১/১১ ষড়যন্ত্রেই শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী : গয়েশ্বর

সেনা নিয়ন্ত্রিত এক-এগারোর সরকারের ‘কারচুপি এবং ষড়যন্ত্রে’র কারণেই শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন বলে দাবি করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
তিনি বলেন, ওই ঘটনায় পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগই সবচেয়ে বেশি বেনিফিসিয়ারি (সুবিধাভোগী)।
মঙ্গলবার বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানির মুক্তির দাবিতে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। ‘বৃহত্তর নোয়াখালী জেলা ছাত্র ফোরাম’ এর আয়োজন করে।
গয়েশ্বর বলেন, ‘এক-এগারোর পর গঠিত এক মন্ত্রিসভায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বললেন, এক-এগারোর সরকার তাদের আন্দোলনের ফসল।’
‘এক এগারোর সরকার যদি আপনার আন্দোলনের ফসল হয় তাহলে সফলতার ক্ষেত্রে প্রথম আলোর মতিউর রহমান, ডেইলী স্টারের মাহফুজ আনামসহ আরো অনেক সাংবাদিককের ভুমিকা আছে। তাদের তো পুরস্কৃত করতে পারেন।’
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘এক-এগারোর কারচুপি ও ষড়যন্ত্রের ফসল হলেন আপনি। সুতরাং এক-এগারোর ষড়যন্ত্র না হলে আপনি প্রধানমন্ত্রী হতেন না। আপনি বেনিফিসিয়ারি। তাহলে এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক নেই-এই শব্দটি কারো কাছে যুক্তিসঙ্গতভাবে গ্রহনযোগ্য নয়।’
এক-এগারোর সময়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির বিরুদ্ধে মিথ্যা লেখালেখি হলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে লেখালেখি সত্য হয় কিভাবে-সে প্রশ্নও তোলেন গয়েশ্বর।
‘এক-এগারোতে অনেক কিচ্ছা-কাহিনী লেখা হয়েছে। আপনাদের বিরুদ্ধে যা লেখা হয়েছে তা যদি মিথ্যা হয়, তাহলে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যা লেখা হয়েছে তা সত্য হয় কিভাবে? নাইকো মামলায় যদি আপনি মুক্তি লাভ করতে পারেন, তাহলে আদালত কি কারণে খালেদা জিয়ার মামলা এখনো বলবৎ রাখে এবং বিচারিক প্রক্রিয়া চালু রাখে।’
তিনি বলেন, ‘মতিউর রহমান ও মাহফুজ আনামের সঙ্গে একাত্ম হয়েছিলো আপনাদের (আওয়ামী লীগের নেতারা) কিছু লোক। যারা এখন আপনার (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) আশপাশের মন্ত্রী। তাহলে কে ষড়যন্ত্রকারী?….তাহলে কি এই ষড়যন্ত্র নাটক ছিলো। না কী আপনাদের পাতানো খেলা ছিলো?’
এক-এগারোতে মাইনাস টু নয়, মাইনাস ওয়ানের ষড়যন্ত্র হয়েছিলো-দাবি করে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘আপনি বলছেন, মাইনাস টু। আসলে মাইনাস টু ছিলো না, ছিলো মাইনাস ওয়ান। সেটি এখন কন্টিনিউ করছেন। কিন্তু মনে রাখবেন ষড়যন্ত্র এখনও চলে যায়নি, রূপ পাল্টিয়েছে শুধু। এখন মাইনাস ওয়ান করার চেষ্টা করছেন আবার কবে যে মাইনাস টুতে পড়ে যাবেন বলা যায় না।’
মাইনাস থেকে উত্তরণে জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ দিয়ে একটি অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান গয়েশ্বর। তিনি বলেন, ‘ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে গণতন্ত্রের বিকল্প নেই।’
বিএনপির কাউন্সিল আয়োজনের প্রত্যয় ব্যক্ত করে দলের এই নীতিনির্ধারকরা বলেন, ‘বিএনপি অনেক আগেই ১৯ মার্চ কাউন্সিলের ঘোষণা দিয়েছে। ২০১৩ সালেও কাউন্সিলের শতভাগ প্রস্তুতি নিয়েছিলো। কিন্তু কাউন্সিলের আগেই পার্টি অফিসে হানা দিয়ে ১৫৬ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে নিয়ে গেলো। কাউন্সিল আর হলো না।’
‘এবার ১৫৬ জন নয়, ১ হাজার ৫৬ জনকে গ্রেফতার করা হলেও কাউন্সিল হবেই। তাই কাউন্সিল নিয়ে তালবাহানা করবেন না। কাউন্সিল করতে দিবেন না, নাকি রাস্তায় নামতে দিবেন। কাউন্সিল করতে না দিলে পুরানো পথে নামতেই হবে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘সাংবাদিকরা সত্য কথা বলতে পারছেন না। যে দেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নেই, সেখানে গণতন্ত্র টিকে খাকতে পারে না। যেখানে গণতন্ত্র থাকে না, সেখানে আইনের শাসন থাকে না। যে দেশে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা থাকে না সেখানে রুলস অব ল প্রয়োগের সুযোগ থাকে না।’
ছাত্রদলের সহ-সভাপতি মিজানুর রহমান শিশিরের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবেদিন ফারুক, সমাজ কল্যান বিষয়ক সম্পাদক আবুল খায়ের ভূইয়া, যুব বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীম প্রমুখ।
মন্তব্য চালু নেই