স্মার্টফোন অ্যাপ বলে দেবে আপনার আপেলটি পেকেছে কিনা!

বিজ্ঞানীরা এমন একটি হাতে-ধরা যন্ত্র উদ্ভাবন করেছেন, যা ক্ষুদ্র একটি সেন্সরের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে বলে দেবে কোনো ফল পেকেছে কিনা। এ ক্ষেত্রে ফলটি টিপে দেখতে হবে না।

দোকানদারদের জন্য এই ডিভাইস খুবই উপাকারি হবে। কারণ এর মাধ্যমে দোকানদাররা সহজেই কোন ফলগুলো বিক্রির জন্য দোকানে আগে ওঠাতে হবে সে ব্যাপারে সহজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।

চলতি সপ্তাহের বিজ্ঞান বিষয়ক প্রতিবেদনসমূহে নতুন এই যন্ত্রটিকে একটি ক্ষুদ্র এবং সাশ্রয়ী স্পেকটোমিটার হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এটি তৈরি করতে ২৫০ ডলারেরও কম খরচ পড়বে। আর তার ছাড়াই একটি স্মার্টফোনের সঙ্গে যুক্ত করা যাবে।

স্পেকটোমিটার হলো এমন একটি বৈজ্ঞানিক হাতিয়ার যা অনেক উপাদানের ভেতরে আলোর সঙ্কেত বিতরণ করে। কোনো বস্তু কী পরিমাণ আলো বিকীর্ণ, শোষণ করে বা ছড়িয়ে দেয় তা নিরুপণে বিজ্ঞানীরা স্পেকটোমিটার ব্যবহার করেন। এর মাধ্যমে কোনো বস্তু শণাক্ত করা বা তা নিয়ে গবেষণার কাজ করেন বিজ্ঞানীরা।

জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা স্পেকটোমিটার ব্যবহার করে নক্ষত্রে, গ্রহ, ধুমকেতু এবং গ্রহাণুর রাসায়নিক উপাদান নির্ণয় করেন।

ভূ-তাত্বিকরা এই যন্ত্র ব্যবহার করে স্থলজ শিলার গাঠনিক উপাদানগুলো নির্ণয় করেন।
আলোর বিচ্ছুরণ ঘটায় এমন বিশেষ ধরনের ব্যাক্টেরিয়া এবং অন্যান্য জৈবিক যৌগের গবেষণায় এটি ব্যবহৃত হয়।

ঐতিহ্যগতভাবে স্পেকটোমিটার খুবই ব্যয়বহুল ছিল এবং একটি যন্ত্রের পেছনে কয়েকহাজার ডলার খরচ পড়ত। এছাড়া গবেষণাগারের সেটিং ছাড়া এটি ব্যবহার করাও কঠিন ছিল। আর এটি চালাতে একটি ল্যাপটপও লাগে।

যন্ত্রটি ছোট করার জন্য বিজ্ঞানীরা মাইক্রো-ইলেকট্রো-মেকনিকাল সিস্টেম বা এমইএমএস দিয়ে একীভুত স্পেকটোমিটার তৈরি করেন। এমইএমএস প্রযুক্তির মাধ্যমে অবিশ্বাস্যভাবে যন্ত্রটির আকার কামিয়ে আনা সম্ভব হয়।

বিজ্ঞানীরা যন্ত্রটি দিয়ে একটি ফল কতটুক পেকেছে তা নির্ণয়ের চেষ্টা চালান। আপেল, কমলা এবং কলার মতো ফলের চামড়ায় থাকা ক্লোরোফিলের অতিবেগুনি প্রতিপ্রভার সঙ্গে ফলগুলোর ভেতরের কোমলতার বা নরম হওয়ার মাত্রার একটি সম্পর্ক রয়েছে। স্পেকটোমিটার ব্যবহার করে ক্লোরোফিলের অতিবেগুনি প্রতিপ্রভার মাত্রা নির্ণয় করে ফলগুলোর ভেতরের কোমলতা বা নরম হওয়ার মাত্রাও নির্ণয় করা সম্ভব। এবং ফলগুলো খাওয়ার উপযোগী হয়েছি কিনা বা কবে নাগাদ খাওয়ার উপযোগী হবে তাও বলে দেওয়া সম্ভব হবে। তবে যন্ত্রটি এখনো গবেষণাগারেই সীমাবদ্ধ আছে।

ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির (এমআইটি) মিডিয়া ল্যাবের পোস্ট ডক্টরাল গবেষক আংশুমান দাস বলেন, “স্পেক্টোমিটার ব্যবহার করে ফলের পরিপক্কতা পরীক্ষা পদ্ধতি ধ্বংসাত্মক নয় এবং দ্রুত গতির। এতে খুব বেশি স্যাম্পল প্রস্তুতির দরকার হয় না। ফলে এটি আকর্ষণীয় একটি পদ্ধতি।”

দাস এবং তার সহকর্মীরা যন্ত্রটি ১০০টি আপেল পরীক্ষার কাজে ব্যবহার করে দেখেছেন। প্রতিবার, স্পেকটোমিটারটি একটি ফলের চামড়ায় ধরা হয়। এরপর এর ভেতরের এলইডি আলো সক্রিয় করা হয়। আপেলের ত্বকে থাকা ক্লোরোফিল অতিবেগুনি তরঙ্গদৈর্ঘ্যে ওই আলো পুনঃবিচ্ছুরিত করে। যা যন্ত্রটি দিয়ে পরিমাপ করা হয়। আর ওই পরিমাপগুলো একটি স্মার্টফোনে পাঠানো হয়। স্মার্টফোনটি প্রেরিত তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করে ফলটি পেকেছে কিনা তা নির্ণয় করে।

সব ধরনের আপেলে যন্ত্রটি ঠিকভাবে কাজ করে কিনা তা দেখার জন্য ভিন্ন রঙের তিন জাতের আপেলের ওপর পরীক্ষা চালানো হয়। এতে দেখা যায় যন্ত্রটি সুস্বাদু গোল্ডেন আপেলের বেলায় বেশি কার্যকর হয়েছে। কারণ এ জাতের আপেলের সবুজ এবং হলুদ ত্বকে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ ক্লোরোফিল থাকে। যা অনেক বেশি শক্তিশালি প্রতিপ্রভার সঙ্কেত পাঠাতে সক্ষম। যন্ত্রটি লাল আপেলের ওপর সবচেয় কম কার্যকর ছিল। তবে লাল জাতের আপেলের ওপরও যন্ত্রটির কার্যকারিতা বাড়ানোর জন্য গবেষণা চলছে।

গবেষকরা জানান, নতুন এই যন্ত্রটি কৃষকদেরকে ফল তোলার সময় হয়েছে কিনা এবং দোকানদারকে কোন ফলগুলো আগে বিক্রি করতে হবে তা নির্ণয়ে সহায়তা করবে। আর ক্রেতরাও হয়তো একসময় যন্ত্রটির আরো ক্ষুদ্র সংস্করণ ব্যবহার করে কোন ফলটি কতটুকু পেকেছে বা কোনো ফল নষ্ট হয়ে গেছে কিনা তা নির্ণয় করতে পারবেন।

দাস বলেন, এছাড়া ভূ-তাত্বিকরা মাঠে, শিক্ষকরা শ্রেণিকক্ষে এমনকি স্বাস্থসেবাখাতের পেশাদাররা রোগীদের রোগ নির্ণয়ে যন্ত্রটি ব্যবহার করতে পারবেন।

বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, যন্ত্রটি খুব শিগগিরই বাজারে ছাড়ার কোনো পরিকল্পনা নেই তাদের। তবে যন্ত্রটির উন্নয়নে বা অনুরুপ যন্ত্র তৈরিতে দরকারি সব তথ্য সবার জন্য সহজলভ্য বা উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
দাস বলেন, ইন্টারনেটের কল্যাণে এই কয় বছর আগেও যা শুধু বিজ্ঞানী এবং কম্পানিগুলো বানাতে পারত তা এখন আপনি চাইলে আপনার গ্যারেজে বসেও বানাতে পারবেন। আমরা আশা করি সকলে মিলে যন্ত্রটির কার্যক্ষমতার আরো উন্নয়ন সম্ভব হবে।



মন্তব্য চালু নেই