দু’ভাইকে থানায় বিবস্ত্র করে নির্যাতন

রাজশাহী : বোয়ালিয়া থানায় দুই ভাইকে নগ্ন করে অমানবিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। এরপর মামলায় জড়িয়ে তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে। আদালত থেকে জামিন নিয়ে তারা এখন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এর ফলে শারীরিকভাবে আহত হওয়ার পাশাপাশি আহতরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন।

আহতরা হলেন- রাজেদুল হাসান রাজ (২৬) ও তার ভাই শহিদুল হাসান শাহী (২৬)। তারা মহানগরীর সাধুর মোড় এলাকার মর্ত্তুজা আলীর ছেলে। সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে বোয়ালিয়া মডেল থানায় নির্যাতনের এ ঘটনা ঘটে।

নির্যাতনের শিকার দুই ভাই জানান, তারা নর্দান ইউনিভার্সিটির রাজশাহী শাখায় আইন বিষয়ে তৃতীয় সেমিস্টারে অধ্যয়নরত। ইউনির্ভসিটির পরিচয়পত্র হারিয়ে গেলে তারা থানায় জিডি করতে যান। সেসময় কর্মরত ডিউটি অফিসার তাদের থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই মনিরের কাছে পাঠান। তারা এসআই মনিরের সঙ্গে দেখা করতে যায়। এসময় তার কক্ষে ঢুকে জিডির বিষয়টি অবহিত করেন। কিন্তু এসআই মনির সে বিষয়ে কোনো কথা না করেই অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করেন।

এক পর্যায়ে তাদের হাতে হাতকড়া পরিয়ে দেয়া হয়। এসময় এসআই আমিরুলসহ অন্য পুলিশ সদস্যরা তাদের উলঙ্গ করে মুখে কালো কাপড় পরিয়ে হাত-পা বেঁধে সম্পূর্ণ নগ্ন করে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে দেয়। এরপর থানার পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) খাইরুল ইসলাম তাদের হকিস্টিক ও জিআই পাইপ দিয়ে বেধড়ক পেটায়। এসময় তিনি তাদের জোর করে সম্প্রতি মহানগরীর দেবিশিংপাড়ায় ঘটে যাওয়া ছিনতাইয়ের ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার ব্যাপারে স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা করেন।

নির্যাতনের শিকার দুই ভাই আরো জানান, স্বীকারোক্তি না দেয়ায় তাদের ওপরে নেমে আসে আরো অমানবিক নির্যাতন। এরপর তাদের কয়েক দফায় থানার দোতালার একটি কক্ষে রেখে নির্যাতন করা হয়। তাদের মুখের কালো কাপড় খুলে দেয়া হলে, তারা এসআই মনির, এসআই আমিরুল ও পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) খাইরুল ইসলামসহ কয়েকজনকে শনাক্ত করেন। পরে তাদের সম্পূর্ণ নগ্ন অবস্থায় কয়েক ঘণ্টা থানার একটি অন্ধকার কক্ষে রাখা হয়। গভীর রাতে আবারো তাদের ওপর চালানো হয় নির্যাতন। তাদের নগ্ন করে থানার দোতালার একটি কক্ষে সারারাত আটকিয়ে রাখা হয়।

মঙ্গলবার সকালে তাদের ছিনতাই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে চালান দেয়া হয়। এরপর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ক আদালতের বিচারক তাদের জামিন মঞ্জুর করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার নির্দেশ দেয়। তারা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ভর্তি হন।

ভুক্তভোগীরা আরো অভিযোগ করেন, বর্তমানে বোয়ালিয়া মডেল থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই মনির মতিহার থানার সেকেন্ড অফিসার পদে চাকরি করার সময়ে রাজ ও শাহীর কাছে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। না হলে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে গ্রেপ্তার করা হবে বলে জানান। পরে তারা টাকা দিতে অস্বীকার করলে এসআই মনির নিজে বাদী হয়ে তাদের বিরুদ্ধে একটি মারধর ও টাকা কেড়ে নেয়ার মামলা দায়ের করেন।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগীরা সংবাদ সম্মেলনসহ তৎকালীন পুলিশ কমিশনার এসএম মনিরুজ্জামানের কাছে এসআই মনিরের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন। বর্তমানে বিষয়টি তদন্তধীন রয়েছে। এ ঘটনার জের ধরেই এসআই মনির বোয়ালিয়া মডেল থানায় সেকেন্ড অফিসারের দায়িত্ব পাওয়ার পর পূর্বের এই রাগ মেটাবার উদ্দেশ্যে নির্যাতনের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে তারা দাবি করেন।

শুধু তাই নয়, তাদের পুনরায় ছিনতাইকারী সাজাতে একটি ছিনতাই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

অভিযোগের ব্যাপারে এসআই মনির বলেন, আমি এ ঘটনার বিষয়ে কিছু জানি না। এসময় আমি থানার বাইরে ছিলাম। তবে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে বলে শুনেছি।

দুই ভাইকে নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে পরিদর্শক (ওসি-তদন্ত) খাইরুল ইসলাম বলেন, নির্যাতনের কোনো ঘটনা ঘটে নি। তাদের সামান্য শাসন করা হয়েছে মাত্র। বিভিন্ন স্থানে ছিনতাইয়ের অভিযোগে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা বড় মাপের সন্ত্রাসী বলে উল্লেখ করেন তিনি।



মন্তব্য চালু নেই