১৬ বছরের অপেক্ষার অবসান

ইংল্যান্ড থেকে মিরপুর। ১৯৯৯ থেকে ২০১৫। পাক্কা ১৬ বছর। এই ১৬ বছরে একটা দলকে হারানোর জন্য কতটা না সাধনা করতে হয়েছে বাংলাদেশকে! দলটি পাকিস্তান। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে জয়ের পর ১৯৯৯ সালে ক্রিকেটীয় যুদ্ধে পাকিস্তানকে দাঁড়াতে দেয়নি বাংলাদেশ।

এরপর ২৫টি ওয়ানডে খেললেও জয় নামক সোনার হরিণটি বাংলাদেশের জালে ধরা দেয়নি। অনেক সময় ভাগ্যদেবী পাকিস্তানকে বাঁচিয়েছে। অনেক সময় বাংলাদেশের কপাল পুড়েছে। সবকিছু মিলিয়ে জয়টা পাওয়া হয়নি লাল-সবুজ জার্সিধারীদের। কপালে যদি জয়টা থাকত তাহলে ২০১২ এশিয়া কাপের ফাইনালে মাত্র ২ রানের জন্যে হারত না বাংলাদেশ। একই টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে ২১ রানের জন্যে জয়বঞ্চিতও হত না টাইগাররা।

অতীত ভুলে বাংলাদেশ সামনে এগিয়েছে। এগিয়েছে খেলার মান। আর সে কারণে পাকিস্তান আর জিততে পারলো না। ১৬ বছরের আক্ষেপ তামিম-মুশফিকরা পূরণ করলেন। শুক্রবার মিরপুর স্টেডিয়ামে লাল-সবুজের পতাকা বারবার উড়ল। বাংলাদেশের পারফরমেন্সে বারবার মাথা নামাচ্ছিল পাকিস্তান শিবির। আর শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে রাহাত আলী আউট হওয়ার সাথে সাথে বিজয় উল্লাসে মেতে উঠে গোটা জাতি। সফরকারীদের বেঁধে দেওয়া ৩৩০ রানের টার্গেটে ২৫০ রানে গুটিয়ে যায়। বাংলাদেশ জয় পায় ৭৯ রানে।

এর আগে ৬ উইকেটে ৩২৯ রান করে যা ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান। এর আগে ৩২৬ করেছিল পাকিস্তানেরই বিপক্ষে। বাংলাদেশের জয়ের নায়ক ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল। ১৩২ রানের নায়কোচিত ইনিংস খেলে দলকে শুধু জয় এনে দেননি বরং নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। অফফর্মে থাকা তামিম নিজেকে এ ম্যাচে চিনিয়েছেন নতুন করে। ১৩৫ বলে ১৫ চার ও ৩ ছক্কায় ১৩২ রানের ইনিংস খেলেন তামিম যা পাকিস্তানের বিপক্ষে যেকোন বাংলাদেশির সর্বোচ্চ রান।

তামিমের পাশাপাশি সেঞ্চুরির দেখা পান মুশফিকুর রহিমও। ১০৬ রান করেন তিনি। মাত্র ৭৭ বলে ১৩ চার ও ২ ছক্কায় ইনিংসটি খেলেন তিনি। সেঞ্চুরি তুলে নেন মাত্র ৬৯ বলে যা তৃতীয় দ্রুততম। তৃতীয় উইকেটে তামিম ও মুশফিক মিলে ১৭৮ রান সংগ্রহ করেন, যা বাংলাদেশের ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে যেকোন উইকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটি। এই দুই ব্যাটসম্যান ছাড়া সাকিব আল হাসান করেন ৩১ রান। এ ছাড়া সৌম্য সরকার ২০, সাব্বির রহমান ১৫ ও মাহমুদউল্লাহর ব্যাট থেকে আসে ৫ রান।

পাকিস্তানের হয়ে বল হাতে ওয়াহাব রিয়াজ ৪ উইকেট নিলেও রান খরচ করেন ৫৯। এ ছাড়া এই ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাঈদ আজমল ফিরে আসেন। কিন্তু বল হাতে অফস্পিনার ছিলেন উইকেট শূন্য। ৭৪ রান খরচ করেন ১০ ওভারে। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে অধিনায়ক আজহার আলী ৭২, অভিষিক্ত মোহাম্মদ রিজওয়ানের ৬৭ ও হারিস সোহেলর ৫১ রান বাংলাদেশের বিপক্ষে শুধু প্রতিরোধই গড়ে তোলে। বোলারদের দাপটে মাথা উচুঁ করে দাঁড়াতে পারেনি ব্যাটসম্যানরা। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে পরাজয়ের লজ্জাটা বেশ ভালোমতই পায় পাকিস্তান। ৭৯ রানের জয়ে তিন ম্যাচ সিরিজে ১-০ এগিয়ে বাংলাদেশ। রোববার একই মাঠে দ্বিতীয় ওয়ানডে অনুষ্ঠিত হবে। ম্যাচটি জিতে নিতে পারলে স্বপ্নের ওয়ানডে সিরিজটিও জিতে নিবে টাইগাররা।



মন্তব্য চালু নেই