১১৪ ইউপিতে প্রার্থী নেইঃ কারণ জানতে উপজেলায় চিঠি পাঠাচ্ছে বিএনপি!
প্রথম দফার ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে শতাধিক জায়গায় প্রার্থী নেই বিএনপির। এর কারণ জানতে সংশ্লিষ্ট উপজেলার নেতাদের কাছে চিঠি পাঠাবে বিএনপি।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দ্বিতীয় দফা নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পর এই চিঠি পাঠানো হবে। তৃণমূল থেকে পাওয়া তথ্য পরে কূটনীতিকদের কাছে তুলে ধরা হবে।
আগামী ২২ মার্চ প্রথম দফা ইউপি নির্বাচনে ভোট নেয়া হবে। দ্বিতীয় দফার তফসিলও ইতিমধ্যে ঘোষিত হয়েছে। ছয় দফায় সারা দেশের প্রায় সাড়ে চার হাজার ইউপিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
প্রথম দফা নির্বাচনে ৭৩৯টি ইউপিতে মনোনয়নপত্র জমা দেয়া ও বাছাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। এর মধ্যে ১১৪টিতে বিএনপির কোনো প্রার্থী নেই।
বিএনপির দাবি, সরকারি দলের চাপ, নির্বাচন কমিশনের ‘তু্চ্ছ’ অজুহাতে প্রার্থিতা বাতিলের কারণে তাদের প্রার্থী নেই ৮৩টি ইউনিয়নে। আর নির্বাচন কমিশন বলছে, ৭০টিতে বিএনপির প্রার্থী নেই।
এ ছাড়া ২০টি ইউনিয়নে বিএনপি নানা কারণ দেখিয়ে প্রার্থী মনোনয়ন দিতে ব্যর্থ হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রথম দফার নির্বাচনে ১১৪টিতে তাদের প্রার্থী নেই বলে জানিয়েছে বিএনপি।
বিএনপির নেতাদের দাবি, স্থানীয় ক্ষমতাসীনরা বিএনপির প্রার্থীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে দেয়নি। অনেক জায়গায় মনোনয়নপত্র জমা দিতে দেয়নি। কোথাও আবার মনোনয়নপত্র ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। বিএনপির প্রার্থীর সমর্থনকারীকে তুলে নেয়ার অভিযোগও আছে।
প্রার্থী না থাকার জন্য নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধেও অভিযোগ আছে বিএনপির। নেতাদের দাবি, তুচ্ছ অজুহাতে তাদের অনেক প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে। তবে কোথাও কোথাও প্রার্থী না পাওয়ার কারণ হিসেবে সরকারি দলের প্রার্থীর সঙ্গে ‘আঁতাতের’ অভিযোগও উঠেছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, তৃণমূলে শক্তিশালী অবস্থান থাকলেও স্থানীয় নির্বাচনে প্রার্থী না পাওয়ার বিষয়টি বিএনপিকে ভাবিয়ে তুলছে। দলের ভেতরে-বাইরে সমালোচনাও হচ্ছে এ নিয়ে।
সরকারি দলের চাপ ছাড়াও অন্য কোনো কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখার কথা ভাবছে বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। তাই সংশ্লিষ্ট উপজেলার নেতাদের কাছে চিঠি দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বিএনপির নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “প্রার্থী না থাকার বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে। তাই সামনের পাঁচ দফায় এমন অবস্থার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে, সে জন্য করণীয় ঠিক করার কথা হচ্ছে। শিগগিরই চিঠি পাঠানো হতে পারে।”
বিএনপির সহ-প্রচার সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্তের কথা নিশ্চিত করে বলেন, “আমরা অভিযোগ পেয়েছি বেশির ভাগ জায়গায় সরকারি দলের লোকজন বিএনপির প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধা দিয়েছে। এসব তথ্য সঠিকভাবে জানতে চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। পরে তা কূটনীতিকদের কাছে তুলে ধরা হবে।”
যেসব এলাকায় বিএনপির প্রার্থী নেই, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার কুলকাঠি; পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ার তেলিখালী; বাগেরহাটের মংলার বুড়ির ডাঙ্গা, কাড়াপাড়া, কচুয়ার ধোপাখালী, গজালিয়া, কচুয়া, রাড়ীপাড়া, রামপালের গৌরন্বা, রাজনগর; বরগুনা জেলার বদরখালী, ফুলঝুরি, কেউড়াবুনিয়া, আমতলীর কুকুয়া; লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতির চরপোড়াগা; শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ীর বাঘবেড়, সাতক্ষীরা জেলার দেবহাটার কুলিয়া, কালীগঞ্জের চম্পাফুল, ধলবাড়িয়া, কৃষ্ণনগর, বৈকারী, কলারোয়ার দেয়াড়া, জুগীখালী, কেরালকাতা; খুলনা জেলার দাকোপের লাউডোব, কৈলাশগঞ্জ, কামারখোলা, তিলডাঙ্গা, তেরখাদার সাচিয়াদাহ, ছাগলাদাহ, তেরখাদা; গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ার বর্নি, ডুমুরিয়া, গোপালপুর, কুশলী, পাটগাতী; যশোর জেলার মনিরামপুরের হরিহরনগর; ঢাকা জেলার দোহারের নয়াবাড়ী; নেত্রকোনা জেলার খালিয়াজুরীর গাজীপুর; নোয়াখালী জেলার হাতিয়ার চরঈশ্বর, চর কিং প্রভৃতি।
এদিকে সরকারি দলের চাপের মুখে আরো কিছু প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে পারেন্-বিএনপিতে এমন আশঙ্কা কাজ করছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একটি জেলার শীর্ষস্থানীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমার জেলার এক উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে আগেই মনোনয়নপত্র জমা দিতে দেয়া হয়নি। এক ইউনিয়নের প্রার্থীর সমর্থনকারীকে তুলে নেয়া হয়েছে। জানি না সামনে কী হবে!” ঢাকাটাইমস
মন্তব্য চালু নেই