হাড়কিপটে বাবার সঙ্গে ছেলের কাণ্ড!

বাবা ধনাঢ্য হলেও বড়ই হাড়কিপটে। একমাত্র ছেলেকেও কোনো ছাড় দেন না। প্রকৌশলী ছেলে জীবিকার জন্য নিরূপায় হয়ে চালু করেন কোচিং সেন্টার। সেন্টারটি চালাতে গিয়ে ৫ লাখ টাকা ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন। এর মধ্যে বাবার কাছ থেকেও ধার করেন দুই লাখ টাকা। ওই টাকার জন্য ঋণগ্রস্ত ছেলের ওপর হাড়কিপটে বাবা মানসিক চাপ বাড়াতে থাকেন। এক পর্যায়ে নিরূপায় ছেলে ধনাঢ্য অথচ হাড়কিপটে বাবার কাছ থেকে টাকা আদায়ে স্ত্রী আর এক ছাত্রের সহযোগিতায় সাজান অপহরণ নাটক।

পরিকল্পনা মোতাবেক গত ৩ আগস্ট বিকেলে হাড়কিপটে ওই বাবাকে ফোন করা হয়। জানানো হয় তার একমাত্র ছেলেকে কোচিং সেন্টার থেকে বাড়ি ফেরার পথে অপহরণ করা হয়েছে। এসময় মুক্তিপণ হিসেবে ৩০ লাখ টাকা দাবি করা হয়।

একমাত্র ছেলেকে অপহরণের দুদিন পর গত ৫ আগস্ট বাবা বগুড়া সদর থানায় অপহরণ মামলা দায়ের করেন। এরপর শুরু হয় পুলিশের বিশেষ টিমের অভিযান। টানা ১০দিনের রুদ্ধশ্বাস অভিযানের পর আটক হন ছেলে, ছেলের স্ত্রী আর সেই ছাত্র। এরপর বেরিয়ে আসে আসল ঘটনা।

অপহরণ মামলার বাদী ও সেই হাড়কিপ্টে বাবার নাম আবুল হোসেন। তিনি বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার গজারিয়া গ্রামের আবুল হোসেন।

অপহরণের নাটকের পরিকল্পনাকারী হলেন- বগুড়া শহরের রিলায়েবল পলিটেকনিক ইনস্টিটিশনের টেক্সটাইল বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী ও হাড়কিপ্টে আবুল হোসেনের ছেলে মেহেদী হাসান (৩০)। মেহেদীকে সহযোগিতা করেন তার স্ত্রী আয়শা আকতার (২৪) ও একই প্রতিষ্ঠানের ছাত্র ইউছুব উদ্দিন (২৫)। এরা সবাই পরে পুলিশের হাতে আটক হন।

শনিবার দুপুরে বগুড়া জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে হাজির করা হয় আটককৃতদের। এসময় প্রেস ব্রিফিংয়ে বগুড়ার পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান পুরো ঘটনা তুলে ধরেন।

পুলিশ সুপার জানান, গত ৫ আগস্ট আবুল হোসেন বগুড়া সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় উল্লেখ করেন তার ছেলে প্রকৌশলী মেহেদী হাসান ৩ আগস্ট দুপুরের দিকে শহরের একটি কোচিং সেন্টার থেকে বাড়ি ফেরার পথে নিখোঁজ হন। বিকেল ৪টার দিকে মোবাইল ফোনে জানানো হয় মেহেদী হাসানকে অপহরণ করা হয়েছে এবং মুক্তিপণ হিসেবে ৩০ লাখ টাকা দাবি করা হয়।

মামলা দায়েরের পর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মণ্ডলের নেতৃত্বে গোয়েন্দা পুলিশের সমন্বয়ে একটি টিম অপহৃতকে উদ্ধারে কাজ শুরু করেন। বিভিন্ন তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে উদ্ধারকারী টিম জানতে পারে অপহৃত ব্যক্তি ৩ আগস্ট থেকে ঘন ঘন স্থান পরিবর্তন করে সন্তাহার, গাইবান্ধা, নীলফামারির সৈযদপুর, দিনাজপুর, পার্বতীপুর,নওগাঁ, খুলনা, বাগের হাট এবং সর্বশেষ ১২ আগস্ট পিরোজপুরে অবস্থান করছেন। এ সময়ের মধ্যের অপহৃতের বাবার কাছে বারবার মুক্তিপণ দাবি করা হচ্ছে।

সর্বশেষ ২০ লাখ টাকায় মুক্তি দেয়ার দফারফা করা হলে ডাচবাংলা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ৪টি একাউন্ট নাম্বারে টাকা পরিশোধের কথা বলা হয়। এক পর্যায়ে বাবা আবুল হোসেন পুত্রবধূ আয়েশা আকতারের পরামর্শে অপহরণকারীদের দেয়া প্রত্যেক অ্যাকাউন্টে ৫০ হাজার টাকা করে মোট ২ লাখ টাকা প্রদান করেন।

পরে পুলিশ অ্যাকাউন্ট নাম্বারগুলো যাচাই করে জানতে পারেন ৪টি নম্বরই অপহৃত মেহেদী হাসানের নামে। এছাড়াও পুলিশ অপহৃতের বাবার সঙ্গে যে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করছেন সেই তথ্যগুলো মুক্তিপণ দাবি করা ব্যক্তির কাছে চলে যাচ্ছে। এতে অপহৃতের পরিবারের সদস্যদের ওপর পুলিশের সন্দেহ বেড়ে যায়। একপর্যায় অপহৃতের পরিবারের সদস্যদের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ডেকে আনা হয়। সেখানে তাদের বিভিন্ন কৌশলে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করার একপর্যায়ে অপহৃতের স্ত্রী আয়শা আকতারের কাছে থাকা একটি মোবাইল ফোন উদ্ধারের পর পুরো রহস্য উদঘাটন হয়ে যায়। এরপর তার স্ত্রীর মাধ্যমে কৌশলে মেহেদী হাসানকে বগুড়ার গাবতলী ডেকে এনে গ্রেপ্তার করা হয়।

আটক হওয়ার পরে মেহেদী হাসান পুলিশকে জানায়, তিনি একটি কোচিং সেন্টার করতে গিয়ে ৫ লক্ষাধিক টাকা ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন। এছাড়াও তার বাবার কাছ থেকে দুই লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। সেই টাকা পরিশোধের জন্য তার বাবা তাকে মানসিক চাপে রেখেছিলেন। তাই বাধ্য হয়ে ধনাঢ্য বাবার কাছ থেকে টাকা আদায়ের কৌশল হিসেবে স্ত্রী আয়শা আকতারের সঙ্গে পরামর্শ করে তার প্রতিষ্ঠানের ছাত্র ইউছুবের সহযোগিতায় ওই অপহরণ নাটক সাজিয়েছিলেন।



মন্তব্য চালু নেই