১ টাকায় ৫ কেজি মূলা!
মওসুমের শুরুতে যে মূলা বিক্রি হয়েছে কেজি প্রতি ২০ থেকে ২৫ টাকা দরে সেই মূলা এখন ৫ কেজি বিক্রি হচ্ছে ১ টাকায়!। এমন পানির দাম হলেও ক্রেতা পচ্ছেন না কৃষকরা। ফলে অধিকাংশ কৃষকই বিক্রি করতে না পেরে বাজারেই ফেলে দিয়ে আসছেন এসব মূলা।
তবে শুধু মূলার দামই যে এমন সস্তা তা নয়; বেগুন, ফুলকপির ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। যেখানে প্রতি কেজি ফুলকপি আর বেগুন বিক্রি হচ্ছে ১ থেকে ২ টাকা দরে।
রোববার দুপুরে লালমনিরহাটের আদিতমারি উপজেলার কুমড়িরহাট বাজার, শহরের নয়ারহাটে গিয়ে এমন দৃশ্যই দেখা মেলে। জেলার অন্যান্য হাট-বাজারের অবস্থাও একই রকম বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা।
কুমড়িরহাট বাজার ঘুরে দেখা যায়, এসব কাঁচা সবজি বিক্রেতারা ক্রেতা আকৃষ্ট করতে মাইকিং করছেন। তারা বলছেন, ‘আসুন ফুলকপি-বেগুন ১ টাকা আর ৫ কেজি মূলা ১ টাকা।’
এমন দাম শুনে ক্রেতাদের হুমরি খেয়ে পড়ার কথা থকলেও ক্রেতা সঙ্কটে অবিক্রিতই থেকে যাচ্ছে অনেক কৃষকের সবজি। ফলে বিক্রি করতে না পেরে বাধ্য হয়ে ফেরার পথে কৃষকরা কষ্টে ফলানো এসব মূলা, কপি ও বেগুন ফেলে দিয়ে যাচ্ছে বাজারে। অনেকে আবার বাড়িতে নিয়ে গিয়ে গরুকে খাওয়াচ্ছেন।
এমন অবস্থা শুধু আদিতমারী বাজারেরই নয় বরং জেলার প্রায় সবগুলো হাট-বাজারেই চলছে এমন পানির দামে সবজি বেঁচা-কেনা। এতে ন্যায্যমূল্য না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকরা।
তবে কৃষকের এ বেহাল দশায় এক ধরণের ব্যবসায়ী মুনাফা লুটছে বলে অভিযোগ উঠেছে। যারা এসব পণ্য কম দামে কিনে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে বিক্রি করছেন অধিক দামে। ফলে ন্যায্যমূল না পেয়ে সুদে টাকা নিয়ে আবাদ করে এখন বাড়ি ছাড়া হয়েছে এ জেলার শত শত কৃষক।
কৃষি অফিস জানায়, এবার জেলায় প্রায় ২২৫ হেক্টর জমিতে ফুলকপি, ২৬০ হেক্টর জমিতে বেগুন ও ২৫০ হেক্টর জমিতে মূলা চাষ করা হয়েছে। মওসুমের শুরুতে প্রতি কেজি ফুলকপি ২৫ থেকে ৩০ টাকা, বেগুন ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, মূলা ২০ থেকে ২৫ টাকা দরে বিক্রি করে কৃষকদের কিছুটা লাভ হলেও বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে পানির দরে।
রোববার সকালে কুমড়িরহাট বাজারে কৃষক আজিজুল মিয়া তার ৩ বিঘা জমির প্রায় দুই হাজার ফুলকপি বিক্রি করতে নিয়ে এসেছেন।
তিনি জানান, চলতি মওসুমে পাঁচ বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষ করতে তার উৎপাদন খরচ হয় প্রায় ৩৬ হাজার টাকা। বর্তমান পরিস্থিতিতে তা উঠে আসা সম্ভব নয়। মূল্য না পাওয়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে। একই অবস্থা বেগুন ও মূলা চাষীদেরও।
শহরের নয়ারহাটে একাধিক কৃষক কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আবাদ করলেও বিপদ, না করলেও বিপদ। আমরা কোন দিকে যাব?।’
কুলাঘাটের কৃষক গাজী হোসেন জানান, এ বছর সবজি চাষে তার লোকসান ৩৫ হাজার টাকা। এনজিও থেকে লোন নিয়ে আবাদ করেছিলেন তিনি। এখন দেনা পরিশোধ করতে জমি অথবা গরু বিক্রি করতে হবে।
অনেক কুষক জানিয়েছেন, মূলা বিক্রি না হওয়া মূলা জমিতে রেখেই পচননাশক ওষুধ দিয়ে ধ্বংস করছেন তারা।
কৃষি বিভাগের একটি সূত্র জানায়, জেলার প্রায় কয়েক’শ কৃষক ধার দেনা করে সবজি চাষ করে, লাভের মুখ না দেখে দেনা পরিশোধ করতে না পেরে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো: সাফায়েত হোসেন জানান, এবারে রোগ বালাই না হওয়ায় বিভিন্ন সবজির ফলন ভালো হয়েছে। যে কারণে কৃষকদের লোকসান হচ্ছে।
মন্তব্য চালু নেই