পবিত্র কোরআনের আলো

হেদায়েতপ্রাপ্তদের জন্য ধর্মপালন সহজসাধ্য

আল্লাহ যাকে সৎপথে পরিচালিত করতে চান, তার বক্ষ ইসলামের জন্য প্রশস্ত করে দেন আর যাকে বিপথগামী করতে চান, তার বক্ষকে অত্যধিক সংকীর্ণ করে দেন; তার কাছে ইসলাম অনুসরণ আকাশে আরোহণের মতোই দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। যারা ইমান আনে না, আল্লাহ এভাবেই তাদের ওপর আজাব নিক্ষেপ করেন। (সুরা আনআম : ১২৫)

তাফসির : এ আয়াতের প্রথমাংশে বলা হয়েছে, আল্লাহ কাউকে সৎপথে পরিচালিত করার ইচ্ছা করলে ইসলামের জন্য তিনি তার হৃদয় প্রশস্ত করে দেন। অর্থাৎ তার অন্তরের অন্ধকার ইমানের নূর দিয়ে আলোকিত করে দেন, ইসলামের কাজ তার জন্য সহজ ও অনুকূলে করে দেন। এটা তার ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ারই লক্ষণ। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ ইসলামের জন্য যার অন্তর খুলে দেন, সে তার প্রতিপালক প্রদত্ত আলোতে রয়েছে’- (সুরা জুমার : ২২)। আয়াতের দ্বিতীয়াংশে বলা হয়েছে, আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্টতায় রাখতে চান, তার অন্তর সংকীর্ণ এবং অত্যধিক সংকীর্ণ করে দেন। সত্যকে গ্রহণ করা এবং সে অনুযায়ী আমল করা তার কাছে এমন কঠিন মনে হয়, যেমন কারো কাছে আকাশে আরোহণ করা দুঃসাধ্য ও কঠিন ব্যাপার।

অন্তর উন্মুক্ত হওয়ার অর্থ

এ আয়াতে ইসলামের জন্য হেদায়েতপ্রাপ্তদের অন্তর খুলে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এর ব্যাখ্যায় হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘এর অর্থ হচ্ছে তাওহিদ ও ইমানের জন্য তাদের হৃদয় প্রশস্ত করে দেওয়া।’

হজরত ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘এ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর সাহাবায়ে কেরাম রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে ‘শরহে ছদর’ বা অন্তর খুলে দেওয়ার তাফসির জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘আল্লাহ মুমিনদের অন্তরে একটি আলো সৃষ্টি করে দেন। ফলে তার অন্তর সত্যকে নিরীক্ষণ করা, হৃদয়ঙ্গম করা ও গ্রহণ করার জন্য উন্মুক্ত হয়ে যায়। এরূপ ব্যক্তির নিদর্শন হলো, তার যাবতীয় কাজকর্ম পরকালমুখী হয়ে যায়। সে পার্থিব পাপ-অন্যায়, কামনা-বাসনা ও ধ্বংসশীল ক্ষণস্থায়ী আনন্দ-উল্লাস থেকে বিরত থাকে এবং মৃত্যু আসার আগেই মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হতে থাকে।’

অন্তর সংকীর্ণ হওয়ার অর্থ

আয়াতের শেষাংশে গোমরাহ লোকদের অন্তর সংকীর্ণ হওয়ার কথা বলা হয়েছে। এর অর্থ হলো, তার অন্তরে সত্য ও সৎকর্মের জন্য কোনো পথ থাকে না। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘আল্লাহর জিকির থেকে তার মন বিমুখ হতে থাকে এবং সে কুফর ও শিরকের কথাবার্তায় নিবিষ্ট হয়।’

কাফিরদের দৃষ্টান্ত আকাশে আরোহণের ন্যায়

আলোচ্য আয়াতে গোমরাহ ও পথভ্রান্ত লোকদের অবস্থা বোঝাতে বলা হয়েছে, ‘ইসলাম অনুসরণ তার কাছে আকাশে আরোহণের ন্যায় দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে।’ এর ব্যাখ্যায় হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘আদম-সন্তানরা যেভাবে আকাশে পৌঁছার ক্ষমতা রাখে না, তেমনি তাদের অন্তরে ইমান, ইসলাম ও তাওহিদের আলো প্রবেশের সুযোগ, শক্তি ও সক্ষমতা থাকে না; যতক্ষণ না আল্লাহ তায়ালা তা প্রবেশ করান।’

হজরত সুদ্দি (রহ.) বলেন, ‘আকাশে আরোহণ যেমন অসম্ভব, তেমনি পথভ্রষ্ট লোকদের অন্তরের সংকীর্ণতা ও কাঠিন্য দূর হওয়া অসম্ভব।’

আধুনিক বিজ্ঞানের স্বর্ণযুগেও এটা প্রমাণিত যে আকাশে যাওয়া, তার জন্য ভ্রমণ, আরোহণ মানুষের জন্য দুঃসাধ্য। সেখানকার তাপমাত্রা, পরিবেশ-প্রকৃতি ও বাতাস-অক্সিজেনবিহীন ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা মানুষের জন্য অনুকূল নয়। কাফিরদের অবস্থাও এমন। কাফিরদের ভোগ ও সুখের শত সরঞ্জাম থাকা সত্ত্বেও তাদের জীবনধারায় যে হাহাকার ও শূন্যতা দেখা যায়, তা কোরআনের সত্যকেই সুপ্রতিষ্ঠিত করে।

(তাফসিরে মা’আরেফুল কোরআন ও ইবনে কাছির অবলম্বনে)



মন্তব্য চালু নেই