হাত রাঙাবো মেহেদির কারুকাজে
মন রঙিন হয় ঈদের খুশিতে। সেই রঙ ছড়িয়ে পড়ে হাতেও। আবহমান কাল থেকে নকশাদার সাজে নিজের হাত রাঙিয়ে নেয়ার কৌশলে কম যায় না কেউ। ঈদের ছুটিতে অনেকেই আবার বিয়ের কনে বনে যান, কেউ অংশগ্রহণ করেন ভাইবোনের বিয়েতে। আর তাইতো মেহেদি পাতার কারুকাজ নিয়ে রূপ সচেতন মেয়েরা ভেবে রাখতে দেরি করেন না। নকশা কেমন হবে, হাত কতটা সাজবে, পোশাকের সঙ্গে মানানসই কিনা তা নিয়ে চিন্তা একাল সেকাল সবকালেই। মেয়েদের পাশাপাশি আবার সামান্য নকশায় হাত সাজিয়ে নেন অনেক পুরুষ।
হাত রাঙাতে ফুল, লতা-পাতার কত রকম আল্পনা শোভা পাচ্ছে হাতের পিঠ এবং তালুতে। কখনো বা তালুর নিচের ভাগ হয়ে আধাআধি পর্যন্ত। আবার কখনো আঙুলের ডগায় লতানো পাতার মাথায় ছোট তারা ফুল আর বুটি তো আছেই। হাতের তালু ছাড়িয়ে মেহেদিটা কখনো বা চলে যায় একেবারে কনুই অবধি। কখনো বা থেমে যায় মাঝপথে। কখনো বা হাতের তালু ছাপিয়ে তালুর বিপরীতে হাতের ওপরে। কালো মেহেদির ভেতর লাল মেহেদি দিয়ে তার ওপর পোশাকের সঙ্গে রং মিলিয়ে লাগিয়ে নিতে পারেন গ্লিটার মেহেদির বুটি। শুধু তাই নয়, রমনীরা নিজেদের সাজাতে পায়ের সাজও বাদ দিচ্ছেন না।
সাধারণ পোশাকে মেহেদির ডিজাইনে অসংখ্য প্যাঁচ কিংবা ফুলের প্রয়োজন নেই। কখনো কখনো সাধারণ ডিজাইন হয়ে ওঠে আকর্ষণীয়। এক্ষেত্রে হাতের তালু, পিঠ, পায়ের পাতায় হতে পারে খুবই হালকা ধরনের ডিজাইন। তার সঙ্গে পরতে হবে মানানসই স্যান্ডেল।
কিন্তু অভিজাত পোশাকের ক্ষেত্রে চাই নকশারও অভিজাত রূপ। হাতের আঙ্গুল, তালু এবং উপর পিঠে নকশার দিকে দিতে হবে বিশেষ নজর। ঠিকভাবে নকশা করতে পারলে মেহেদির এ ডিজাইন হতে পারে অত্যন্ত স্টাইলিশ। এটি শুরু করতে হবে হাতের তর্জনির মাথা থেকে। ক্রমে তা কবজি, তারপর আরও বিস্তৃত করতে হবে। এ ডিজাইনে ফুল, ডট ও লতা-পাতা থাকতে পারে। পশ্চিমারা অনেকেই দেহে ট্যাটু আঁকে। কিন্তু এ ট্যাটুর বিকল্প হিসেবে এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে মেহেদির ডিজাইন। ফুলের ডিজাইন এক্ষেত্রে বহু মানুষেরই পছন্দ।
কাঁধেও হতে পারে মেহেদির ডিজাইন। মজার ব্যপার হল এটি প্রয়োজনমতো কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা যায়। আর প্রয়োজনের সময় তা ফুটিয়েও তোলা যায়। বাটা মেহেদি হাতে দিতে খুব মিহি করে নিতে হবে। তারপর ছেঁকে নিতে হবে ছাঁকুনিতে। বাজারে খালি টিউব পাওয়া যায়। তা কিনে এনে তাতে ভরে নিতে পারেন সহজেই। অথবা বাটার পেপার ত্রিকোনা করে তাতে মেহেদি ভরে কোনাকুনি করে মুড়িয়ে আটকে দিন টেপ দিয়ে। এবার সুচ দিয়ে ছোট একটা ছিদ্র করে নিন।
এখন বাজারে নানা ব্রান্ডের টিউব মেহেদি পাওয়া যায়। সঙ্গে থাকে আলপনা আঁকা পেপার। যা দেখে পছন্দমত নিজেই সাজাতে পারেন হাত। ডিজাইন পেপারের সঙ্গে একটু ভিন্নতা সংযোজন করে নতুন কোন নকশা আনতে পারেন। যা আপনাকে অন্য সবার থেকে আলাদা করবে।
সব আয়োজনের মূল লক্ষ্য এখন ঈদকে ঘিরে। তাই মেহেদি রাঙানো হাতের প্রথম উপস্থাপনাও হতে পারে ঈদের দিন। আর সেজন্য চাঁদ রাতেই হোক পছন্দের যেকোনো ডিজাইন দিয়ে হাত সাজানো। মেহেদিতে হাত রাঙানোর আগে ঢিলেঢালা পোশাক পরে নিতে হবে। একটু গাঢ় রঙের পোশাক পরুন, যাতে কাপড়ে মেহেদির দাগ লাগলেও বোঝা না যায়। এবার হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে খুব ভালোভাবে মুছে নিন। কোনো ক্রিম বা ময়েশ্চারাইজার লাগাবেন না হাতে। পছন্দমতো মেহেদি লাগানোর পর কমপক্ষে এক ঘণ্টা হাতে মেহেদি রাখবেন। এ সময় হাতে পানি লাগানো যাবে না। শুকিয়ে গেলে মেহেদিটা হালকা করে ঝরিয়ে নিন। তারপর লেবুর রস বা চিনির শিরা তুলোয় নিয়ে হাতে লাগান। ততক্ষণে কিন্তু চমৎকার লাল হয়ে উঠেছে আপনার মেহেদির নকশা। মেহেদিরাঙা হাতের সঙ্গে লাল বা গোলাপি রঙের নেইলপলিশ দেখতে খুব ভালো লাগে। নখে ফ্রেঞ্চ ম্যানিকিওর করালেও ভালো লাগবে।
মন্তব্য চালু নেই