হিজাবের নামে অশালীনতা!

থ্রি কোয়াটার বোরকা, সাথে স্কিন টাইট চিপা প্যান্ট তাও আবার টাখনুর অনেকটা উপরে। আমাদের দেশে বর্তমানে কিছু ফাসেক মুসলিম নারীদের মাঝে এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। তারা এমন এক কৌশল অবলম্বন করেছে যেটাতে “সাপও মরবে লাঠিও ভাঙ্গবে না” আর তারই প্রতিফলন হচ্ছে এই থ্রি কোয়াটার বোরকা, সাথে স্কিন টাইট চিপা প্যান্ট। আমাদের জেনে রাখা উচিৎ- পর্দা করা একটি ইবাদাত, পর্দা করতে হবে একমাত্র আল্লাহ্র সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে। আমি পর্দা করব যাতে আমার স্বামীকে সন্তুষ্ট করতে পারি। কিন্তু ঐ সমস্ত মুসলিম নারীরা আসলে আল্লাহ্ সন্তুষ্ট করার লক্ষ্যে হিজাব পরে না, তারা সম্ভবত বাবা-মায়ের চাপে, স্বামীর ভয়ে অথবা স্টাইল করার লক্ষ্যে ঐ ভন্ডামিমূলক হিজাব পরে থাকে। এতে করে বাবা-মায়ের বা স্বামীর কথা অনুযায়ী হিজাবও পরা হল সাথে সাথে নিজেকে সুন্দর দেখাতে / সুন্দর প্রদর্শনীর কাজটাও হয়ে গেল।

বাবা-মায়ের বা স্বামীকেও সন্তুষ্ট করা গেল এর পাশাপাশি আমার উদ্দেশ্যও ঠিক থাকল। এটাই হচ্ছে- “সাপও মরল লাঠিও ভাঙ্গল না”। কিন্তু এই ফাঁকিবাজি সে কার সাথে করল? কার সাথে প্রতারণা করল? সে কি নিজেকেই নিজে ঠকাল না? এই হিজাব এখন অধিকাংশ মুসলিম নারীরাই গ্রহন করছে। তাদের নিকট এই হিজাবের ব্যাপক জনপ্রিয়তা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কিন্ত অধিকাংশ লোক যদি এই হিজাবের পক্ষে থাকে তাহলে কি এই ভন্ডামীর হিজাব ইসলামে বৈধ হয়ে যাবে?

“আর যদি আপনি পৃথিবীর অধিকাংশ লোকের কথা মেনে নেন, তবে তারা আপনাকে আল্লাহর পথ থেকে বিপথগামী করে দেবে। তারা শুধু অলীক কল্পনার অনুসরণ করে এবং সম্পূর্ণ অনুমান ভিত্তিক কথাবার্তা বলে থাকে। (সুরা আন’আমঃ ১১৬) কিছুদিন আগে দেখলাম, ইন্দোনেশিয়ায় হিজাবের নামে মুসলিম রমণীদের সুন্দরী প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হল। আর মুসলিম রমণীদের মধ্যে যারা হিজাব পালন করত তারাও কিছু না বুঝেই সেই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করল। কিন্তু এটি কি ইসালাম? এটি জায়েজ হবে কি না সে কথা একবারও ভেবে দেখল না।অথচ কুরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী এটি মোটেও জায়েজ না। এটি একটি প্রহসন। এর নাম ইসলাম নয়।অথচ কুরআনে রয়েছে- “ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষদেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে।

মুমিনগণ,তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। (সুরা আন নুরঃ ৩১) এই আয়াতে আল্লাহ্ বলেছেন- তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। আর আমরা জানি ফ্যাশন শো-তে সাজ- সজ্জা করে জোরে পদচারণা করতে হয় তাহলে এই ভ-ামি কি এই আয়াতের বিরুদ্ধে যায় না? অপর আয়াতে মহান আল্লাহ্ বলেন, “তোমরা গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করবে- মূর্খতা যুগের অনুরূপ নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না। (সুরা আল আহযাবঃ ৩৩) এই আয়াতে আল্লাহ্ বলেছেন- জাহিলি যুগের অনুরূপ নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না কিন্তু ফ্যাশন শো- তে নিজেদেরকে প্রদর্শন করতে হয়, এটি কি এই আয়াতের বিরুদ্ধে যায় না? এযুগের প্রায় সকলেই ইসলামকে মেনে চলে নিজের মনগড়া ইচ্ছা অনুযায়ী। রাসুল (সাঃ) এর নিয়ে আসা দ্বীন খুব কম মানুষই মেনে চলে।

ইসলামকে কেউ নিজের মনগড়া পদ্ধতিতে পালন করলে হবে না। সারা পৃথিবীর মানুষও যদি বলে তাহলেও হবে না,

সারা পৃথিবীর মানুষ একদিকে আর কুরআন-সুন্নাহ যদি বিপরীত দিকে থাকে তবে কুরআন-সুন্নাহই ঠিক, এটাই চিরন্তন। ইসলাম কারো বাপ-দাদার সম্পত্তি না যে, যার যেমন খুশি পালন করবে। ইসলাম কোন ছেলে খেলা নয়। ইসলাম একটি বিধান। এই বিধান আল্লাহ্ যেমনটা দিয়েছেন তেমনটাই থাকবে কেউ যদি অন্য কোন পন্থায় জীবন পরিচালনা করে ইসলামের নাম দেয় তাহলে কিয়ামতের দিন তা তার নিকট থেকে গ্রহন করা হবে না। মহান আল্লাহ্ বলে-“যে লোক ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ব্যাবস্থাপনার খোঁজ করবে, কস্মিণকালেও তা তার নিকট থেকে গ্রহ করা হবে না এবং আখেরাতের দিন সে হবে ক্ষতিগ্রস্তদের একজন।(সুরা আলে ইমরানঃ ৮৫) অতএব যেভাবে আল্লাহ্ বলেছেন আমাদেরকে সেভাবেই চলতে হবে।

লিখেছেন এমডি বাবুল



মন্তব্য চালু নেই