হীরা ক্ষেতে পাওয়া যায় !!
বিশ্বের মূল্যবান রত্মগুলোর একটি হচ্ছে হীরা। কেবল নারী কেন, অনেক ধনী পুরুষও হীরার জন্য পয়সা খরচ করতে দ্বিধা করেন না। আর সেটা যদি জ্যোতিষ মহারাজ বলেন, তাহলে তো কোনো কথাই নেই।
কিন্তু সেই হীরা যদি ক্ষেতে পাওয়া যায়, তাও আবার বিনা পয়সায় তাহলে ক্যামন হবে? অনেকেই হয়তো ভাবতে পারেন- বিলকুল বাকওয়াস। ছোট্ট একটি হীরকখণ্ডের দাম যেখানে লাখ টাকা সেখানে হীরা মিলবে ক্ষেতে?
জ্বী, আমেরিকার আরকানসাস অঙ্গরাজ্যে সবার জন্য উন্মুক্ত হীরার ক্ষেত রয়েছে। এখানে চাইলেই আপনি খুঁজে নিতে পারেন হীরকখণ্ড। আর এই ক্ষেতের নাম হচ্ছে দ্য ক্র্যাটার ( হীরার গর্ত) অব ডায়মন্ডস স্টেট পার্ক।
পার্কের কর্মকর্তাদের ভাষ্য, প্রতিবছর ছয় শতাধিক বিভিন্ন রঙ ও গ্রেডের হীরকখণ্ড খুঁজে পান পার্কে আসা লোকজন । ১৯০৬ সালে খনিটি আবিষ্কৃত হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ৭৫ হাজার হীরকখণ্ড উত্তোলন করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৯ হাজার উত্তোলন করা হয়েছে ১৯৭৫ সালে খনিটি রাষ্ট্রীয়ভাবে সবার জন্য উন্মুক্ত করার পর।
হীরা হচ্ছে বর্ণহীন রত্ম যা, বিশুদ্ধ কার্বন থেকে সৃষ্ট। অন্য ভাষায় হীরা কার্বনের একটি বিশেষ রূপ মাত্র। বিজ্ঞানীদের মতে, ভূপৃষ্ঠের ৬০ থেকে ১০০ মাইল গভীরে প্রায় তিনশ কোটি বছর আগে হীরা গঠিত হয়।
আরকনাসসের ওই হীরা পার্কটির বিষয়ে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, প্রায় ১০ কোটি বছর আগে আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের ফলে পাথরের সঙ্গে হীরকখণ্ড বেরিয়ে আসে। এসব হীরা ওই পার্ক এলাকাটির ৮০ একর জায়গাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। বছরের পর বছর ধরে ধুলার স্তর জমতে জমতে এসব পাথর মাটির অনেক গভীরে চলে যায়। ১৯০৬ সালে জন হাডলস্টোন নামে এক কৃষক প্রথম এই এলাকায় হীরার খোঁজ পান। তার খামারটি ছিল হীরার খনির একেবারে মাঝখানে। হাডলস্টোন তার খুঁজে পাওয়া পাথরখণ্ড দুটি হীরা কি না নিশ্চিত ছিলেন না। তবে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন এগুলো দামী পাথর। স্থানীয় ব্যাংকের এক হিসাবরক্ষককে পাথর দুটি দেখালে তিনি এর বিনিময়ে মাত্র ৫০ সেন্ট দিতে রাজী হন। তবে হাডল এগুলো বিক্রি না করে পরীক্ষার জন্য নিউইয়র্কে পাঠিয়ে দেন। সেখানে থেকে তাকে জানানো হয় এগুলো হীরকখণ্ড। এগুলোর একটি ছিল তিন ক্যারট ওজনের সাদা হীরা এবং অপরটি ছিল দেড় ক্যারটের হলুদ বর্ণের হীরা।
হাডলস্টোনের এই হীরা পাওয়ার গল্প দ্রুত আরকানসাসে ছড়িয়ে পড়ে।হাজার হাজার লোক খনিটি নিজ চোখে দেখার জন্য ছুটে আসে। তবে তাদেরকে নিরাশ হয়েই ফিরতে হয়। কারণ হাডলস্টোন খনি থেকে হীরা উত্তোলনে আগ্রহী ছিলেন না। মাত্র ৩৬ হাজার ডলারে তিনি খনিটি একজনের কাছে বিক্রি করে দেন। ওই ক্রেতা্ বেশ কয়েকবার ওই এলাকায় বাণিজ্যিক খনি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হন। পরে বিশাল এই সম্পত্তিটির নাম দেওয়া হয় ‘হীরার গর্ত’ এবং এটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। তবে যারা এখানে প্রবেশ করতেন তাদের স্বল্প পরিমাণ অর্থ প্রদান করতে হতো। ১৯৫২ সালে সরকার পার্কটি কিনে নেয়। সেই থেকে এটি রাষ্ট্রীয় পার্কে পরিণত হয়। ১৯৭২ সালে খনি থেকে এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ওজনের হীরকখণ্ডটি পাওয়া যায়। এর ওজন ছিল ৭ দশমিক ৫৪ ক্যারট।
প্রতিবছর হীরা সংগ্রহ করতে কয়েক হাজার লোক এই খনিতে আসেন। নিজের ভাগ্য ফেরাতে খনিতে সতর্কতার সঙ্গেই তারা খোঁড়াখুঁড়ি করেন। তবে খুব লোকের ভাগ্যেই শিকে ছিঁড়ে।
মন্তব্য চালু নেই