৪ বছর প্রেম করার পর ছেলেটিকে বলতে বাধ্য হলাম…
চার বছর প্রেম করার পর ছেলেটিকে আমি বলতে বাধ্য হলাম চলো পালিয়ে বিয়ে করি কারণ আমার কোন গতি ছিল না। আমার পিঠ দেয়ালে ঠেকে গিয়েছিলো।
আমি কলেজে যাবার পথে প্রিন্স অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতো আমার দিকে। কিছুই বলতো না ছেলেটি। দেখতে প্রিন্সের মতই সুন্দর। কিছু দিন এভাবে যাওয়ার পর প্রিন্স আমাকে সরাসরি প্রপোজ করে বসে। প্রথম দিকে তাকে পাত্তা দেয়নি কিন্তু ছেলেটার সুমধুর কথাবার্তা আর মায়াবী চোখের চাহনিতে আমাকে তাকে ভালবাসতে বাধ্য করে। প্রিন্সের যাদুকারী প্রভাব আমাকে মন্ত্র মুগ্ধ করে রাখে। প্রিন্সকে ছাড়া এখন আমি কিছুই ভাবতে পারি না। কিন্তু তখনই সমস্যা বাধলো যখন আমার বাবা মা আমার জন্য বিয়ের পাত্র ঠিক করলো। পাত্র একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করে, নম্র ভদ্র এবং ঢাকাতে তাদের নিজেস্ব বাড়ি আছে। আমি কখনই বাবার বিরুদ্ধে কথা বলতে পারি না , প্রচণ্ড রাগী এবং বদমেজাজী আমার বাবা।
সূবর্নার বাবা কখনোই সুবর্নার অমঙ্গল চায়নি। তাদের গর্ভের ধন অনেক কষ্টে লালিত পালিত সন্তানকে কখনোই অসুখী দেখতে চায় না। সুবর্না এই বিয়েতে কিছুতেই রাজি না, সে ভালবাসে প্রিন্সকে তাকে ছাড়া কাউকে স্বামী বলে ভাবতে পারেনা। বুকে সাহস সঞ্চয় করে সুবর্না কথা বলে তার বাবা সাথে।
ছোট্ট একটি চাকরি করেন আমজাদ সাহেব শুক্রবার তাই ব্যালকনিতে চেয়ারে বসে পেপার পড়ছেন। চোখের উপরে কাগজ অথচ সে হারিয়ে গেছে তার অতীতে। তাদের প্রথম সন্তান সুবর্না। ছোট্ট একটি বাবু ছিল, সারা বাড়ি মাতিয়ে রাখত যেন একটি জীবন্ত খেলনা। সেই মেয়েটার প্রতি তার যে কি পরিমাণ ভালবাসা সে তাকে বুঝাতে পারেনা। সেই ছোট্টো বাবুটা কখন যে বড় হয়ে গেল সে টেরই পেলনা। আর কিছুদিন পর মেয়েটির বিয়ে, ভাবতেই বুকের ভিতর একটা চাপা কষ্ট অনুভব করেন আমজাদ সাহেব। ঠিক সেই সময় তার সামনে হাজির হয় সুবর্না।
– বাবা তুমি কি খুব ব্যস্ত
– নারে মা । তুই কি কিছু বলবি
– হ্যা বাবা তোমার সাথে কিছু কথা ছিল
– হ্যা বল মা তোর সাথে অনেক দিন কথা হয় না। তুই তো আমার সামনে আসতেই চাস না । আনেক বড় হয়ে গেছিস বুঝি মেয়েরটার বিয়ে হয়ে যাবে তাই মেয়ের সাথে মোলায়েম সুরে কথা বলে আমজাদ সাহেব – না মানে,,, তোমাকে মা কিছু বলেছে কিনা আমি জানি না। বাবা আমি একটি ছেলে কে ভালবাসি তাকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করতে চাই না।
– দেখ মা, বাবা মা কখনই সন্তানের অমঙ্গল চায় না। ছেলেটা ভাল, ব্যাংকে চাকরি করে ঢাকাতে বাড়ি আছে । আর তুই যে ছেলেটার কথা বললি সেই ছেলেটার কথা তোর মা আমাকে বলেছে। আমি সেই ছেলেটার সম্বন্ধে তোর থেকে অনেক ভালো জানি। তার চরিত্র ভালো না। তুই আমার মেয়ে তাই ঐ বাজে ছেলেটার সম্বন্ধে আলোচনা করতে চাই না শুধু এতটুকু বলি ঐ ছেলে কখনই তোকে বিয়ে করবে না শুধু…. কথাটা বলতে গিয়ে মুখে আটকে গেল কথাটা।
– কিন্তু বাবা…
– কোন কিন্তু , মিন্ত শোনতে চাই না আমি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি তোমাকে সেই সিদ্ধান্তই তোকে মানতে হবে।
এবার যেন আমজাদ সাহেব একটু রেগে গেলেন।
সুবর্না প্রিন্সকে ছাড়া কিছুই ভাবতে পারে না মা বাবার আদর, স্নেহ নির্মল ভালোবাসা তার কছে তুচ্ছ মনে হয় । যদি বিয়ে করতে হয় প্রিসকেই বিয়ে করবে আর কাউকে নয়।
মা বাবার স্বপ্নের সাধ কে চূরমার করে দিয়ে প্রিন্সের মোহে বাড়ি থেকে পালিয়েছে সুবর্না
কিন্তু সুবর্না জানে না প্রিন্স একজন সিরিয়াল রেপার। সুদর্শন চেহারা আর মিষ্টি মধুর কথার বানে কত সুবর্নার সর্বনাশ করেছে তার হিসেব নেই। আজ সেই সিরিয়াল রেপারের শিকার সুবর্না।
বিয়ের কথা বলে প্রিন্স নামের এই নর খাদকটা তাকে নিয়ে যায় কোন এক নির্জন বাড়িতে। বিয়ের প্রলভন দেখিয়ে স্ত্রীর মত ব্যবহার করে কিছু দিন। যখনই সুবর্না প্রিন্সের মতলবটা বুঝতে পারে ঠিক তখনই পালাক্রমে তারে ধর্ষণ করে সমাজের পঁচে যাওয়া শকুনেরা। সুবর্নার সুন্দর দেহটা ক্ষত বিক্ষত হয়ে যায় শকুনের থাবায়। তার বুকের গভীরে প্রিন্সকে নিয়ে সাজানো স্বপ্ন নিমেষেই ভেঙে খার খার হয়ে যায়।
সুবর্নার আজ মরে যেতে ইচ্ছা করে। জীবনের মায়ায় আনেকবার আত্মহত্যা করতে গিয়েও পারেনি। আর তার মা বাবাও পারেনি আনেক কষ্টে লালিত সন্তানকে ফিরিয়ে দিতে। সুবর্নার দিকে তাকালে আমজাদ সাহেবের বুকটা ভেঙে চৌচির হয়ে যায়। আমজাদ সাহেব পারে না সমাজের উচ্চ আসনে আসিন ছেলেদের বিরুদ্ধে কিছু করতে। তারা যে ধরা ছোঁয়ার বাইরে।
সুবর্না তার জীবনের সব কিছু হারিয়ে বুঝতে পারে ভালবাসার মোহে অন্ধ, তার প্রিয় মা বাবার কথা সে রাখেনি। সে কি পারবে বিবিশিখা ময় অতীত কে ভুলে সামনে এগিয়ে যেতে।
মন্তব্য চালু নেই