৫ জানুয়ারি ঘিরে ফের উত্তপ্ত হচ্ছে রাজনীতি
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তৃতীয় বর্ষপূর্তির দিন ৫ জানুয়ারি। ২০১৪ সালের এ দিনে একতরফা নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পেয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতাসীন হয় আওয়ামী লীগ।
তা্ই গত দুই বছর ধরে এ দিনটিকে ঘিরে উত্তপ্ত হয় রাজনীতির মাঠ। এ দিনটি ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আর বিএনপি পালন করে আসছে ‘গণতন্ত্রের হত্যা দিবস’ হিসেবে। তাই ৫ জানুয়ারি এখন দেশের রাজনীতিতে ‘খুবই গুরুত্বপূর্ণ’ একটি দিন।
এ দিনটিকে ঘিরে নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহেই মাঠের রাজনীতিতে ফের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তৃতীয় বর্ষপূর্তির দিন ৫ জানুয়ারিকে নিয়ে রাজধানীসহ সারা দেশে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে দল দুটির পক্ষ থেকে।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের বিষয়ে রাষ্ট্রপতি যখন রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নিচ্ছেন ঠিক সেই সময় এই পাল্টাপাল্টি সমাবেশের গুরুত্ব বেড়েছে রাজনৈতিক অঙ্গনে।
বিশ্লেষকদের মতে, ৫ জানুয়ারিকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কর্মসূচি যদিও ‘রুটিন ওয়ার্ক’ তারপরও দেশের বৃহৎ দুই রাজনৈতিক দলের মুখোমুখি সভা-সমাবেশের মধ্য দিয়ে চাঙ্গা হতে পারে রাজপথের রাজনীতি। ২০১৪-এর ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বর্ষপূতি উপলক্ষে পৃথক কর্মসূচি নিয়ে বিগত বছরের মতো এবারও মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ইতোমধ্যে দল দুটি কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে। ওইদিন দেশব্যাপী ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ উদ্যাপনের প্রস্তুতি নিয়েছে আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে একই দিনে দেশব্যাপী ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ পালনের কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি।
৫ জানুয়ারির ওই নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটসহ বেশ কিছু রাজনৈতিক দল বর্জন করে। অপরদিকে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোট, জাতীয় পার্টিসহ নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ১২টি দল ওই নির্বাচনে অংশ নেয়।
ভোটগ্রহণের আগেই দেশের ৩০০ আসনের ১৫৩টি আসনের সংসদ সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। ৫ জানুয়ারি ভোটের দিন ১৪৭ আসনে ভোট হয়। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ।
অপরদিকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট নির্বাচন বয়কট করে নির্বাচন বানচালের দাবিতে নির্বাচনের আগের তিন মাস এবং নির্বাচনের পরে কয়েক মাস সারা দেশে একযোগে আন্দোলন শুরু করে। নির্বাচনকেন্দ্রিক দেশি-বিদেশি নানা চাপের মুখে পড়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তার পরও ‘সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার’ যুক্তিতে নির্বাচনবিরোধীদের মোকাবিলা করে দেশ পরিচালনায় মনোযোগী হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বিএনপির দাবি, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশে গণতন্ত্র হত্যা করা হয়েছে। যে কারণে দশম সংসদ নির্বাচনের প্রথম বর্ষপূর্তির দিন অর্থাৎ ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি থেকে দিবসটিকে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে দলটি।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের দাবি, দেশের সংবিধান সমুন্নত রাখতে ৫ জানুয়ারির দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিকল্প ছিল না। যদিও বিএনপিসহ দেশি-বিদেশি নানা চক্র চেষ্টা করেছিল ধ্বংসাত্মক পদ্ধতিতে নির্বাচন বানচাল করতে। কিন্তু বিরোধীদের সেই চেষ্টা সফল হয়নি, শত বিরোধিতা সত্ত্বেও গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে। যে কারণে দিবসটি ২০১৫ সাল থেকে ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, ওইদিন দেশের সব জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে দলটির পক্ষ থেকে সমাবেশ করা হবে। এ ছাড়া রাজধানী ঢাকায় দুটি বৃহৎ সমাবেশ করা হবে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের আয়োজনে ৫ জানুয়ারি ধানম-ির রাসেল স্কয়ারে এবং ঢাকা মহানগর দণি আওয়ামী লীগের আয়োজনে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে সমাবেশ করা হবে। দেশের সব জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগ এবং দলটির সব সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনকেও ৫ জানুয়ারির দিন অনুরূপ কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানান ওবায়দুল কাদের।
৫ জানুয়ারির সমাবেশ সফল করতে ব্যাপক প্রস্ততি হাতে নিয়েছে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। এ বিষয়ে দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ বলেন, ৫ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে গণতন্ত্রের বিজয় উদ্যাপনের লক্ষ্যে শুক্রবার (৩০ ডিসেম্বর) বর্ধিতসভা ডাকা হয়েছে। এই সভায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের অন্তর্গত সব থানা, ওয়ার্ড, ইউনিয়নের শীর্ষ নেতারা থাকবেন। আশা করছি, একটা স্মরণীয় সমাবেশ করতে পারব।
একই বিষয়ে ঢাকা উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান বলেন, ৫ জানুয়ারিতে রাসেল স্কয়ারে সমাবেশের পাশাপাশি ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের অন্তর্গত সব নির্বাচনী এলাকায়ও কর্মসূচি পালনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
বিএনপি সূত্র জানায়, আগামী ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচনের তৃতীয় বর্ষপূর্তির দিনটি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ পালনে ঢাকার বাইরে সব জেলা-উপজেলায় কালো পতাকা মিছিল আর রাজধানীতে সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। ৭ জানুয়ারি ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করবে দলটি।
এ বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, ৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র হত্যা দিবস উপলক্ষে ঢাকা বাদে সারা দেশের সব জেলা-উপজেলায় কালো পতাকা মিছিল এবং কালো ব্যাজ ধারণ করবেন নেতাকর্মীরা। এ ছাড়া এ উপলক্ষে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৭ জানুয়ারি সমাবেশ করবে বিএনপি। সমাবেশের অনুমতি চেয়ে আমরা ইতোমধ্যে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছি এবং প্রক্রিয়া শুরু করেছি।
মন্তব্য চালু নেই