১৯ বছরেও উদ্ঘাটন হয়নি সালমান শাহের মৃত্যুরহস্য
১৯ বছর আগে ৬ সেপ্টেম্বর মারা যান জনপ্রিয় চিত্রনায়ক চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার ইমন ওরফে সালমান শাহ। মারা যাওয়ার পর এখনো উদ্ঘাটন হয়নি সালমান শাহের মৃত্যুটি অপমৃত্যু না হত্যাকাণ্ড। সিআইডি ও বিচার বিভাগীয় তদন্তে অপমৃত্যু উল্লেখ্য করে প্রতিবেদন দাখিল করা হলেও তা প্রত্যাখ্যান করেন সালমান শাহের পরিবার।
সর্বশেষ বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি দেন সালমান শাহের মা নীলুফার চৌধুরী। আদালত নারাজির আবেদন মঞ্জুর করে পুনঃতদন্তের জন্য র্যাব-৩ কে নির্দেশ দেন। এদিকে পুনঃতদন্ত বাতিল চেয়ে অপমৃত্যুর আবেদনটি গ্রহণ করার আবেদন করে রিভিউ পিটিশন দাখিল করেন রাষ্ট্রপক্ষ।
নারাজির আবেদনে সালমান শাহের মা নীলুফার চৌধুরী উল্লেখ্য করেন, আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ ১১ জন তার ছেলে সালমান শাহের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন।
ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু বলেন, আইনগতভাবে সালমান শাহের মামলাটি চলতে পারে না।
কারণ হিসেবে আব্দুল্লাহ আবু বলেন, মামলার বাদী সালমান শাহের বাবা কমর উদ্দিন আহমদ চৌধুরী মারা গেছেন। তিনি মারা যাওয়ার পর সালমান শাহের মা নীলুফার চৌধুরী মামলার বাদী হন। আইনগতভাবে এক বাদীর পরিবর্তে অন্য বাদী হতে পারে না।
আব্দুল্লাহ আবু আরও বলেন, বিচার বিভাগীয় তদন্তে নায়ক সালমান শাহের অপমৃত্যু উল্লেখ্য করে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছিল। প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে সালমান শাহের মা নীলুফার চৌধুরী নারাজি প্রদান করেন। আদালত নারাজির আবেদন মঞ্জুর করে পুনঃতদন্তের জন্য র্যাব-৩ এ পাঠান। আমরা পুনঃতদন্ত বাতিল চেয়ে আদালতে রিভিশন দাখিল করেছি। আদালত তা শুনানির জন্য ২৮ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেন।
অপরদিকে সাবেক বিশেষ পিপি ফারুক আহম্মেদ বলেন, আইনুসারে মামলাটি চলতে কোনো বাধা নেই। পুনঃতদন্ত বাতিল চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ যে রিভিশন দাখিল করেছেন তা যুক্তিসঙ্গত নয়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা র্যাব-৩ এর সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) ইয়াসির আরাফাত বলেন, আদালতের আদেশে মামলার সকল কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তাই মামলাটি আমরা তদন্ত করতে পারছি না।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মারা যান চিত্রনায়ক চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার ইমন ওরফে সালমান শাহ। সে সময় এ বিষয়ে অপমৃত্যুর মামলা করেন তার বাবা কমর উদ্দিন আহমদ চৌধুরী।
পরে ১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ করে মামলাটিকে হত্যা মামলায় রূপান্তরিত করার আবেদন জানান তিনি। অপমৃত্যুর মামলার সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগের বিষয়টি একসঙ্গে তদন্ত করতে সিআইডিকে নির্দেশ দেন আদালত। সালমান শাহের মৃত্যুর ঘটনাটি তদন্ত করে ১৯৯৭ সালের ৩ নভেম্বর আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় সিআইডি।
চূড়ান্ত প্রতিবেদনে সালমান শাহর মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করা হয়। ১৯৯৭ সালের ২৫ নভেম্বর ঢাকার সিএমএম আদালতে ওই চূড়ান্ত প্রতিবেদন গৃহীত হয়। সিআইডির প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে তার বাবা কমর উদ্দিন আহমদ চৌধুরী রিভিশন মামলা দায়ের করেন। ২০০৩ সালের ১৯ মে মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে পাঠায় আদালত। এর পর প্রায় ১২ বছর মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে ছিল।
২০১৪ সালের ৩ আগস্ট ঢাকার সিএমএম আদালতের বিচারক বিকাশ কুমার সাহার কাছে বিচার বিভাগীয় তদন্তের প্রতিবেদন দাখিল করেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ইমদাদুল হক। এ প্রতিবেদনে সালমান শাহর মৃত্যুকে অপমৃত্যু হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
২০১৪ সালের ২১ ডিসেম্বর সালমান শাহর মা নীলুফার চৌধুরী ছেলের মৃত্যুর বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেন এবং বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি দেবেন বলে আবেদন করেন। ২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি নীলুফার চৌধুরী ঢাকা মহানগর হাকিম জাহাঙ্গীর হোসেনের আদালতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনের নারাজির আবেদন দাখিল করেন। আদালত নারাজির আবেদন গ্রহণ করে পুনঃতদন্তের জন্য র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র্যাব) পুনঃতদন্তের নির্দেশ দেন।
নারাজি আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ ১১ জন তার ছেলে সালমান শাহের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন। বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছেন র্যাব-৩ এর সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) ইয়াসির আরাফাত।
মন্তব্য চালু নেই