের চোখেও এটা ধরা পড়েছে। এমন বদলে যাওয়া বাংলাদেশে সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেছেন, ‘এটাই একটি দলের উন্নতির লক্ষণ। একটা সময় ওয়ানডেতে ৫০ ওভার ব্যাটিং করাই মূল লক্ষ্য ছিল। তারপর আমরা ২০০-২৫০ রান করার চেষ্টা করেছি। পরের ধাপে আমরা অন্য দলগুলোর সঙ্গে লড়াই করতে চেয়েছি। পরের ধাপে চাহিদা আরও বেড়েছে। বাংলাদেশ দলে ভাল ক্রিকেটার এসেছেন, ম্যাচ উইনার এসেছেন। তাদের কারণে দলের পারফর্মও বদলে গেছে। তারপরও টেস্ট ক্রিকেট অন্য রকম। আমরা যেহেতু অন্য দলগুলোর মতো খুব বেশি টেস্ট খেলি না। ৪-৫ মাস পর পর একটা টেস্ট খেললে ভাল পারফরম্যান্স আসা খুব কঠিন। তারপরও বলব, দলের প্রতি চাহিদা বেড়ে যাওয়া একটা ইতিবাচক দিক। আশা করছি, এই টেস্টে আমরা ভাল পারফর্ম করতে পারব।’
টেস্ট ক্রিকেটে নাম্বার ওয়ান দল দক্ষিণ আফ্রিকা। বড় বড় দলগুলোর বিপক্ষে দুর্দান্ত খেলেই আইসিসি র্যাঙ্কিংয়ের এক নাম্বারে উঠেছে প্রোটিয়ারা। এই দলের রয়েছে বিশ্বমানের সব বোলার। মুশফিক এমন দলের বিপক্ষে বৃহস্পতিবারের ম্যাচে নিজেদের এগিয়ে রেখে মুশফিক বলেছেন, ‘চট্টগ্রাম টেস্টের মতো প্রসেসগুলো ঠিকমতো করতে পারলে ১-০ ব্যবধানে সিরিজ জেতা সম্ভব।’
চট্টগ্রামের পয়মন্ত ভেন্যুতে প্রথম টেস্ট বৃষ্টি বাধায় ড্র হয়েছে। তবে মিরপুরের আকাশে গত দু’দিন ধরে নীল আকাশ দেখা গেলেও দ্বিতীয় টেস্টে বৃষ্টির শঙ্কা থাকছেই। এসব নিয়ে অবশ্য মাথা ঘামাচ্ছেন না টেস্ট দলের অধিনায়ক। তিনি বলেছেন, ‘মাঠের লড়াইয়ে রসদগুলো নিয়েই আমাদের ভাবনা। আবহাওয়ার কথা ভেবে খুব একটা লাভ নেই। আমাদের লক্ষ্য ৫ দিন ভাল ক্রিকেট খেলা। টেস্ট ম্যাচে একদিন ভাল খেললে হবে না। পুরো ৫ দিনই আমাদের ধারাবাহিকতা ধরে রেখে খেলতে হবে। এটা আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগও।’

দক্ষিণ আফ্রিকা দলটা এক নাম্বার বলেই, সুযোগ মানছেন মুশফিক। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘আমরা এক নাম্বার দলের বিপক্ষে খেলছি, সুযোগ আসলে সেখানেই। তাদের বিপক্ষে জেতা অনেক বড় অর্জন হবে। গত টেস্টে (চট্টগ্রাম) আমরা প্রতিটি সেশনেই দাপট দেখিয়ে খেলেছি। আমাদের লক্ষ্য অবশ্যই ভাল ক্রিকেট খেলা। আমাদের বোলিং ইউনিটের ক্ষমতা আছে ওদের (দক্ষিণ আফ্রিকা) ২০ উইকেট নেওয়ার। এটা করতে পারলে ফলাফল ভাল হতে পারে। ভাল ফলাফল মানে, বাংলাদেশ ১-০ ব্যবধানে সিরিজটি জিততেও পারে।’
দক্ষিণ আফ্রিকা বড় দল। এই দলের বিপক্ষে কোন প্রসেসগুলো ঠিক রেখে সিরিজ জেতা সম্ভব বলে মনে করছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে মুশফিক বলেছেন, ‘সিরিজ জয় সম্ভব তো অবশ্যই! তবে সত্য হল, আমরা টেস্টে এখনো খুব বেশি ধারাবাহিকভাবে খেলতে পারছি না। তবে সাম্প্রতিক ফর্মের কথা বললে, বাংলাদেশ খুব ভাল ক্রিকেট খেলছে। ওয়ানডে-টেস্ট; দুই ফরম্যাটেই। এটাই আমাদের আত্মবিশ্বাসের দারুণ জায়গা। বোলারদের মধ্যে বিশ্বাস তৈরি হয়েছে যে, ভাল জায়গায় বোলিং করে গেলে দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলকেও অলআউট করা যায়। সেটাও খুব কম রানে; ২৪৮ রান টেস্টে খুবই ছোট স্কোর। সে দিক থেকে বলব, আত্মবিশ্বাস সবার মধ্যেই আছে। আশা করছি, এর প্রভাব সামনের ম্যাচে বিস্তার করতে পারব। এ সব কিছু মাথায় রেখেই ঢাকায় সেরা ক্রিকেট খেলতে হবে। যেহেতু এটা শেষ ম্যাচ। দক্ষিণ আফ্রিকাও জানে এমন পরিস্থিতিতে কিভাবে খেলতে হয়। ওদের (দক্ষিণ আফ্রিকার) বোলিংটা পরিকল্পনা মতোই হয়। আমরা যদি সব কিছু ঠিকঠাক প্রয়োগ করতে পারি, ফলাফল আমাদের পক্ষেও আসতে পারে। এমনকি সিরিজটাও আমাদের হতে পারে।’
মিরপুরের উইকেট সাধারণত গতিময় হয়। এখানে পেসারদের পাশাপাশি স্পিনারদের সাহায্য থাকে; সঙ্গে ব্যাটসম্যানদেরও স্টোক খেলার সুযোগ থাকে। টেস্ট উইকেট বানাতে হলে সপ্তাহ দুয়েক সময় লাগে। আবহাওয়ার কারণে কিউরেটররা এই সময়টুকু পাননি বলে, উইকেট কেমন আচরণ করবে এটা নিয়ে শঙ্কা থাকেছে। এ প্রসঙ্গে মুশফিক বলেছেন, ‘আবহাওয়ার কারণে উইকেট হয়তো কিউরেটর তার ইচ্ছেমতো বানাতে পারেননি। আপনারা জানেন ১০-১২ দিন উইকেট কাভারের নিচে ছিল। ফলে কাজ করার সুযোগ খুব একটা পাওয়া যায়নি। তারপরও যা হয়েছে, সেটা নিয়েই আমরা খুশি। কারণ উইকেটের উপর কারও হাত নেই। আশা করছি, উইকেট ব্যাটসম্যানদের জন্য সুবিধার হবে। একই সঙ্গে মিরপুরের উইকেটে পেসারদের জন্যও কিছু থাকে। এখানে মাটি অন্য রকম। এসজি বলে পেসাররা ভাল করবে। একই সঙ্গে স্পিনাররাও কিছু পাবে। সব মিলিয়ে একটা স্পোর্টিং উইকেটেই খেলা হবে। আমাদের উইকেটের সুবিধা কাজে লাগাতে হবে।’

চট্টগ্রাম টেস্টে বৃষ্টির কারণে এক ইনিংস খেলা হয়েছে। তাই পুরো দলকে পরোখ করে নিতে পারেনি টিম ম্যানেজমেন্ট। এই কারণে ঢাকা টেস্টে অপরিবর্তিত দলই থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে মুশফিক বলেছেন, ‘এই উইকেটে আমাদের কম্বিনেশনে খুব বেশি পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই। কারণ চট্টগ্রাম টেস্টে সবাই যার যার জায়গায় ভাল খেলেছে। ওই হিসেবে পরিবর্তনের সম্ভাবনা কম। তবে দলে যেহেতু ৫ জন স্পিনার আছে; সেক্ষেত্রে একজন পেসার কিংবা একজন ব্যাটসম্যান সেরা একাদশে ঢুকেও যেতে পারে। যদিও আমরা আরও চিন্তা করছি। আমরা আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ নিয়ে চিন্তা করব।’
প্রোটিয়াদের বোলিং আক্রমনের বিপক্ষে সেশন বাই সেশন ঠিকে থাকাটাকেই বড় চ্যালেঞ্জ ভাবছে বাংলাদেশ। এই চ্যালেঞ্জ নিতে অবশ্য প্রস্তুত তারা। এ প্রসঙ্গে দলের সেরা ব্যাটসম্যান মুশফিক বলেছেন, ‘তাদের (দক্ষিণ আফ্রিকা) বোলারদের খেলা কঠিন, তবে অসম্ভব না। এ রকম শক্তিশালী পেস আক্রমণকে এর আগেও মোকাবেলা করেছে বাংলাদেশ। তবে ভাল খেলাটা লম্বা সময় ধরে খেলতে হবে। এক সেশন ভাল খেলে পরের সেশনে খারাপ খেললে লাভ হবে না। আমরা জানি, এই টেস্টে কঠিন পরিস্থিতিতে পড়তে হবে। সেই পরিস্থিতি মোকাবলে করে আমরা যাতে বড় ইনিংস খেলতে পারি, সেটাই আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ নেওয়ার জন্য দলের সবাই প্রস্তুত।’

































মন্তব্য চালু নেই