স্বামী খেকো এক ভয়ঙ্কর নারী !
ইসাও কাহেকি যাকেই বিয়ে করেন তারপর মাস কয়েকের মাঝে তিনি মারা যান। জাপানের একজন ৭৫ বছর বয়সী অবসরভোগী যখন গত ডিসেম্বরে মারা যান তখন প্রথমে পুলিশ মনে করেছিল যে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। তার স্ত্রী ইসাও এর আগে কয়েকটি বিয়ে করেছেন।
ব্যস এতেই একজন চৌকস গোয়েন্দা সন্দেহপ্রবণ হয়ে পড়েন। তিনি দেখতে পান যে কাহেকি দীর্ঘদিন বিপত্মীক থাকলেও হঠাৎ করেই এক নারীকে বিয়ে করেছিলেন। অনলাইন ডেটিং এজেন্সির মাধ্যমে কাহেকির সাথে ওই নারীর পরিচয় হয়েছিল মাত্র কয়েক দিন আগেই।
কাহেকির রক্ত পরীক্ষায় দেখা গেল তার রক্তে প্রাণঘাতী সায়ানাইড রয়েছে। এরপরই চিসাকো নামের ৬৮ বছর বয়সী ওই নারীর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। পুলিশের তদন্তে যে কাহিনী বের হয়ে আসে তাতে স্তব্ধ হয়ে যায় পুরো জাপান।
পুলিশ দেখতে পায় যে চিসাকোকে বিয়ে করার কিছুদিনের মাথায় গত আট বছরে ইসাও কাহেকির মত ছয়জন পুরুষ আকস্মিকভাবে মৃত্যুবরণ করেছেন। এদের প্রায় সবাই ছিলেন মোটামুটি স্বাস্থ্যবান। তবে তাদের ব্যাংকের সঞ্চয় ছিল বেশ ভালো। আরো জানা যায়, বেশিরভাগ লোকই মারা যায় তাদের সমুদয় সম্পদ চিসাকোর নামে উইল করে দেয়ার পরপরই।
চিসাকোর কয়েকজন স্বামী বা প্রেমিক মারা যায় বিয়ে বা সম্পর্ক তৈরির মাত্র কয়েক মাস পরপরই। কয়েকটি ঘটনায় মাত্র ২ মাসের মাথায় স্বামী বা প্রেমিক মারা যায়। চিসাকো বিয়ে করেন, আর বিধবা হন- এ অবস্থায় কয়েকটি ট্যাবলয়েড পত্রিকা তাকো ব্ল্যাক উইডো বা কৃষ্ণ বিধবা উপাধি দেয়।
পুলিশের অনুসন্ধানে জানা যায়, এসব বিয়ে ব্যবসা করে চিসাকো মৃত স্বামীদের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৮০ লাখ ডলার বা ৬০ কোটি টাকার বেশি সম্পদের মালিক। হত্যার অভিযোগে গত মাসে জাপানের মুকোর পুলিশ চিসাকোকে গ্রেপ্তার করেছে।
গত সপ্তাহে পুলিশ জানায়, তারা চিসাকোর কাছ থেকে একটি ছোট ব্যাগভর্তি সায়ানাইড উদ্ধার করেছে। তবে ধরা পরে আগে সে এগুলো ফেলে দেয়ার চেষ্টা করেছিল। পুলিশ জানায়, চিসাকো অনলাইন ডেটিং এজেন্সির মাধ্যমে তুলনামূলক ধনী, বিপত্মীক এবং সিঙ্গেল লোকদের খুঁজে নিতেন।
একবার কাংখিত লোককে খুঁজে পেলে চিসাকো তার সাথে প্রেম করার জন্য রোমান্টিক মেইল পাঠাতে শুরু করতেন। চিসাকোর কাহিনী নিয়ে একটি উপন্যাস লেখা হয়েছে। এটি নিয়ে এখন সিনেমা তৈরির চুক্তি হয়েছে।
জাপানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি প্রবীণ লোকের বাস। দেশটিতে গড় আয় বাড়ছেই। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন দেশটি। চিসাকোর কাহিনী নিয়ে লেখা উপন্যাসের লেখক হিরোউকি কুরোকাওয়া এ ব্যাপারে বলেন, ‘প্রবীণ লোকরা ছিল তার সহজ টার্গেট। কারণ তাদের অনেক টাকা থাকে কিন্তু তারা নিঃসঙ্গতায় ভোগেন। এই ঘটনা আমাদের সমাজের প্রবীণদের দুরাবস্থার প্রতিফলন।’
মন্তব্য চালু নেই