৫১ লাখের লটারি জেতার পর বাড়িতে কালোবাজারিদের অদ্ভূত কাণ্ড
সারা ভারত যখন নগদ টাকার সমস্যায় জর্জরিত, তখন রাতারাতি লটারি জিতে অন্য সমস্যায় পড়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মালদার এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। সিকিম লটারির প্রথম পুরস্কার ৫১ লাখ টাকা জেতার পরই ওই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর বাড়িতে রাতারাতি লাইন পড়ে গেছে কালো টাকার কালোবাজারিদের।
কেউ কেউ প্রস্তাব দিয়েছেন, দ্বিগুণ দাম দিয়ে কিনে নেবেন ওই লটারির টিকিটটি। আবার কেউ তিনগুণ দাম দিতেও পিছুপা নন। কিন্তু লটারিতে জেতা সাদা টাকাকে বিপুল কালো টাকার বিনিময়ে হস্তান্তর না করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ওই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ভীমপ্রসাদ সাহা (৫০)।
অবিবাহিত ভীমপ্রসাদ রাতারাতি ভিআইপি হয়ে গেছেন তার পরিবারে এবং পাড়ায়। তিনি বলেন, আমি আমার পরিবারের সদস্যদের জন্য ওই টাকা খরচ করতে চাই। ইচ্ছা আছে গরিব মানুষের জন্য কিছু করার। শনিবার বিকেলে সিকিম রাজ্য লটারির টিকিট কিনেছিলেন মালদা শহরের বিনয় সরকার রোডের বেলতলা এলাকার বাসিন্দা ভীমপ্রসাদ সাহা।
২১২০ টাকা দিয়ে লটারি বিক্রেতা প্রভাস দাসের কাছ থেকে সিকিম রাজ্য লটারির বেশ কয়েকটি টিকিট কেনেন ভীমপ্রসাদ। খেলা ছিল ১২ নভেম্বর বিকেলে।
সন্ধ্যায় ভীমপ্রসাদের কাছে ছুটে যান লটারি বিক্রেতা প্রভাস দাস। তিনি জানিয়ে দেন, বিরাট অঙ্কের প্রথম পুরস্কার পেয়েছেন। খবরটা শুনে প্রথমে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গিয়েছিলেন লটারি বিজেতা। নানা মহল থেকে খবর পাচ্ছিলেন নোট বাতিলের পর রিজার্ভ ব্যাংকের আইন অনুযায়ী ওই টাকা খরচ করতে পারবেন না তিনি! দুশ্চিন্তায় ভীমপ্রসাদ ছুটে বেড়ান কখনো লটারির ডিস্ট্রিবিউটরদের কাছে, কখনো প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছে।
শেষ পর্যন্ত জানতে পারেন, লটারিতে পাওয়া ৫১ লাখ টাকার পুরোটাই সাদা টাকা। কারণ, ওই টাকা থেকে আয়কর কেটে নেয়ার পরই তার অ্যাকাউন্টে জমা পড়বে পুরস্কারের বাকি অর্থ। ফলে ওই টাকা নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। রাত বাড়তে না বাড়তেই দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে লটারিতে ৫১ লাখ টাকা জেতার খবর।
ভীমপ্রসাদ বলেন, কখনো ফোনে, কখনো বা কারও মাধ্যমে আমার কাছে ইতিমধ্যেই ওই লটারির টিকিট দ্বিগুণ টাকার বিনিময়ে বিক্রির প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। ৫১ লাখ টাকা থেকে মোটা টাকা আয়কর হিসেবে কেটে নেবে সরকার। বাকি টাকাটা আমি পাব। কিন্তু তাতে আমার কোনো দুঃখ নেই। আমি যা পেয়েছি, তার জন্য আমার ভাগ্যকেই ধন্যবাদ জানাচ্ছি। কোনোমতেই আমি কালো টাকার বিনিময়ে আমার লটারির টিকিট বিক্রি করব না।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ওই লটারির টিকিটটি সদর মহকুমা শাসকের দপ্তরে নিয়ে গিয়ে একটি প্রশংসাপত্র নিতে হবে পুরস্কারপ্রাপক ভীমপ্রসাদ সাহাকে। তারপরই নিয়ম অনুযায়ী পুরস্কার মূল্যের ওপর আয়কর কেটে সিকিম সরকার তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা করবে বাকি টাকা।
জেলাশাসক শরদ দ্বিবেদী জানিয়েছেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে কেউ লটারির টাকা পেলে যতদূর জানি, সেটা টাকা হিসেবেই গণ্য হবে। আইন অনুযায়ী ওই ব্যক্তি টাকা পাবেন। -আজকাল
মন্তব্য চালু নেই