৫ মিনিটেই চিরতরে তেলাপোকা দূর করার পদ্ধতি!
রান্নাঘরের ছোট কৌটা, চালের ড্রামের নিচে, ডিস সেলফের ফাঁক-ফোঁকড়ে, বেসিনের সিঙ্কে তেলাপোকার রাজত্ব। তাদের স্বেচ্ছাচারী চলন বলনে আপনার কাজ করা দায়। খাবার নষ্ট থেকে শুরু করে নোংরা আর গন্ধযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টিতে তারা খুবই পারদর্শী।
শোবার ঘরে খাটের নিচে, কাপড়ের আলমারি সবখানে তেলাপোকার উপদ্রব। অন্ধকার আর খাবার যেখানে মিলবে, সেখানেই থাকবে এই তেলাপোকা। সর্দি বা হাঁপানি জনিত রোগ সৃষ্টিতেও তেলাপোকাকে দায়ি করা হয়। তাই আপনার নিরাপত্তা বজায় রাখতে দ্রুত ঘর থেকে তেলাপোকা বিতাড়িত করুন। আর এই কাজে আপনার সঙ্গী হবে বেকিং সোডা!
তেলাপোকা মারার মূলনীতি!
তেলাপোকাদের নির্মূল করাটা যে বেশ দুরূহ তা বিজ্ঞানীরাও স্বীকার করেন। এমনকি বলা হয়ে থাকে তারা পারমাণবিক বিস্ফোরণের মাঝেও টিকে যাবে বহাল তবিয়তে। চিন্তা করে দেখুন তো, এত যে স্প্রে করে করে তেলাপোকা মারছেন তার পরেও এত তেলাপোকা আসছে কোথা থেকে ? একটা মেয়ে তেলাপোকা একবারে ৪০টা করে ডিম দিতে পারে।
একটা তেলাপোকা মরলে আরো ৪০ টা তার জায়গা পুরন করবে। এই দুষ্টচক্র শেষ করতে কি করতে হবে জানেন? এমন ব্যবস্থা করতে হবে যে বড় তেলাপোকার পাশাপাশি বাচ্চাগুলোও মারা পড়ে। এই মূলনীতি থেকেই তৈরি করতে পারেন বোরিক এসিড বা বেকিং সোডার বিষ।
কি কি লাগবেঃ
– তিন চা চামচ বেকিং সোডা
– তিন চা চামচ বোরিক এসিড
– পানি
– চিনি
যা করতে হবেঃ
বোরিক এসিড পেস্ট- বোরিক এসিডকে অনেক আগে থেকেই কীটনাশক হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে আসছে। কিন্তু মানুষের জন্য এটা ক্ষতিকর কোনো পদার্থ নয়। এটা তৈরি করতে হলে যা যা করতে হবে
– তিন টেবিল চামচ বোরিক এসিডের সাথে সমপরিমাণ চিনি এবং পানি মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন।
– বাসার যেসব জায়গায় তেলাপোকার উপদ্রব বেশি (কিচেন, বাথরুম, স্টোরেজ) সেখানে এই পেস্ট প্রয়োগ করুন।
এই পেস্টে চিনি আছে ফলে তেলাপোকা আগ্রহ করে খাবে। খাবার পর এই বোরিক এসিডের প্রভাবে তেলাপোকার শরীর পানিশূন্য হয়ে পড়বে এবং সে ধীরে ধীরে মারা যাবে। শুধু তাই নয়, এই পেস্ট তার শরীরে লেগে যাবে। সে এটাকে বয়ে নিয়ে যাবে নিজের বাসায়, খাওয়াবে নিজের বাচ্চাকাচ্চাকে ফলে সেগুলোও মারা যাবে। ভালো ফলাফল পেতে পর পর কিছুদিন ব্যবহার করুন। বাড়ির ত্রিসীমানায় তেলাপোকা থাকবে না।
বেকিং সোডা পেস্ট- বেকিং সোডা (বেকিং পাউডার নয় কিন্তু) ঘরোয়া অনেক কাজে ব্যবহৃত হয় এবং এটা তেমনি আরেক ব্যবহার। যেভাবে বোরিক এসিডের পেস্ট তৈরি করেছিলেন ঠিক সেভাবেই সমপরিমাণ বেকিং সোডা, চিনি এবং পানি মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন এবং বাড়ির আনাচে কানাচে প্রয়োগ করুন। বোরিক এসিড পেস্টের মতই একই উপকার পাবেন। তবে সাধারণ রাসায়নিক স্প্রে এর মত দ্রুত কাজ করবে না। একটু ধীরেসুস্থে কাজ করলেও অনেক লাভ হবে।
বেকিং সোডা ও বেকিং পাউডারের মূল উপাদান একই, সোডিয়াম বাই কার্বনেট। তবে বেকিং পাউডারে আরও কিছু পদার্থ মেশানো হয়ে থাকে। খুব সহজ ভাবে বললে বেকিং পাউডারের চাইতে বেকিং সোডা বেশি সক্রিয় বা কার্যকরী। বেকিং পাউডার দিয়েও এই বিষ তৈরি করা যাবে। তবে প্রয়োগ করতে হবে বারবার, আর একটু দীর্ঘ সময় লাগবে কাজ হতে
এছাড়াও আরও কিছু কাজ করলে তেলাপোকার উপদ্রব মোটামুটি দূর করা যাবেঃ
তেজপাতা
তেজপাতার গন্ধ তেলাপোকা সহ্য করতে পারে না। ফলে যেখানে তেজপাতা থাকে সেখানে তেলাপোকা থাকে না। তাই তেলাপোকার আনাগোনা যেখানে বেশি সেখানে তেজপাতা ছিঁড়ে ফেলে রাখুন। বাড়ি থেকে তেলাপোকা এক শ’ শতাংশ বিদায় হবে।
অ্যামোনিয়া মিশ্রণ
পানি আর অ্যামোনিয়ার মিশ্রণ তেলাপোকা তাড়ানোয় অত্যন্ত উপযোগী। এক বালতি পানিতে ২ কাপ অ্যামোনিয়া গুলে নিন। এই পানি দিয়ে রান্নাঘর ধুইয়ে নিন। অ্যামোনিয়ার গন্ধে তেলাপোকা পালাবে।
সাবান পানি
গায়ে মাখার সাবান ও পানি মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করুন। ঘরের কোনায় কোনায় এই পানি স্প্রে করে দিন। ব্যস তেলাপোকা বধ।
বোরিক অ্যাসিড ও ময়দা
ময়দা ও বোরিক অ্যাসিড মেখে একটা ডো তৈরি করে নিন। এর ছোট ছোট লেচি কেটে ঘরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে রাখুন। এই লেচিতে মুখ দিলেই অক্কা পাবে তেলাপোকা।
গোলমরিচ, পেঁয়াজ, রসুন
উপকরণ গুলি শুনে ভাববেন না কিছু রান্না করতে বলব। তবে অরাসায়নিক পদ্ধতিতে তেলাপোকা মারার এটি সেরা উপায়। এই তিন উপকরণ একসঙ্গে পেস্ট বানিয়ে নিন। এবার এক লিটার পানিতে এই বাটাটা দিয়ে ভাল করে গুলে নিন। ঘরের আনাচে কানাচেতে এই পানি স্প্রে করলেও নিশ্চিহ্ন হবে আরশোলার বংশ।
শশা
একটি টিনের কৌটয় কাটা শশা ভরে মুখ খুলে রেখে দিন। তেলাপোকা চলে যাবে। তবে দিনের পর দিন রাখবেন না। তাতে মাছির উপদ্রব শুরু হবে।
লিস্টারিন, পানি ও প্লেট ধোয়ার তরল সাবান
এই তিনটি উপকরণ পানেত মিশিয়ে ঘরের চারিদিকে স্প্রে করে দিন। কাজ দেবে।
গুঁড়ো সাবান
ওয়াশিং মেশিনের জন্য গুঁড়ো সাবানে ব্লিচ থাকে যা আরশোলা তাড়াতে সাহায্য করে।
অর্ধেক পানি ভর্তি কাঁচের শিশি
ঘরের কোন দেখে কাঁচের জারে অর্ধেক পানি ভরে রেখে দিন। তেলাপোকা খালি ভেবে এর ভিতরে ঢুকলেই পানিতে আটকা পড়বে। আর উড়তে পারবে না।
মন্তব্য চালু নেই