স্বামী যখন পর্ণগ্রাফি আসক্ত, কী করবেন আপনি?
আমাদের মাঝে একটি প্রচলিত ধারণা আছে যে “পুরুষ মানুষ তো পর্ণগ্রাফি দেখবেই!” যদিও এটা নিতান্তই একটি ভুল ধারণা। এমন অসংখ্য পুরুষ আছেন যারা পর্ণগ্রাফি দেখা দূরে থাক, এই জিনিসটি মনেপ্রানে ঘৃণা করেন। আবার অনেক নারীও আছেন যারা রীতিমত পর্ণগ্রাফিতে আসক্ত। তবে হ্যাঁ, আমাদের দেশে নারীর চাইতে পুরুষদের পর্ণগ্রাফি আসক্তি অনেক বেশী। যেহেতু যৌনতার বিষয়ে কথা বলা আমাদের সমাজে নিষিদ্ধ, সেহেতু যৌনতার প্রতি স্বাভাবিক আগ্রহটাই টেনে নিয়ে যায় পর্ণগ্রাফির দিকে। অনেক পুরুষেরই পর্ণগ্রাফির প্রতি আগ্রহ তৈরি হয় এই কারণেই…
পর্ণগ্রাফির খারাপ ও নোংরা দিক গুলো সম্পর্কে কমবেশি সকলেই জানেন, নতুন করে বলার কিছু নেই। কিন্তু যে পুরুষটি পর্ণগ্রাফি আসক্ত, তাঁর প্রেমিকা বা স্ত্রীর ব্যাপারে অনেকেই জানেন না। কিংবা তাঁদের অনুভূতির কথা কেউ জানেন না। কারো কারো ভালোবাসার মানুষটি পর্ণগ্রাফিকে মোটেও খারাপ মনে করে না, বরং প্রেমিকা/স্ত্রীকে চাপ দেন পর্ণ ভিডিও দেখার জন্য। কেউ আবার পর্ণ ভিডিওতে দেখানো কাজকর্ম করতে চান স্ত্রীর সাথে। কেউ কাজের মেয়ের সাথে পর্ণ ভিডিও দেখতে গিয়ে ধরা পড়েছেন। কেউ কেউ কেবল দেখেন, আসক্ত নন কিন্তু ছাড়তেও পারেন না, কেউ আবার চাহিদা মেটাতে দেহ ব্যবসায়ীদের কাছে যান… ইত্যাদি হরেক রকম সমস্যা।
হ্যাঁ, অধিকাংশ নারী পর্ণগ্রাফি ঘৃণা করেন মনেপ্রানে। প্রিয় পুরুষটি পর্ণ আসক্ত, এই ব্যাপারটি একজন নারীর জন্য যতটা বড় ধাক্কা ততটা আর কোন কিছুতেই নয়। ঠিক পরকীয়ার মতই ভয়াবহ একটি বিষয়। পরকীয়া জানায় যে স্বামী আর আপনাকে ভালোবাসেন না এবং ভিডিওতে দেখানো নারীতেই তাঁর আসক্তি অধিক। আর পর্ণ আসক্তি জানিয়ে দেয় যে স্বামী আপনার সাথে যৌন সম্পর্ক নিয়ে সন্তুষ্ট নন, তাঁর কাছে আপনার কোন মূল্য নেই এবং তিনি একজন রুচিহীন মানুষ যার কাছে কোন নারীই নিরাপদ নয়। আমি জানিনা কোন নারী কীভাবে এই ভয়াবহ বেদনা সহ্য করেন যখন পর্ণগ্রাফি নামক অভিশাপ কেড়ে নেয় তাঁর ভালোবাসার মানুষ, সুখের সংসার, মিষ্টি সম্পর্ক, আত্ম বিশ্বাস সবকিছুকেই…
এইসবই আবেগ-অনুভূতির কথা, বাস্তবতার জগতে যা হয়তো নিতান্তই মূল্যহীন। প্রশ্ন হচ্ছে স্বামী পর্ণ আসক্ত, এই ব্যাপারটি জানার পর কী কী করতে পারেন আপনি?
- -প্রথমেই নিজেকে সামাল দিন। নিজের আবেগের অপর একটু হলেও নিয়ন্ত্রণ আনার চেষ্টা করুন। আপনি নিজেই যদি ভেঙে পড়েন, তাহলে কাজের কাজ কিছুই হবে না। বরং নিজের মনকে শান্ত করুন পরিস্থিতি বুঝতে।
- -পরের পর্বটি হচ্ছে স্বামীর সাথে কথা বলার। হ্যাঁ, রাগ করে চেঁচামেচি করার অধিকার আপনার অবশ্যই আছে এবং আপনি সেটা করতেও পারেন। কিন্তু সেটা করে আসলে কোন সমাধান হবে না। রাগারাগি হবে, মাফ চাওয়া হবে, কিছুদিন পর পরিস্থিতি আবার আগের মত। স্বামীর সাথে আসলে ঠাণ্ডা মাথায় কথা বলতে হবে আপনাকে। জানতে হবে তিনি কেন এমন করছেন এবং কী তাঁর উদ্দেশ্য। এছাড়া পরিস্থিতিটা বুঝতে পারবেন না আপনি।
- -তবে কেবল মুখের কথায় ভরসা করে থাকবেন না। কিছু কাজ করতে হবে আপনার নিজেও। যেমন ধরুন, স্বামী কোন ধরণের পর্ণগ্রাফির প্রতি আসক্ত। তিনি কি কেবল ছবি ও ভিডিও দেখছেন? নাকি বাস্তব জীবনেও সোশ্যাল মিডিয়ায় তেমন সঙ্গিনী খুঁজে নিয়েছেন? পর্ণ ছবি ও ভিডিও তৈরি করছেন না তো? কিংবা চাইল্ড পর্ণের প্রতি আসক্তি নেই তো? জেনে রাখুন, এসব অনেক কিছুই কিন্তু আমাদের দেশে আইনের চোখে অপরাধ।
- -পর্ণ আসক্ত পুরুষেরা প্রায়ই বহুগামী হয়ে থাকেন। নিজেদের নোংরা লালসা চরিতার্থ করতে তাঁরা পরকীয়া করা ছাড়াও কাজের মেয়ে কিংবা দেহ ব্যবসায়ীদের আশ্রয় নেন। অনেকে নিজের নারী আত্মীয়া বা উঠতি বয়সের মেয়েদের ধর্ষণ করেন। স্বামীর পর্ণ আসক্তি নিশ্চিত হবার পর এই ব্যাপারগুলোও আপনাকে নিশ্চিত হতে হবে।
- -দিন শেষে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনাকেই। আপনি কি তাঁকে শুধরে নিতে চান, নাকি আপনার পক্ষে এসব মেনে নেয়া সম্ভব নয়- এই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন কেবল আপনি। তবে হ্যাঁ, সংসার ভাঙার আগে বা কোন কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে তাঁকে সংশোধন হবার একটি সুযোগ দিন। যেসব পুরুষের পর্ণ আসক্তি কেবলই ছবি ও ভিডিও দেখার মাঝে সীমাবদ্ধ, তাঁদেরকে সহজেই সংশোধন সম্ভব। তাঁর সদিচ্ছা, আপনার সাপোর্ট এবং মনরোগ বিশেষজ্ঞ বা কাউন্সিলিং এর সহায়তা নিয়ে এই বিষয়টি থেকে বের হয়ে আসা সম্ভব।
- -এসব কিছু মাঝে একটি বিষয়ে কঠিন দৃষ্টি রাখুন। আর সেটা হচ্ছে পর্ণগ্রাফির বিষাক্ত স্পর্শ যেন আপনার সন্তানকে ছুঁতে না পারে।
- -স্বামী যদি প্রতিজ্ঞা করেন যে গতিনি আর এমন কাজ করবেন না এবং এই পথে থেকে সরে আসবেন, তাহলে তাঁকে যথাসম্ভব সহায়তা করুন। তবে হ্যাঁ, অন্ধ বিশ্বাস করবেন না। কারণ এই অভ্যাস ফিরে আসে খুব সহজেই।
পরামর্শ দেয়া সোজা, কিন্তু পালন করা কঠিন। তবে দিন শেষে এটা আপনার সম্পর্ক, আপনার জীবন, আপনার সংসার। সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনাকেই। পর্ণগ্রাফি আসক্ত হওয়া একটি মানসিক সমস্যা। কিন্তু পর্ণগ্রাফির হাত ধরে যে সমস্যা গুলো তৈরি হয় পুরুষের মাঝে, সেগুলো চারিত্রিক। তাই বুঝে-শুনে ঠাণ্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনাকেই।
(আগামী পর্বে থাকবে স্বামীর পর্ণগ্রাফি আসক্তি দূর করার উপায়)
সূত্র-
সাইকোলজি টুডে, উইকি হাউ ও ফ্যামিলি লাইফে প্রকাশিত একাদিক প্রবন্ধ অবলম্বনে।
মন্তব্য চালু নেই