১৩ বছরের কিশোরকে দেড় ঘন্টা নির্মমভাবে নির্যাতন করে হত্যা (ভিডিওসহ)
বুধবার সিলেট মহানগরীর কুমারগাঁওয়ে ১৩ বছরের কিশোর সামিউল আলম রাজনকে হত্যা করে গুম করার সময় পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে।
সামিউলকে হত্যার আগে একটি দোকানের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে প্রায় দেড় ঘণ্টা নির্যাতন করা হয়। এ সময় পানির জন্য বেশ কয়েকবার আকুতি জানায় সামিউল। পানি দেয়নি নির্যাতনকারীরা। উল্টো ‘পানি নাই ঘাম খা’ বলে বর্বরতা চালায় তারা।
সামিউলকে অমানবিক নির্যাতনের সময় বুনো উল্লাসে মেতে ছিল পাষণ্ডরা। সামিউলকে নির্যাতনের সময় ধারণকৃত একটি ভিডিওচিত্র থেকে পাওয়া গেছে এমন দৃশ্য।
ভিডিওচিত্রে দেখা যায়, টানা ২৮ মিনিট একটি খুঁটির সঙ্গে সামিউলকে বেঁধে রেখে নির্যাতন করা হয়। বাঁধা অবস্থায় খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়। ভিডিওচিত্রে তিন-চারজনের কন্ঠস্বর স্পষ্ট শোনা যায়। সামিউলকে নির্যাতনের এক পর্যায়ে ‘এই ক (বল) তুই চোর, তোর নাম ক (বল)… লগে কারা আছিল…’ এমনটা বলতে শোনা যায় এক নির্যাতনকারীকে।
নির্যাতনের এক পর্যায়ে নিস্তেজ হয়ে মাটিতে পড়ে পানি পানের জন্য আকুতি জানায় সামিউল। কিন্তু পানি দেওয়া হয়নি তাকে। ‘পানি নাই ঘাম খা’ বলে উল্লাস করে নির্যাতনকারীরা।
নির্যাতনের এক পর্যায়ে সামিউলের নখ, মাথা ও পেটে রোল দিয়ে আঘাত করা হয়। এ ছাড়া বাঁ হাত ও ডান পা ধরে মুচড়াতেও দেখা যায়। কয়েক মিনিটের জন্য সামিউলকে হাতের বাঁধন খুলে হাঁটতে দেওয়া হয়। এসময় নির্যাতনকারীরা ‘হাড়গোড় তো দেখি সব ঠিক আছে, আরো মারো…’ বলে সামিউলের বাঁ হাত খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রেখে আরেক দফা পেটায়।
নিহত সামিউল আলম রাজনের বাড়ি সিলেট নগরীর কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ডের পাশে সিলেট সদর উপজেলার কান্দিগাঁও ইউনিয়নের বাদে আলী গ্রামে। সামিউলের বাবা শেখ আজিজুর রহমান পেশায় একজন মাইক্রোবাসচালক। তার দুই ছেলের মধ্যে সামিউল বড়। অনন্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করা সামিউল সবজি বিক্রি করতো।
তার বাবা আজিজুর জানান, তিনি যেদিন ভাড়ায় মাইক্রোবাস চালাতে পারেন না, সেদিন সংসার খরচ চালাতে সবজি বিক্রি করতে বের হতো সামিউল।
সামিউলের মা লুবনা আক্তার জানান, ওইদিন (বুধবার) সামিউলের বাবা গাড়িতে ছিলেন বলে বাড়ি ফেরেননি। ভোরে শহরতলীর টুকেরবাজার থেকে সবজি নিয়ে বিক্রির জন্য সামিউল বের হয়েছিল। সারা দিন ছেলের খোঁজ পাননি তারা। রাতে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার সময় এক কিশোরের লাশ পাওয়ার সূত্র ধরে সামিউলকে শনাক্ত করা হয়।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে সামিউলের মা তার ছেলে হত্যার বিচার চান।
সামিউল হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে নগরীর জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আক্তার হোসেন বলেন, ‘সামিউলকে নির্যাতনের সময় তা ভিডিওচিত্রে ধারণ করার বিষয়টি শুনেছি এবং এটি দেখেছেন এমন কয়েকজনের সঙ্গেও কথা হয়েছে।’
ওসি জানান, ‘ঘটনার সঙ্গে মামলার চার আসামিই সম্পৃক্ত বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভিডিওচিত্র ধারণসহ পুরো ঘটনার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটককৃত মুহিতকে সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে। রোববার আদালতে রিমান্ড আবেদনের শুনানি হবে।’
উল্লেখ্য, গত বুধবার সামিউলকে হত্যা করে লাশ গুমের চেষ্টাকালে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে মুহিত নামক এক যুবক। এ ঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে জালালাবাদ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। মামলায় আটককৃত মুহিত ও তার ভাই কামরুল ইসলাম (২৪), তাদের সহযোগী আলী হায়দার ওরফে আলী (৩৪) ও চৌকিদার ময়না মিয়া ওরফে বড় ময়নাকে (৪৫) আসামি করা হয়েছে।
https://www.youtube.com/watch?v=PSssmWu5ihc
ইউটিউবের পলিসির কারনে ভিডিওটি ইউটিউব কর্তৃপক্ষ সরিয়ে নিতে পারে। সেক্ষেত্রে সরাসরি আওয়ার নিউজ সার্ভার থেকে দেখুন
মন্তব্য চালু নেই