হিরো আলমকে নিয়ে কেন এত ঠাট্টা-মশকরা!

হঠাৎ করেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ঝড়ের বেগে পরিচিতি লাভ করেন ‘হিরো আলম’ নামে বগুড়ার এই সহজ-সরল ছেলেটি। ফেসবুকের ওয়াল জুড়ে এখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এ একটি নাম। এরই মধ্যে হিরো আলমের দুইটি মিউজিক ভিডিও প্রকাশ পেয়েছে। আর তাতেই তিনি তুমুল জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। কিন্তু তাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ঠাট্টা-মশকরাও যেন কোনো অংশে কম হয় না।
তবে এ বিষয়টি করো মনে দাগ না কাটলেও, দাগ কেটেছে সিনিয়র সাংবাদিক সাগর লোহানীর মনে। আর তাই এসব বিষয় নিয়ে নিজের ফেসবুকে একটি পোষ্ট দিয়েছেন তিনি। সাগর লোহানী তার ফেসবুকে হিরো আলম ও তাকে নিয়ে ঠাট্টা-মশকরার বিষয়টি তুলে ধরেছেন।
২৯ জুন বুধবার সাগর লোহানী তার ফেসবুকে যে পোস্টটি দিয়েছে তা আওয়ার নিউজ বিডি’র পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো। সাগর লোহানী লিখেছেন, ‘অল্প কিছুদিনের মধ্যে ফেসবুকে সকলের কাছে পরিচিত হয়েছেন হিরো আলম নামে। এক সময় সিডি বিক্রি করতেন এই হিরো আলম ওরফে আশরাফুল আলম। তারপর শুরু করেন ক্যাবল নেটওয়ার্ক ব্যবসা নিজ গ্রাম বগুড়ার এরুলিয়া ইউনিয়নের এরুলিয়ায়।
অভাবের তাড়নায় ছোটবেলায় আলম আপন পরিবারের স্নেহ হারিয়ে আশ্রয় পান একই গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের বাসায়। আব্দুর রাজ্জাক তাকে ছেলের মতো করেই বড় করে তোলেন। স্থানীয় স্কুলে সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ে আলমকে নেমে পড়তে হয় জীবিকার তাগিদে। শেষ পর্যন্ত ডিশ ব্যবসায় হাত দিয়ে সফলতা অর্জন করেন এবং তার মাসে আয় ৭০-৮০ হাজার টাকা। স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে সুখেই আছেন আলম।
ক্যাসেটে দেখতেন মডেলদের ছবি। সেই থেকে স্বপ্ন মডেল হওয়ার। ২০০৮ সালেই করে ফেলেন একটা গানের সাথে মডেলিং। আলম দুইবার নির্বাচনেও দাঁড়িয়েছিলেন। হেরে গেছেন। তবে এলাকার মানুষজন তাকে পছন্দ করে। তাই নির্বাচনে এবার তিনি মাত্র ৭০ ভোটে হেরে দ্বিতীয় হয়েছেন।
একজন মানুষ জন্মে হারিয়েছেন পিতৃমাতৃ স্নেহ, অন্যের আশ্রয়ে বড় হয়েছেন, পেয়েছেন সামান্য কিছু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, অতি ক্ষুদ্র ব্যবসা দিয়ে শুরু করে আজ তিনি স্ত্রীসন্তান নিয়ে সচ্ছল শান্তির জীবন যাপন করছেন। স্বপ্ন দেখেছেন মডেল হবার, স্বপ্ন দেখেছেন নির্বাচিত প্রতিনিধি হবার। স্বপ্ন পূরণের চেষ্টা করেছেন। সফলও হয়েছেন।
একটি ক্ষুদ্র মানব জীবনে আর কি চাই?
আলম নিজের স্বচ্ছন্দ জীবনের জন্যে, জীবনের স্বপ্ন পূরণের জন্যে কারো ক্ষতি কিন্তু করেননি, কারো সম্পত্তি দখল করে্ননি, চুরি করেননি, ছিনতাই বা চাঁদাবাজী করে্ননি, কারো সাথে প্রতারণাও করেননি। কেবলমাত্র আত্মবিশ্বাসের উপর ভর করে জীবনের চাওয়াকে পাওয়ার সাথে মিলিয়ে নিয়েছেন।
যারা আলমকে নিয়ে ঠাট্টা তামাশা করছেন তাদের প্রতি একটা ছোট্ট অনুরোধ, একবার আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে প্রশ্ন করে দেখবেন আপনি জীবনে কতটা সফল???’
মন্তব্য চালু নেই