“৫ বছরের একটা বাচ্চা মেয়েকে কেউ কীভাবে রেইপ করতে পারে? “
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানিয়েছেন নিজের সমস্যার কথা।
“৫ বছরের একটা বাচ্চা মেয়েকে কেউ কিভাবে রেইপ করে? আপু, আপনার লিখা নিয়মিত পড়ি। সব সময় আপনি অন্যদের সাহায্য করেন এবং করতে চান, আমার খুব ভাল লাগে! তবে আজ আমি সাহায্য চাইছি!
আমার বয়স ১৯,তেমন একটা মিশি না মেয়েদের সাথে। গোটাকয়েক মেয়ে বন্ধু আছে যারা খুবই ঘনিষ্ঠ। এর বাইরে হাই হ্যালো ছাড়া কিছুই কথা হয় না! কিন্তু এই হাই হ্যালোর মাঝেই একজনকে খুব ভাল লেগে যায়! অনেক কথা বলতে শুরু করি! একে একে ওর জীবনের পুরোনো পৃষ্ঠা গুলো উলটে দেখি!
অনেক কষ্ট আর নিরবতার একটা অতীত তার। কিন্তু এই মৌন চিৎকার আমার কানে বাজতে থাকে! ওকে ভালবেসে ফেলি। সেও এক সময় বলে দেয় সেও বাসে। সবই ঠিক ঠাক। বাসার সব প্রবলেমও আমরা একে অপরকে বলি! তবে একদিন সে আমাকে বলে সে এমন কিছু বলবে যা আগে বলে নি। কাউকে বলেনি।
“I was raped when I was 5 years old” এই মেসেজটা ও আমাকে পাঠায়। আমার প্রতিক্রিয়া আপনি বুঝে নিলেই ভাল হয়। বেশি কিছু জিজ্ঞেস করতে পারি নি! বুঝতেই তো পারছেন! আর সে শুধু এতটুকু বলে যে সে এই ব্যাপারটা কাউকে বলে নি আমাকে ছাড়া! আর লোকটা তাদের গ্রামের বাড়ি থেকে এসেছিল,এখন দেশের বাইরে থাকে। মাঝে মধ্যেই এই ব্যাপারটা আসে এখন আমাদের মাঝে।
এই গুলো লিখতে আমার কঈ পরিমাণ কষ্ট হচ্ছে তা আশা করি বুঝতে পারছেন! আমিও আর কিছু বলিনি। এখন নিরুপায় হয়ে আপনাকে লিখছি। এই ব্যাপারটা অনেক গুলো সমস্যার শুরু করেছে। সে ভাবতে শুরু করেছে আমি ওকে ডিসার্ভ করি না! এইসব হাবি জাবি বলে। আর মাঝে মাঝে রাতে তার সেই ঘটনা মনে পড়ে, ফোন করে কাঁদে শুধু তখন। আগে একা কাঁদত, এখন আমাকে বলে।
কঈ করব আপু একটু বলবেন? অনেক দ্বিধায় আছি! ৫ বছর-এর একটা বাচ্চা মেয়েকে রেপ? কঈভাবে? আর সে প্রায়ই বলে তাকে তখন মেরে ফেললে সবচেয়ে ভাল হতো। আমি কঈ বলব উত্তরে?? এই সব এর কি কোনো উত্তর আদৌ হয়! আমি জানি আমি বয়সে অনেক ছোট, তবে আমি ওকে আসলেই ভালবাসি! সাহায্য করলে খুশি হব! এই লিখাটি নিয়ে কোনো পোস্ট করতে চাইলে করতে পারেন তবে নাম উল্লেখ না করলে খুশি হব। ধন্যবাদ পড়ার জন্য!”
পরামর্শ:
তোমার সমস্যাটি আমি খুব ভালোই বুঝতে পারছি ভাইয়া। কিন্তু তার চাইতে অনেক বেশি অনুভব করতে পারছি মেয়েটির কষ্ট। আমি জানি তুমি খুব কষ্ট পাচ্ছো। কিন্তু এখন মেয়েতির কষ্ট দূর করাই সবচাইতে বেশি জরুরী। মেয়েটির মানসিক অবস্থার উন্নতি হতে থাকলে তোমাদের সম্পর্কেরও উন্নতি হবে। আর সেটা হলে তোমার মানসিক অবস্থাও ঠিক হয়ে যাবে।
হ্যাঁ, তোমার বয়স অনেক কম। কিন্ত বয়সের তুলনায় তোমাকে যথেষ্ট ম্যাচিউর মনে হচ্ছে। তাই একটি কথা তোমাকে সরাসরি বলছি ভাইয়া। তুমি ভালো করে ভেবে দেখো যে মেয়েটির সাথে সম্পর্ক শেষ পর্যন্ত চালিয়ে যেতে পারবে কিনা। কারন এমনিতেই মেয়েটি অত্যন্ত দুঃখী, জীবনে অনেক বড় আঘাত সয়েছে। যদি তোমার সাথে সম্পর্কটি ভেঙে যায়, মেয়েটি তাহলে একেবারেই ভেঙে পড়বে। তাই নিজে নিশ্চিত হয়ে তবেই পা বাড়াও।
আমার মনে হয় মেয়েটির পেশাদার হেল্প দরকার। তাকে একজন পেশাদার কাউন্সিলারের কাছে নিয়ে গেলে খুব ভালো হবে। ভালো হয় কাউন্সিলার একজন নারী হলে। মেয়েটিকে সান্ত্বনা দেবার আগে তোমার নিজের একটি জিনিস বুঝতে হবে। আর সেটা হলো একজন নারীর সম্মান বা যোগ্যতা তার শরীর দিয়ে নির্ধারিত হয় না। মেয়েটিকে রেইপ করা হয়েছে মানে মেয়েটি খারাপ বা মেয়েটির কোন সম্মান নেই, এটা মনে করা রীতিমত পাপ। যে রেইপ করেছে, সমস্ত লজ্জা তার। মেয়েটির কোন কলংক নেই। এবং সত্যি বলতে কী, এই ব্যাপারটির সাথে ভালবাসারও কোন সম্পর্ক নেই। একটা জানোয়ার ছোট্ট একটা শিশুকে রেইপ করেছে বলেই মেয়েটি তাতে অপবিত্র হয়ে যায় না, অচ্ছুৎ হয়ে যায় না। আর এর কারণে জীবন শেষ করে ফেলতে হবে, এটা ভাবা চরম বোকামি।
তুমি বুঝতে পারছো ভাইয়া যে আপু কী বলছি? যদি বুঝতে পেরে থাকো ভাইয়া, তাহলে এই কথাগুলোই মেয়েটিকে বোঝাবে। তাকে বোঝাবে যে জীবনটা কত সুন্দর, যে অতীত চলে গিয়েছে তাকে দুঃস্বপ্ন ভেবে ভুলে যেতে শেখাবে। মেয়েটি অন্যায়ভাবে নিজেকে কষ্ট দিচ্ছে, এই কষ্ট থেকে তাকে বের করে আনবে এভাবে যে এটা কোন বিষয়ই না তোমার কাছে। ব্যাপারটাকে যত গুরুত্ব দেবে, তত সেটা বাড়বে। তাই ভুলেও গুরুত্ব দেবে না।প্রিয়.কম
মন্তব্য চালু নেই