আচরণবিধি মানছেন না সংসদ সদস্যরা

হ-য-ব-র-ল অবস্থায় চলছে জাতীয় সংসদের অধিবেশন

হ-য-ব-র-ল অবস্থায় চলছে জাতীয় সংসদের অধিবেশন। অনেক সংসদ সদস্যই অধিবেশন কক্ষে পালনীয় আচরণবিধি মানছেন না। নবীনদের পাশাপাশি জেষ্ঠ্য সদস্যরাও হ-য-ব-র-ল অবস্থার সৃষ্টি করছেন।

বিশৃঙ্খল এ পরিস্থিতিতে চুপচাপ স্পিকার। চিফ হুইপের পক্ষ থেকে সতর্ক করা হলেও তা কর্ণপাত করছেন না জেষ্ঠ্য সদস্যরা।

সূত্রমতে, সংসদের অধিবেশন চলাকালে অধিবেশন কক্ষে সংসদ সদস্যদের আচরণ কি হবে তা স্পষ্ট করা আছে সংসদের কার্যপ্রণালী বিধিতে। এতে সংসদ সদস্যদের জন্য পালনীয় ১১টি নির্দেশনা রয়েছে। এসব নির্দেশনা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নেই নবীন সদস্যদের। অন্যদিকে জেষ্ঠ্য সদস্যরাও প্রতিনিয়ত আচরণবিধি লঙ্ঘন করে চলেছেন।

আচরণবিধির (৩) নম্বর ধারায় রয়েছে, ‘সংসদের কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয় এমন কোনো বই, সংবাদপত্র বা চিঠিপত্র পাঠ করিবেন না।’

অধিবেশন কক্ষে প্রায় প্রতিনিয়ত পত্রিকার পাতায় চোখ বোলাতে থাকেন সরকার দলীয় জেষ্ঠ্য সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী।

অধিবেশন কক্ষে ঘুমানোর অভিযোগে ইতোমধ্যে আসন পরিবর্তন করে দেয়া হয়েছে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনের। ট্রেজারি বেঞ্চের প্রথম সারি থেকে সরিয়ে দ্বিতীয় সারিতে দেয়া হলেও তার ঘুম কাটছে না। একই অভিযোগ রয়েছে আরেক সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীর ও সাবেক শ্রমপ্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নুজান সুফিয়ানের বিরুদ্ধে।

আচরণবিধির (৮) নম্বর ধারায় সংসদে বক্তৃতা ব্যতিরেকে নীরবতা পালনের নির্দেশ দেয়া হলেও কেউই তা মানেন না। সময় পেলেই দুই-তিনজন সদস্য এক জায়গায় বসে আড্ডায় মেতে উঠেন। কখনো কখনো নিজেদের মধ্যে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন।

চলতি অধিবেশনে একদিন কক্ষের অভ্যন্তরেই বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও বরগুনা-১ আসনের সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু। পরে চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ এসে শম্ভুকে শান্ত করেন। এর আগে চিফ হুইপ বার্তা পাঠিয়েও তাদের থামাতে ব্যর্থ হন।

(৪) নম্বর ধারায় সভাপতি ও বক্তৃতারত সদস্যের মধ্যবর্তী স্থান দিয়ে চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ আছে। কিন্তু বেশ কয়েকজন সদস্য এ আচরণবিধি মানেন না। এ তালিকার শীর্ষে রয়েছেন আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক চিফ হুইপ আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও স্বতন্ত্র সদস্যদের জোট সভাপতি হাজী মোহাম্মদ সেলিম।

আচরণবিধির (১) নম্বর ধারায় সংসদে প্রবেশ করার বা সংসদ কক্ষ ত্যাগ করার সময় এবং তার আসন গ্রহণ বা ত্যাগ করার সময়ে সভাপতির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করার বাধ্যবাধ্যকতা রয়েছে।

কিন্তু অনেক সদস্য সংসদ কক্ষ ত্যাগ করার সময় ফ্রি স্টাইলে চলাচল করেন। অনেকে আবার পশ্চাতদেশ প্রদর্শন করে বেরিয়ে যান।

একজন আরেকজনের চেয়ারে বসা নিষেধ থাকলেও কখনোই ফাঁকা থাকে না জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের আসনটি। তার অনুপস্থিতিতে দলের জেষ্ঠ্য সদস্যদের অনেকেই ওই চেয়ারে বসে থাকেন। অন্য সদস্যদের চেয়ার নিয়েও এ ঘটনা হরহামেশাই ঘটে থাকে।

একজন অন্যজনের চেয়ারে বসার ঘটনায় স্পিকার শিরিন শারমীন চৌধুরী নবম সংসদের সদস্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও এবার চুপচাপ। বাকি অন্যান্য আচরণবিধি ভঙের বিষয়টি রেওয়াজে পরিণত হয়েছে।

আচরণবিধি না বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে কিনা জানতে চাইলে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন বলেন, ‘আমার চোখে এমন কিছু ধরা পড়েনি। সংসদ সদস্যরা তাদের আচরণবিধি মেনে চলতেছে। এখানে কিছু করার নেই।’

তবে চিফ হুইপ আ.স.ম ফিরোজ বিষয়টি অস্বীকার করেননি। তিনি বলেন, ‘এখানে আমাদের করার কিছু নেই। এটা প্রত্যেকের নৈতিকতার/রুচির বিষয়। শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের সব দেশেই পার্লামেন্টে এসব ঘটনা ঘটে থাকে।’

ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া বলেন, ‘নবীন সংসদ সদস্যদেরকে সংসদীয় নিয়ম-রীতি সম্পর্কে প্রথম সংসদ অধিবেশন চলাকালে ট্রেনিং দেয়া হয়েছে। প্রয়োজনে আরও ট্রেনিং হতে পারে।’



মন্তব্য চালু নেই