হ্যামিলন নয় ক্যাম্পাসের বাঁশিওয়ালা ‘গণেশ’

ইয়াজিম ইসলাম পলাশ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় : বিশটি বছর। জীবনের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ সময়। ক্যাম্পাসের সাথে তার সুরের জীবন। সেই সুর এখনো থেমে নেই। জীবনের নানা স্মৃতি আর রঙের সুর। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) প্রতিটা মোড়ে মোড়ে যাকে দেখা যায় বাঁশি বাজাতে। বাঁশি বিক্রি নয় বাঁজাতেই বেশি পচ্ছন্দ করেন তিনি। বাঁশির সুরেই প্রকাশ করেন তার পোড়া দেহ-মনের কথা। মাঝে মাঝে মাতিয়ে তোলেন ক্যাম্পাসের প্রতিটা প্রাণকেই। বলছিলাম ক্যাম্পাসের সকলের পরিচিত একটি মুখ। সবাই তাকে বাঁশিওয়ালা নামেই চেনে। যার নাম শ্রী গণেশ চন্দ্র দাস। বাড়ি রাজশাহীর পুঠিয়ার দুদুর মোড়ে। গায়ে পুরাতন ময়লা শার্ট আর মাথায় প্রিন্স টুপি পরিহিত জীর্ণশীর্ণ ছোটখাট দেহের অধিকারীকে একটু বেশিই দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের ডান দিকের মোড়ের বেদীতে, কখনো গ্রন্থাগারের পেছনের বেদীতে। কথা বলতে গিয়ে জানতে পারি বাঁশির কি করুণ সুর তার জীবনে বাঁজছে! তিন সন্তানের পরিবার। স্ত্রী ক্যান্সারের রোগী। তিন কাঠা জমির ওপর দুটো ছাউনি। সেখান থেকে ৩৬৫ দিন সুবিশাল আকাশ দেখে অভ্যস্ত। যে আকাশ না চাইতেই কক্ষে রোদ দেয়, কখনোবা বৃষ্টি। এমন টানাপোড়ানের সংসারের হাল বাঁশির সুরেই। শুধুমাত্র বাঁশি বিক্রি করেই তার সংসার চলে। দিনে কয়টা বিক্রি হয়? আর তা থেকে আয়ই বা কতো? নিতান্তই সামান্য। আগে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা দিনে আয় হতো। এখন ২০০ টাকা বা তার কম। হয়তোবা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তার বাঁশির সুরের দিকে আর মনোযোগ দেন না। নাহয় বাঁশি বাজানোর শখটা কমে গেছে। আর তা নাহলে সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে সবার সঙ্গেই একবার তার দেখা মেলে। তাই হয়তো প্রতিনিয়ত দেখতে দেখতে আর ভালো লাগে না। তবে বনের পাখির মতো তার স্বভাব। করো ভালো লাগলেও সে গায় না লাগলেও সে গায়। জীবনের ২০টি বছর বাঁশের বাঁশিতে সুর তুলেছেন শুধু এ ক্যাম্পাসেই। জীবন যুদ্ধের পরাজিত সৈনিক হয়ে সন্যাসীর মতোই টিকে আছেন এখনো। কখনো কড়া রৌদ্রে বা গাছের ছায়ায় বসে বা দাঁড়িয়ে নিত্য সে সুর তুলেছেন। সে সুরের মহাত্ম বা তাৎপর্য যারা বুঝেছে হয়তো ২০ কিংবা ৩০ টাকা দিয়ে একটা বাঁশি কিনে তার মতোই বাঁশিতে ফুঁ দিয়েছেন। কিন্তু সুর তুলতে না পেরে বা বাঁশি ভালো না বাঁজানোয় রুমের কোথায় ফেলে রেখেছেন, তার ইয়ত্তা নেই। তবে জীবনের শেষভাগে তার আবেদন কেউ সাহায্যের হাত বাড়ালে হয়তোবা একটু ভালো কাঁটত বাকি সময়টুকু। দিনশেষে বাড়ি ফিরে শূন্য হাতে, পড়ে থাকে থলেভর্তি বাঁশি।



মন্তব্য চালু নেই