২০ মাইলজুড়ে ‘সাপের দ্বীপ’

সাপের দ্বীপে সাপের রাজ্য। দীর্ঘ ২০ মাইলের দীর্ঘ দীপজুড়ে কেবল সাপ আর সাপ। এক দুটি নয় চার চার হাজার সাপের বিশাল এক দল। দীপটিতে নিজেদের রাজ্য গড়ে তুলেছে।

দীপটিতে কোনো মানুষ নেই, নেই কোনো বসতি। দ্বীপের চারিপাশে শুধু সাপের বিচরণ। আর সে কারণেই দ্বীপটির নামকরণ করা হয়েছে সাপের দ্বীপ।

দ্বীপটিরর কেতাবি নামও রয়েছে। ‘লা দ্য কুইমাদ‍া গ্রানাদে’ নামে দ্বীপটি প্রায় ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ। দ্বীপটি অবস্থিত আমাজন সংলগ্ন ল্যাটিন আমেরিকার সবচেয়ে বড় দেশে ব্রাজিলের সাও পাওলো সমুদ্র উপকূলে।

সাও পাওলো উপকূলে সোনালী তীক্ষ্ম আকৃতির মাথা সদৃশ এই সাপের ‍বসবাস। বোথরোপস ইনসুলারিস নামের এই সাপ কেবল এ অঞ্চলেই বাস করে। সাধারণ বিষধর সাপের চেয়ে প্রায় ৫ গুণ বেশি। এই সাপ পৃথিবীর সবচেয়ে বিষধর সাপ হিসেবেও স্বীকৃত।

এরা আকাশে উড়ন্ত পাখিকে ছো মেরে বিষের সাহায্যে নিস্তেজ করে আহার মিটিয়ে থাকে। এদের বিষ এতোই ভয়ানক যে, মানুষের মাংসকে মুহূর্তে গলিয়ে ফেলতে পারে।

কথাগুলো রূপকথার মতো মনে হলেও বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বিষধর এই সাপের অস্তিত্ব রক্ষায় ব্রাজিল সরকার এই দ্বীপে মানুষের প্রবেশাধিকারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। অনেকেই বোকামি করে এর আগে ওই এলাকায় গিয়েছিলেন।

ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন ফর নেচার কর্তৃক ভয়ানক বিপজ্জনক প্রাণী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এই রাজ্যের বাসিন্দাদের।

বোথরোপস ইনসুলারিস দেখতে উজ্জ্বল হলুদাভ ও বাদামী বর্ণের। এরা গড়ে ২৮ ইঞ্চি এবং সর্বোচ্চ ৪৬ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে।

এদের মাথা তীক্ষ্ম আকৃতির। একে লানচিহেড ভাইপার নামেও ডাকা হয়। উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার বেশির ভাগ মানুষের মৃত্যুর কারণ এই সাপ।

এরা সাধারণত পাখি খায়। তবে টিকিটিকিও এদের অন্যতম খাবার। এমনকি এরা অন্য ‍সাপও ভক্ষণ করে।

সাও পাওলোর সমুদ্র ঘেঁষা অপরূপ সৌন্দর্যের দ্বীপটির আকৃতি ৪ দশমিক ৬ মিলিয়ন বর্গফুট। এই প্রজাতির সাপ এই দ্বীপটিতেই বাস করে। সাপের রাজ্যে মানুষের বসবাস না থাকলেও প্রতিবছর সাপের ওপর গবেষণা করতে কিছু বিজ্ঞানীকে অবশ্য সেখানে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়।

মনে করা হয়, বিষধর সাপেররাজ্যেও নিয়মিত বন্যপ্রাণী শিকারীদের আগমন ঘটে থাকে।

তারা জানিয়েছে, লিচেনহেডের বিষ মহামূল্যবান। বাজারে এর দাম প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার পাউন্ড। এসব সাপ অবলুপ্তির পেছনে এটাও একটা বড় ‍কারণ।

প্রচলিত রয়েছে, প্রায় ১১ হাজার বছর আগে সমুদ্র উচ্চতার কারণে ব্রাজিল থেকে এই দ্বীপ বিচ্ছন্ন হয়ে যায়। তখন এই বিষধর সাপ এই দ্বীপে চলে আসে। এ সাপের কামড়ে একজন মানুষের সাত শতাংশ মৃত্যুর সম্ভাবনা থাকে।

এই দ্বীপ নিয়ে আরেক রহস্যময় জেলের গল্প। সেই জেলে তার নৌকার ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই দ্বীপে নৌকা ভিড়িয়েছিলেন।

কিন্তু ততক্ষণে জেলেকে অভ্যর্থনা জানাতে ওঁৎপেতে ছিল লিচেনহেডরা। পরে সাপের দংশনে নৌকায় তার লাশ পাওয়া যায়।

একচ্ছত্র আধিপত্য থাকলেও দ্বীপে গাছপালা ও তৃণ কমে যাওয়ায় এবং রোগের কারণে গত ১৫ বছরে এই দ্বীপের বাসিন্দাদের সংখ্যা অন্তত ১৫ ভাগ কমে গেছে।



মন্তব্য চালু নেই