হাতের লেখা মানুষ চেনায়
‘স্ত্রিয়াশচরিত্রম দেবা না জানন্তি’- এটি একটি সংস্কৃত প্রবাদ। বাংলায় যার অর্থ নারী অর্থাৎ মহিলাদের মন দেবতাদের পক্ষেও বোঝা অসম্ভব। বস্তুত এমন প্রবাদ ব্যবহারের ক্ষেত্রে মহিলাদের জড়িয়ে ফেলায় স্বাভাবিকভাবেই পুরুষ জাতির ওপর মহিলারা অনেকটাই ক্ষুণ্ণ।
কিন্তু একটু ভাবলেই বোঝা যাবে, মন বোঝার ক্ষেত্রে একমাত্র মহিলারাই নিজেদের অন্ধকারে রাখেন, তা মোটেই ঠিক নয়। কম যান না পুরুষরাও। আসলে পুরুষ বা মহিলা যেই হোক না কেন, আসলে মানুষের মনের গভীরতা মাপতে বসলে এর পরিধি মাপা সম্ভব নয় বললেই চলে।
মানবমস্তিষ্ক সবচেয়ে জটিল। ফলে তার ভাবনাচিন্তা প্রকাশের ভঙ্গিও পশু-পাখিদের মতো নিতান্ত সাদামাঠা বা সহজ সরল নয়। আর বিশেষ এই গুণপ্রাপ্ত হওয়ার জন্যই মানবজাতি আজ সমগ্র বিশ্ব শাসন করছে। যাই হোক, সে প্রসঙ্গ ভিন্ন।
মানুষের মনে কী আছে আর কী নেই, তা অন্যের পক্ষে তো বটেই, অনেক সময় নিজের মনের খবরও অজানাই থেকে যায় সেই মানুষটির কাছে। অর্থাৎ অনেক চেষ্টা করেও নিজেদেরকে পুরোপুরি চিনতে পারা যায় না। নিজেদের শক্তি বা দুর্বলতা সম্বন্ধে আমরা অন্ধকারে থাকি। অপরাধীকে জেরা করার সময় পুলিশ তাকে হাজারও প্রশ্ন করে। প্রশ্নবাণে জর্জরিত হয়ে অবশেষে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে অপরাধী ব্যক্তিটি। তার মুখ থেকেই বেরিয়ে আসে সব সত্যি কথা।
কথায় বলে, মানুষের মুখই হলো তার মনের আয়না। অর্থাৎ একটি মানুষ ভালো না খারাপ, বোকা না চালক, সে কেমন মনের মানুষ ইত্যাদি বিষয় সেই মানুষটির মুখ দেখলেই বোঝা যায়। কথাটা একেবারে ভুল নয়। তবে মানুষের মুখ দেখে সেই মানুষটি সম্পর্কে সবকিছু গড় গড় করে বলে দেওয়া যায়, এটাও ঠিক নয়। তাহলে একটি মানুষকে প্রকৃতভাবে চেনার উপায় কি?
উপায় আছে, একজন মানুষকে শতকরা নব্বই ভাগেরও বেশি চেনা সম্ভব মানুষটির হাতের লেখা দেখে। যারা লিখতে পারেন না তাদের কথা এখানে ধরা হচ্ছে না। যারা হাতের লেখা, নকশা, ছবি প্রভৃতি নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করেন তাদের বলা হয় গ্রাফোলজিস্ট। সম্প্রতি গ্রাফোলজিস্টরা জানিয়েছেন, একজন মানুষকে না দেখেও তার চরিত্র বা মনের নানা দিক, এমনকি সেই মানুষটি সাম্প্রতিক- অতীতে কী কী করেছেন তা প্রায় নির্ভুলভাবে বলা সম্ভব।
শুধু হাতের লেখা দেখে যে কোনো মানুষের নানা তথ্য জানা যেতে পারে। গ্রাফোলজিস্টদের বক্তব্য, একজন মানুষের হাতের লেখা থেকে জানা যায় না এমন কোনো বিষয় নেই বললেই চলে। হাতের লেখাই চিনিয়ে দেবে মানুষটি সৎ না অসৎ, তিনি রাশভারী লোক নাকি আমুদে প্রকৃতির, রক্ষণশীল নাকি উদার প্রকৃতির, স্মার্ট নাকি বোকা ধরনের।
এমনকি তার জীবনযাপনের অন্যান্য দিক সম্পর্কেও সবকিছু জানা সম্ভব শুধু হাতের লেখা থেকে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, হাতের লেখা বিশ্লেষণ করে যা উঠে আসে তা নির্ভুল। হাতের লেখা কোনো মিথ্যা বলে না। যা বলবে তাই-ই সত্যি।
হাতের লেখায় নিজের মনের ছবিটা স্পষ্ট ধরা দেয়। বোঝা যায় নিজের শক্তি বা দুর্বল দিকগুলো। ত্রুটিগুলো শুধরে নিলেই আমরা হয়ে উঠতে পারি একজন সফল ও আত্মবিশ্বাসী মানুষ। আর এভাবেই গ্রাফোলজি হয়ে উঠে আমাদের সাফল্যের চাবিকাঠি।
মন্তব্য চালু নেই