১৩ ঘণ্টা পর শিকলমুক্ত : অসুস্থ হয়ে না পড়লে আরো শাস্তি দিতাম…
শরীয়তপুরে শিকলে বেঁধে রোদে পোড়ানো সেই শিশুকে অবশেষে ১৩ ঘণ্টা মুক্ত করা হয়েছে। তবে দীর্ঘসময় ধরে রোদে পোড়ার কারণে শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাই তাকে মাদরাসায় আর পাঠানো যায়নি।
সোমবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে রাত সাড়ে ১০টার পর্যন্ত বাড়ির পাশে একটি অবকাঠামোয় বাধা ছিল শিশুটি। রাতে অসুস্থ হয়ে পড়লে তার হাত-পায়ের শিকল খুলে ফেলা হয়। এরপর তাকে ঘরে নিয়ে এসে বিছানায় শুইয়ে দেয় তার স্বজনরা।
শরীয়তপুর সদর উপজেলার চর কোয়ারপুর গ্রামের বাসিন্দারা জানায়, শিশু নয়নকে মুক্ত করা হলেও তার শরীর ছিল খুবই দুর্বল। সারারাত ধরে তার চেতনা ফেরেনি। তবে শিশুটির মায়ের সাফ কথা- অসুস্থ হয়ে না পড়লে আরো শাস্তি দিতাম।
মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে শিশুটিকে ঘুম থেকে ডেকে তোলা হয়। অসুস্থ থাকার কারণে মাদরাসায় যেতে পারেনি। দুপুর পর্যন্ত সে বাড়িতেই ছিল। দুপুরের খাবার খেয়ে বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে গিয়েছে।
দুপুরে শরীয়তপুর সদরের চর কোয়ারপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, যেখানে বেঁধে রাখা হয়েছিল শিশুটিকে সেই খুঁটি তেমনি আছে। এসময় কথা হয় নয়নের মা মর্জিনা বেগম, চাচা মো. আরিফ, বড় ভাই বাদল ও বন্ধু সাইদের সঙ্গে।
মর্জিনা বেগম জানান, নয়নের পড়া-লেখায় মনোযোগ ফিরিয়ে আনতেই শাস্তি দেয়া হয়েছে। অসুস্থ হয়ে না পড়লে আরো শাস্তি দেয়া হতো। তিনি দাবি করেন, এমন শাস্তি পেয়ে তার ছেলের কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। ঘুম থেকে দেরিতে ওঠায় ছেলেকে মাদরাসায় পাঠানো সম্ভব হয়নি।
চাচা আরিফ জানান, ছেলেকে শিক্ষিত করার জন্য তার বাবা মজিবর মাঝি অনেক চেষ্টা করছে। শিশু নয়ন তার বাবার ইচ্ছা পূরণ করতে ব্যর্থ ছিল। তাই তাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রোদে রেখে শাস্তি দেয়া হয়।
নয়নের বন্ধু আবু সাইদ জানায়, নয়ন দুষ্টুমি করে বেশি। লেখাপড়ায় ভালো। সোমবার (২৫ এপ্রিল) ছিল তার বোন বৃষ্টির (১৪) বিয়ের অনুষ্ঠান। এদিনে বাবার কাছে সে আরসি কোলা কেনার টাকা চেয়েছিল। কিন্তু টাকা না পেয়ে সে চুরি করে বসে।
বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন শরীয়তপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদুর রহমান মাসুদ বলেন, শিশু নয়নকে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। এটা শিশু নির্যাতনের শামিল। জনস্বার্থে যে কেউ বাদী হয়ে নয়নের বাবা-মাসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে।
উল্লেখ্য, ২৫ এপ্রিল শরীয়তপুর সদর উপজেলার চর কোয়ারপুর গ্রামে আট বছরের শিশু নয়নকে তীব্র রোদের মধ্যে শিকলে বেঁধে রেখে শাস্তি দেয়া হয়। সে চর কোয়ারপুর গ্রামের মজিবর মাঝির ছেলে। শিশুটি যখন কষ্ট পাচ্ছিল তখন গ্রামের কিছু নারী-পুরুষ হাসি ঠাট্টা করছিলেন।
আরো পড়ুন:
মন্তব্য চালু নেই