২০ বছরে যেভাবে তৈরী হলো প্রেমের ভাসমান দ্বীপ

শহর থেকে দূরে বাস করা মানে এই নয় যে আপনি সুখী থাকবেন না। এর খুব ভালো দৃষ্টান্ত হতে পারে ওয়েন এডামস এবং ক্যাথরিন কিং দম্পতি। ওয়েনের বয়স ৬৬ এবং ক্যাথরিনের ৫৯। কানাডিয়ান এই দম্পতি বিশ বছরের চেষ্টায় আস্তে আস্তে গড়ে তুলেছেন কৃত্রিম এক দ্বীপ। ব্রিটিশ কলম্বিয়ার ভ্যানকুভার দ্বীপের পাশেই তৈরি করা হয় ভাসমান দ্বীপটি।
১৯৯১ সালে ভাসমান কৃত্রিম দ্বীপটি তৈরি করা শুরু করেন এ দম্পতি। ২০ বছর পর এটি সম্পূর্ণভাবে তৈরি হয়ে যাওয়ার পর সেখানেই বসবাস শুরু করেন তারা। বাড়িটির নাম দিয়েছেন ‘ফ্রিডম কোভ’। ভাসমান এই দ্বীপে একটি আর্ট গ্যালারি, গেস্ট লাইটহাউস, ৫টি গ্রিন হাউস এবং একটি স্টুডিও রয়েছে।
তবে শৈল্পিক এই দ্বীপটিতে কোনো ফ্রিজ ব্যবহার করেন না তারা। ৫ টি গ্রিনহাউস থাকায় সবসময়ই টাটকা খাবার পায় এডামস পরিবার। আর মাছের সরবরাহ তো আছেই। গ্রীষ্মকালে তারা একটি নিকটবর্তী ঝর্ণা থেকে পানি সংগ্রহ করে। আর অন্যসময় এর মূল উৎসই থাকে বৃষ্টি।
তবে দ্বীপটির ফিরোজা ও ম্যাজেন্টা রঙের স্থাপনাগুলো অনেকসময় সবুজ গাছ এবং নীল পানির সৌন্দর্যকেও হার মানিয়ে দেয়। উপর থেকে দেখলে বোঝা যাবে ফিরোজা এবং ম্যাজেন্টা রঙই এখানে আধিপত্য বিস্তার করছে।
দ্বীপটিতে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য প্রথমে ১৪ টি সোলার প্যানেল ব্যবহার করেন অ্যাডামস। তবে একটি ঝড়ে প্যানেলগুলো ভেঙে গেলে বিকল্প রাস্তা খোঁজেন অ্যাডামস। এখন তিনি একটি ছোটো হোনডা জেনারেটর ব্যবহার করেন যা ৩ হাজার ওয়াট শক্তি সরবরাহে সক্ষম।
অ্যাডামস বলেন, ‘আমরা দুজনই আমাদের জীবনে অনেক কিছু করেছি, অনেক কষ্টে সময় পার করেছি। তাই আমরা এই ব্যতিক্রমী জীবনের জন্য নিজেকে তৈরি করছিলাম। এবং এখন আমরা সত্যিই ভালো আছি।’
অ্যাডামস এবং কিং তাদের এই ব্যতিক্রমী জীবন নিয়ে খুবই ব্যস্ত থাকতে হয়। কিন্তু এর মাঝেই সৃজনশীল কাজের জন্য তরা তাদের সময় বের করে নেন। ক্যাথরিন কিং একজন চিত্রশিল্পী, লেখিকা এবং সঙ্গীতশিল্পী। অপরদিতে অ্যাডামস একজন ভাস্কর। গ্রীষ্মকালে তাদের শিল্পকর্ম দেখতে পার্শ্ববর্তী টফিনো থেকে সবাইকে আমন্ত্রণ জানান।
কিন্তু এই মাস্টারপিস কিভাবে তৈরি হলো? হাফিংটন পোস্টকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে অ্যাডামস জানান, ‘একবার শীতকালে একট ঝড়ে গাছের একটি ডাল ভেঙ্গে পড়ে যায়। আমরা সবগুলো ভাঙ্গা কাণ্ড যোগাড় করি। পরে এদের মালিকের কাছে এগুলো দিতে গেলে তারা বলে এগুলো তোমাদের কাছে রেখে দাও। তখন আমরা ভাবলাম এখন বোধহয় আমাদের বাড়ি বানানো উচিত।’
১৯৯১ সালের গ্রীষ্মে তারা সব কাঠ ও গাছের ডাল দিয়ে একটি দ্বীপ বানানোর কাজ শুরু করলেন। সেই বছরের ফেব্রুয়ারিতেই তারা এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে। এখনও ঠিক সেই জায়গাতেই দুই সন্তান নিয়ে বেশ সুখেই বসবাস করছে অ্যাডামস ও কিং।
মন্তব্য চালু নেই