হ্যাকিংয়ের তথ্য যেভাবে আবিষ্কার হলো

ফেব্রুয়ারির ৪ তারিখ। অফিস ছুটি শেষে সবাই যে যার মতো বাসায় চলে গেছেন। পরদিন ৫ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার। সাপ্তাহিক ছুটির দিন। কাউকে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া অফিসে আসতে হয় না। কিন্তু প্রচলিত নিয়মে বাংলাদেশ ব্যাংকের তিন উপ-পরিচালককে প্রতিদিন আসতে হয়। ছুটির দিনে তিন কর্মকর্তা যথারীতি ব্যাংকে এসেছেন। একটি বিশেষ শাখায় এসে মেইল চেক করার তাদের অনুমোদন দেয়া আছে। মেইল চেক করতে গিয়ে দেখেন মেইল আর ওপেন হয় না। বেশ কিছুক্ষণ চেষ্টা করেন।

কিন্তু কিছুতেই আর মেইল ওপেন হলো না। জুমার নামাজের কারণে তারা সেদিন চলে গেলেন। পরদিন শনিবার আবারো যথারীতি এলেন তারা। মেইল খোলার অনেক চেষ্টা করলেন। কিন্তু কোনো কাজ হলো না। অগত্যা হতাশায় ফিরে গেলেন। ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে কোনো ধরনের মেইল আসে কিনা তা যাচাই-বাছাই করার দায়িত্ব ছিল সেই তিন কর্মকর্তার। রোববার যথারীতি অফিস খুলল। অফিসে এসেই সেই কর্মকর্তা আইটি বিভাগের কর্মকর্তাদের খবর দিলেন।

কিন্তু ওই তিন কর্মকর্তা কাউকে কিছু জানাননি। এমনকি গভর্নরের দফতরেও জানানো হয়নি। আইটি বিভাগের কর্মকর্তারা যখন মেইল খোলার চেষ্টা করলেন তখন মেইল থেকে বেশ কিছু তথ্য মুছে গেছে। শুধু তাই নয়, সেই কম্পিউটারে ততক্ষণে ভাইরাস ঢুকে গেছে। পরে অন্য কম্পিউটার থেকে মেইল খুলে দেখে একরাশ মেইল। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি মেইল ছিল অবিশ্বাস্য। কারণ বাংলাদেশ ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের সঙ্গে ওই ধরনের কোনো বিষয়ে যোগাযোগ করেনি। এই অবিশ্বাস্য বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর কিংবা অর্থমন্ত্রীকেও জানানো হয়নি। না জানানোর প্রধান কারণ ছিল, ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়া।

৫ ফেব্রুয়ারি ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকে ব্যাকিং সিস্টেমে চলে গেছে, এই তথ্যটি যখন জানতে পারেন তার দু’দিন পর সেখানে ছুটে যান বাংলাদেশ ব্যাংকের দু’জন কর্মকর্তা। তারা মনে করেছিলেন, গেলেই সব সমস্যা সমাধান হবে। কিন্তু হায় ততক্ষণে পানি অনেক দূর গড়িয়ে গেছে। ১০ ফেব্রুয়ারি বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে জানানো হলো।

গর্ভনর ড. আতিউর রহমান মনে করেছিলেন, বিষয়টি গোপনে সমাধান করা হবে। কিন্তু ফিলিপাইনের ডেইলি ইনকোয়ার পত্রিকায় যখন ছাপা হয় এই কেলেঙ্কারির কথা তখন হইচই পড়ে যায়। তারা লিখল, ফিলিপাইনে এত বড় মানি লন্ডারিং ঘটনা এটাই প্রথম। পত্রিকায় সংবাদ ছাপা হওয়ার পর অর্থমন্ত্রীকে অবহিত করার ব্যাপারে গভর্নরের কিছুটা সংকোচ ছিল। দ্বিধা কাজ করেছে। কেন করেছে তা কেউ সাহস করে বলতে পারেনি।

অবশেষে বাংলাদেশের পত্রিকায় ছাপা হওয়ার পর গভর্নর অর্থমন্ত্রীকে চিঠি লিখে অবহিত করেন। যা ছিল একেবারে দায়সারা গোছের।ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে মেইল নিয়ে নির্দেশনা: ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে অফিস মেইল চেক করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী ব্যক্তিগত মেইল অফিস সময়ে ব্যবহার করতে পারবেন না। শুধু অফিসের নির্দিষ্ট মেইল চেক করা যাবে। এমনকি অফিসকালীন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার নিয়েও বেশ কিছু নির্দেশনা আসছে বলে দায়িত্বশীল সূত্রে আভাস পাওয়া গেছে।



মন্তব্য চালু নেই