নিহতের স্ত্রীর স্বীকারোক্তি
স্বামী হত্যার মিশনে পরকীয়া প্রেমিক
পরকীয়ার জের ধরেই পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয় কিশোরগঞ্জের ভৈরবের পরিবহন ব্যবসায়ী নবী হোসেনকে। তার স্ত্রী সুমনা বেগম ও প্রেমিক নজরুল মিলে ঘুমন্ত অবস্থায় গলা কেটে হত্যা করে নবীকে। এরপর লাশ কয়েক টুকরা করে বস্তা ও ব্যাগে করে একাধিক স্থানে ফেলে দেয়া হয়।
কিশোরগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের বিচারক হামিদুল ইসলামের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ঘটনার বর্ণনা দেন ঘাতক স্ত্রী সুমনা।
গত বৃহস্পতিবার বিচারক হামিদুল ইসলাম জবানবন্দি রেকর্ড করেন।
শনিবার মামলার তকন্তকারী কর্মকর্তা ভৈরব থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবুল কায়েস আকন্দ এ তথ্য জানান।
জবানবন্দিতে সুমনা জানিয়েছেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজেশ্বর গ্রামে তার ও তার বাল্যবন্ধু কাজী নজরুলের বাড়ি। ছোটবেলা থেকেই দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বেশ কয়েক বছর আগে ঢাকার এক ব্যক্তির সঙ্গে সুমনার বিয়ে হয়। সেখানে কন্যা সন্তানের মা হন সুমনা। কিন্তু সেখানে সংসার টেকেনি তার। এরপর তার বিয়ে হয় নবী হোসেনের সঙ্গে।
চার বছর ধরে ভৈরব পৌর শহরের চণ্ডীবের দক্ষিণপাড়ার রওশন আরা বেগমের বাড়িতে ভাড়া বাসায় থাকতেন সুমনা। কিছুদিন ধরে নজরুলের সঙ্গে সুমনার ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। তাদের মধ্যে গোপন সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বছর খানেক আগে থেকে সুমনাকে ভরণপোষণের টাকা দেয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন নবী হোসেন। এ কারণে নবীর প্রতি সুমনা অনেকটা ক্ষুব্ধ ছিলেন। এ রকম বাস্তবতায় নজরুলকে নিয়ে সুমনা তাকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ২১ ডিসেম্বর রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় নবীর মাথায় আঘাত করেন নজরুল। এতে অচেতন হয়ে যান নবী। পরে খাট থেকে মেঝেতে শুইয়ে প্রথমে তার গলা কাটা হয়। মাথা বিচ্ছিন্ন করার কাজটি করেন নজরুলের এক সহযোগী। হাত কাটেন আরেক সহযোগী। পা দুটি কাটেন নজরুল নিজেই। লাশ টুকরা টুকরা করার পর দেহটি প্রথমে ঘরের পেছনের মাটিতে চাপা দেয়া হয়। এরপর শরীরের বিভিন্ন অংশ বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন স্থানে ফেলে রাখা হয়। ঘটনার তিনদিন পর ২৪ ডিসেম্বর মালগুদাম এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়ালে পুলিশে খবর দেয় এলাকাবাসী। পরে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে।
ভৈরব থানার এসআই আবুল কায়েস আকন্দ বলেন, মূলত কাজী নজরুল একজন লম্পট প্রকৃতির লোক। দীর্ঘদিন ধরে কোনো রকম রেজিস্ট্রেশন ছাড়াই সুমনার সঙ্গে স্বামী স্ত্রীর পরিচয়ে মেলামেশা করে আসছিলেন। এর আগে আরো দুটি বিয়ে করেছিলেন নজরুল। তাদের সঙ্গে ছাড়াছাড়ির পর ভৈরবের এক কাতার প্রবাসীর স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। সেখানেও কিছুদিন মেলামেশার পর বিষয়টি জানাজানি হয়। এর পর সুমনার সঙ্গে গভীর সম্পর্ক তৈরি হয়। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও রয়েছে।
সুমনার জবানবন্দির বরাত দিয়ে এসআই আবুল কায়েস আরো বলেন, রিমান্ডে আরো তথ্য পাওয়া যাবে। তবে, যেহেতু সব স্বীকার করেছে সুমনা, তাই আর রিমান্ডের প্রয়োজন নেই। এরপরও নজরুল ও তার সহযোগী কতজন ছিল, সেই বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য আগামী সোমবার আবারো রিমান্ডের শুনানি হবে। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২৫ ডিসেম্বর ভৈরব পৌরশহরের মালগুদাম এলাকা থেকে নবী হোসেনের হাত-পা-মাথাবিহীন খণ্ডিত দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরদিন ভৈরব শহর থেকে রাসেল মিয়া নামে নবীর এক পরিচিত ব্যক্তিকে আটক করা হয়। তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের সূত্র ধরে ২৮ ডিসেম্বর ভোরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের বিজেশ্বর এলাকা থেকে হত্যাকাণ্ডে জড়িত নজরুল ইসলাম (৩৮) ও সুমনা বেগমকে (৩০) আটক করা হয়। তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই দিনই পৌর শহরের দক্ষিণপাড়া এলাকা থেকে মাথা উদ্ধার করা হয়। পরে সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতু এলাকা থেকে হাত ও পা উদ্ধার করা হয়।
ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানান, গত সোমবার থেকে সুমনা ও নজরুল পাঁচ দিনের রিমান্ডে ছিলেন। রিমান্ডে আনার পর হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করায় বৃহস্পতিবার সুমনার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়।
কিশোরগঞ্জের সহকারী পুলিশ সুপার (বাজিতপুর সার্কেল) মৃত্যুঞ্জয় দে বলেন, এরই মধ্যে নজরুলের পাঁচদিনের জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হয়েছে। আবারও সাতদিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। বর্তমানে সুমনা ও নজরুল কারাগারে রয়েছেন।
মন্তব্য চালু নেই