৮০ শতাংশ গরীব ও ৫৩ শতাংশ ধনী বাল্য বিয়ের শিকার
রাজশাহী : বাল্যবিয়ের প্রথম শিকার হয় শিশু, দ্বিতীয় শিকার নারী এবং তৃতীয় শিকার সমাজ। বাল্যবিয়ে বা অপরিণত বয়সে বিয়ে অত্যন্ত ভয়াবহ একটি সমস্যা যা জেন্ডারসমতা ও নারীক্ষমতায়নের লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা।
বুধবার ব্র্যাকের জেন্ডার জাস্টিস অ্যান্ড ডাইভারসিটি বিভাগের ‘মেয়েদের জন্য নিরাপদ নাগরিকত্ব’ (মেজনিন) কর্মসূচির উদ্যোগে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে বাল্য বিবাহ ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধে একটি কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাজশাহী জেলা প্রশাসক জনাব মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী এ সব কথা বলেন।
কর্মশালায় বক্তারা বলেন, সচেতনতার মাধ্যমে বাল্য বিবাহ ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধ করা সম্ভব। সহ¯্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ৮টির মধ্যে ৬টি অর্জনের ক্ষেত্রেই বাল্যবিয়ে একটি অন্যতম বাধা। বাল্যবিয়ের কারণে ছেলে-মেয়ে উভয় শিশুরই মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়। এর পরিণতিতে শুধু শিশু, অল্পবয়সী নারী নয় বরং ক্ষতিগ্রস্ত হয় পুরো পরিবার। বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে কাজী, ইমাম, জেলা রেজিস্ট্রার, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিচারক, নোটারী পাবলিক, নাগরিক সমাজসহ সকলকে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
মুল প্রবন্ধে বলা হয়, বাংলাদেশে বাল্যবিয়ের হার ভয়াবহ, যা সমগ্র পৃথিবীতে চতুর্থ ও এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ স্থানে রয়েছে। জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফের ‘ইমপ্রুভিং চিলড্রেনস লাইভস, ট্রান্সফরমিং দ্য ফিউচার’ শীর্ষক প্রতিবেদন থেকে জানা যায় বাংলাদেশে প্রতি তিনটি বিয়ের দু’টিতেই কনের বিয়ের বয়স থাকে ১৮ বছর বা প্রাপ্তবয়সের নিচে।
প্রতি পাঁচজন মেয়ের একজনের বিয়ে হয় ১৫ বছরের আগে যা প্রায় ১৮ শতাংশ। দেশের ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী কিশোরীদের ২৯ শতাংশ বর্তমানে বিবাহিত। বাংলাদেশে ৮০ শতাংশ গরীব পরিবারের মধ্যে বাল্যবিয়ে হয়, ধনীদের মধ্যে যা ৫৩ শতাংশ।
বাল্যবিয়ে নারীর স্বাস্থ্য, ক্ষমতায়ন, সিদ্ধান্ত গ্রহণ, অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বিশেষত অপরিণত গর্ভধারণ, প্রজনন স্বাস্থ্য, মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর ঝুঁকি, ক্যান্সার ঝুঁকি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ঝরে পড়ার হার বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ এই ক্ষতিকর সামাজিক প্রথা।
যে কিশোরীকে পরিপূর্ণতা আসার আগেই বাল্যবিয়ের শিকার হতে হয়, তার শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য বিরাট হুমকির সম্মুখীন হয়। বাল্যবিয়ের শিকার কিশোরীদের শতকরা ২০ ভাগ ১৫ বছর বয়সের আগেই মা হয়। বাল্যবিয়ের কারণে শতকরা ৪৫ ভাগ কম ওজন শিশুর জন্ম দিচ্ছে। এই অপরিণত মায়েরা সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে শতকরা ৫ জন মৃত্যুঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছেন।
এ কর্মশালায় সরকারী কর্মকর্তা, কাজী, ইমাম, শিক্ষক, কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ, নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক, নারী আন্দোলনের নেতৃবৃন্দসহ প্রায় ৭০ জন উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, বাল্য বিবাহ ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধে রাজশাহী জেলার ২০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ সারাদেশে ১৩টি জেলার ৪০৫টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি শিক্ষক, অভিভাবক, স্কুল ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য ও কমিউনিটির সদস্যদের ঐক্যবদ্ধ করে ব্র্যাকের উদ্যোগে মেয়েদের জন্য নিরাপদ নাগরিকত্ব (মেজনিন) কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে।
এ সময় কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন, মেজনিন কর্মসূচির সিনিয়র সেক্টর স্পেশালিষ্ট মীর সামসুল আলম।
কর্মশালায় আলোচনা করেন, জেলা রেজিষ্ট্রার মীর মাহবুব মেহেদী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, রাজশাহী বিভাগের উপ-পরিচালক মো. আব্দুস শাকুর, জেলা ব্র্যাক প্রতিনিধি এ কে এম জাহেদুল ইসলাম, যৌন হয়রানি নির্মূলকরণ নেটওয়ার্কের আহ্বায়ক হাসান মিল্লাত, ব্লাস্টের জেলা সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট আব্দুস সামাদ, সমাজসেবক ও নেটওয়ার্ক সদস্য সাদরুল ইসলাম, এছাড়াও নিকাহ্ রেজিস্ট্রারদের মধ্যে খয়বর হোসেন, জহুরুল ইসলাম, মো. নূরুল ইসলাম, মো. দুররুল হুদা, নাজমুল হুসাইন, মোহাম্মদ আলী, পেশ ইমাম মো. নাজমুল ইসলাম, মেজনিন কর্মসূচির রেজওয়ানা আফরোজ প্রমুখ।
মন্তব্য চালু নেই