৫টি লক্ষণ বলছে আপনি নিজেকে ভালবাসেন না
‘স্বার্থপরতা’ শব্দটা ছোটবেলা থেকে এমনভাবে আমাদের মস্তিষ্কে প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হয় যে, নিজের সামান্য যত্ন নেওয়াকেও আমরা অন্যায় মনে করি। ক্লাসে যে মেয়েটি সামনের বেঞ্চে বসে এবং কেউ যাতে সেই জায়গা না নিতে পারে এজন্য সবার আগে স্কুলে আসে আমরা তাকে বলি ‘স্বার্থপর’। ইন্টারভিউতে নিজের যোগ্যতা অনুযায়ী বেতন চাওয়াকে মনে করা হয় অভদ্রতা। কেউ নিজের মত থাকতে পছন্দ করে? আমরা তাকে বলি ‘আত্মকেন্দ্রিক!
এভাবে সবসময়ই নিজের জন্য কিছু চাওয়া তা এক টুকরো সময় হোক আর হোক অর্থ, সম্মান, মর্যাদা সব কিছুকেই আখ্যা দেওয়া নেতিবাচক বৈশিষ্ট্য হিসেবে। আপনি হয়ত ভাবছেন, অপরের কথা ভাবাতেই তো সমাজের মঙ্গল। ভুল। প্রত্যেকটি মানুষ নিজের সর্বোচ্চ বিকাশ ঘটাতে পারে নিজেই। নিজের সৃজণশীলতাকে সম্পূর্ণ রূপে প্রস্ফুটিত করতে তাকে নিজেকে চিনতে হবে, বুঝে নিতে হবে কোন সুন্দরের চর্চা করতে সে সবচেয়ে বেশী পারদর্শী। আর এজন্য আত্মমনোযোগ খুবই জরুরি। জরুরি আত্মবিশ্লেষণ।
যেভাবে বুঝবেন নিজেকে পর্যাপ্ত গুরুত্ব দিচ্ছেন না আপনি-
আপনি আপনার মৌলিক প্রয়োজনকে অবহেলা করেন
সময়মত খাওয়া, পর্যাপ্ত ঘুম সবই আপনার মৌলিক চাহিদা। সকালের নাস্তা না খেতে খেতে হয়ত এটা আপনার নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। আপনি ঠিকমত স্বাস্থ্যের যত্ন নেন না। ফলে প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়েন।
খেয়াল করুন, সময় তাহলে কোথায় দিচ্ছেন আপনি! আপনি কি অন্যদের কাজ করে করে নিজেকে সময় দিতে পারছেন না? একদিনে ২৪ হন্টা সময়। রাতে ঘুমানোর আগে কাগজে লিখুন সারাদিন আপনি কী কী করেছেন। তাহলে খুব সহজেই বেরিয়ে আসবে কতটা সময় কোন কাজে ব্যয় হয়েছে। এর মাঝে অনেক সময়ই হয়ত অযথা নষ্ট হয়েছে। সেগুলোকে নিজের প্রয়োজনে ব্যয় করুন।
যন্ত্রের মত জীবনযাপন
আমাদেরকে সবসময় বলা হয়, জীবন একটি প্রতিযোগিতা। এই প্রতিযোগিতায় সবার আগে যেতেই হবে। কিন্তু সেটা কি সম্ভব। ক্লাসে ৫০ জন শিক্ষার্থীর মাঝে প্রথম হওয়া সহজ। কিন্তু বিশ্বের ৭০০ কোটি মানুষের মাঝে এক বাক্যে চেনার মত মানুষ হওয়া খুবই কঠিন। সেটা কি চাইলেই আপনি আমি হতে পারব? তাহলে কেন আমরা ছুটছি? কিসের পেছনে ছুটছি? এর চেয়ে বরং এক মূহুর্ত দাঁড়িয়ে যদি একটু তাকিয়ে দেখি পৃথিবীটা কি ক্ষতি বলুন?
অন্যরা আমাদের দৌড়াতে বলছে, আমরাও দৌড়াচ্ছি। নজর দিচ্ছি না নিজের দিকে। এমনকি রোবটেরও নিজেকে রিচার্জ করার প্রয়োজন পড়ে। তাই একটু থামুন। নিজের আবেগ, ভাল লাগা, মন্দ লাগাকে সময় দিন।
আপনি সবসময় অন্যের জন্য কাজ করেন
মানুষকে সাহায্য করা দোষের জিছু নয়। অন্যের জন্য কাজ করা যা কিনা সম্পর্কের গভীরতা বাড়ায়, ঘনিষ্ঠতা তৈরি করে তা অবশ্যই আপনার জীবনে ইতিবাচক জিনিস যোগ করে। আর এভাবেই সমাজ একতাবদ্ধ থাকে।
কিন্তু দেওয়ার একটা সীমা অবশ্যই থাকা উচিৎ। নাহলে আপনার উদারতা অন্যের জন্য সুযোগ হয়ে দাঁড়াতে পারে। আপনি যখন দিতে থাকবেন মানুষও অনবরত নিতে থাকবে। আপনি নিজেই হয়ত খেয়াল করবেন না, কখন অন্যের প্রয়োজনে নিজেকে সম্পূর্ণ বিনিয়োগ করে বসে আছেন। একটাই জীবন। এই ভুল করবেন না। নিজেকে সময় দিন, নিজেকে দিন। অন্যকে নয়।
আপনি বন্ধু এবং পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন
সর্বোশেষ কবে আপনি সেইসব মানুষের সাথে সময় কাটিয়েছেন যাদেরকে আপনি আসলেই ভালবাসেন? আপনি হয়ত সারাদিন অফিসে কাজ করেন। নিজের জন্য নয়, অফিসের জন্য। আপনি হয়ত সারাদিন ব্যবসার কাজে ব্যস্ত থাকেন। ভবিষ্যত আনন্দের জন্য পরিশ্রম করেন আজকে। ভবিষ্যত কে দেখেছে? কে জানে কাল কি হবে? তাহলে এই কাজটিও দৃশ্যত নিজের জন্য করা মনে হলেও আসলে নিজের জন্য করা নয়।
সেই কাজ করুন যা আপনাকে ভাল রাখে। আনন্দ দেয়। সেই মানুষদের সাথে সময় কাটান যাদের সংস্পর্শ আপনাকে প্রশান্তি দেয়। সম্পর্কগুলো আমাদের সঞ্জীবনী শক্তি। বিচ্ছিন্নতাবোধ মানুষকে একা করে দেয়। তাই সম্পর্কের যত্ন নিন।
আপনি নিজেকে মিস করেন
দীর্ঘশ্বাস ফেলে প্রায়ই আমরা বলি, “ছেলেবেলাটা খুব ভাল ছিল।” “আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম” অনেকেরই প্রিয় গান এটা। মেঘলা দিনে জানালার পাশে বসে কোথায় যেন হারিয়ে যায় মন, কি যেন নেই জীবনে! এই হাহাকার বলছে, আপনি একসময়ের আপনাকে মিস করছেন।
জীবনে পরিবর্তন আসবেই। কিন্তু পরিবর্তনের চাপে নিজেকে হারিয়ে ফেলা মানে আপনি অন্য সবকিছুকে গুরুত্ব দিচ্ছেন শুধু নিজেকে দিচ্ছেন না। ক্যারিয়ারকে গুরুত্ব দিন, কিন্তু এর মাঝেও বের করে নিন নিজের শ্বাস নেওয়ার জায়গা। বিয়ের পর পরিবারকে সময় দিন, কিন্ত নিজের জায়গাটিও ধরে রাখুন।
ত্যাগ আমাদের শান্তি দেয়। অতিরিক্ত ত্যাগ তৈরি করে শুন্যতা, আত্মগ্লানি। আপনি হয়ত অন্যের কাছে মহৎ হতে চান। প্রশংসা পেতে ভালবাসেন। কিন্তু বেলা শেষে যখন দেখবেন, নিজের জন্য কিছুই করা হয় নি তখন কিভাবে ক্ষমা করবেন নিজেকে? নিজেকে ভালবাসুন।
মন্তব্য চালু নেই