এশিয়া কাপ- ২০১৬

স্বপ্ন পূরণের অপেক্ষায় প্রহর গুণছে সমগ্র বাংলাদেশ

আকাশ ছোঁয়া স্বপ্ন। সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন দেখতে মরিয়া কোটি কোটি সমর্থক। একটা টিকিট পেতে পুলিশি হামলা বা হয়রানিকেও তারা বাধা হিসেবে মানছেন না। দুদিন রাস্তার ওপর শুয়ে থেকেও সোনার হরিণের মতো যোগার করেছেন এশিয়া কাপের ফাইনালের টিকিট। স্টেডিয়ামে বসে স্বাক্ষী হতে চান ঐতিহাসিক এক মাহেন্দ্রক্ষণের। এশিয়া কাপের শিরোপা জিতবে বাংলাদেশ; মাথায় পড়বে ক্রিকেটের এশিয়া সেরার মুকুট। সেই স্বপ্ন পূরণের অপেক্ষায় প্রহর গুণছে সমগ্র বাংলাদেশ।

ভক্তদের এমন প্রত্যাশার চাপ খেলোয়াড়দের জন্য বাড়তি চাপ হওয়ারই কথা। তবে যাদের খেলা দেখার জন্য ক্রিকেটপ্রেমীদের এত পেরেশানি- তারা অবশ্য মাথায় রাখতে চাইছেন না এসব হিসাব। ভারতের বিপক্ষে রবিবার সন্ধ্যার ফাইনাল ম্যাচ নিয়ে বাড়তি কোনো চাপ না নেওয়ার কথাই তাই জানালেন বাংলাদেশের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা।

ম্যাচটা পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের বিপক্ষে। টি২০ ফরম্যাটে শক্তির বিচারে তারাই এগিয়ে। তবে কোটি কোটি টাইগার ক্রিকেটভক্ত এসব কিছু হিসেবে নিতে চান না। তাদের বিশ্বাস, ভারতকে হারিয়ে বাংলাদেশ জিতবে ফাইনালে। মানুষের এই চাওয়াটাকে অনুপ্রেরণা হিসেবে নিলেও, হার-জিতকে টাইগার দলপতি মাশরাফি ছেড়ে দিচ্ছেন মাঠের পারফরম্যান্সের উপর। ভারতের মতো দলের বিপক্ষে সব বিভাগে ভাল করেও যে জয় পাওয়াটা কঠিন, সেটাও মানছেন তিনি।

মাশরাফির ভাষায়, ‘এসব আসলে আমাদের চিন্তা করার বিষয় না। পেশাদার হিসবে আমরা পরিকল্পনা করতে পারি, আমাদের উচিত শুধু ম্যাচ নিয়েই ভাবা। আমরা সেটাই চাচ্ছি এবং করছি। ছেলেরা যতটা সম্ভ স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করছে। টুর্নামেন্টের শুরুতে একটা কথা আমি বলেছি যে আমরা অবশ্যই চ্যাম্পিয়ন দল ছিলাম না। আমরা চেয়েছিলাম এশিয়া কাপের আগে যেভাবে খেলছিলাম, সেটায় যেন উন্নতি করতে পারি। গ্রাফটা উর্ধ্বমুখী মানে এই না যে, আমরা বড় দল হয়ে গেছি। আমরা যেভাবে উন্নতি করছি। এরকম করতে থাকলে আমরা ভালো করতে পারব।’

টি২০-তে বাংলাদেশের অতীত পারফরম্যান্স অবশ্য আশাবাদী হওয়ার মতো ছিল না। তাই তো র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশ রয়েছে ১০-এ। আর ভারত রয়েছে শীর্ষে। সেসব অবশ্য কাগজ-কলমের হিসাব। বাস্তবতা হচ্ছে এশিয়া কাপে সংযুক্ত আরব আমিরাতের পর দুই শক্তিশালী জায়ান্ট পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এখানেই প্রত্যাশার পারদটা লাল-সবুজের সমর্থকদের ওঠে গেছে অনেক ধাপ উপরে।

একের সঙ্গে দশের লড়াই; এই প্রসঙ্গে মাশরাফি বলেন, ‘এটা রোমাঞ্চ না, বাস্তবতা। তবে খেলার মাঠে আমরা শতভাগ দিয়েই চেষ্টা করব। নিজেদের যা করণীয়, সেটার সর্বোচ্চ করার চেষ্টা করব। ভাগ্যের আশায়ও কিছুটা আছি আমরা। ভাগ্যকে পাশে পেলে ম্যাচ অবশ্যই আমাদের দিকে আসতে পারে।’

ফাইনালের আগে ইনজুরির একটা খড়গ অবশ্য আছে বাংলাদেশের উপর। ইনজুরিতে এর আগেই কাটারখ্যাত তরুণ পেসার মুস্তাফিজুর রহমান টুর্নামেন্ট থেকেই ছিটকে পড়েছেন। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানও বাম উরুতে চোট পেয়েছেন। যদিও দলের ফিজিও বায়েজিদ ইসলাম খান সাকিবের খেলার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

ফাইনাল নিয়ে মুখে চাপের কথা স্বীকার করছে না ভারতও। তবে দলটির জন্য এই ম্যাচ বিরাট চাপের। ফরম্যাট ভিন্ন হলেও ভারত ‍টুর্নামেন্টে পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন। এখন টি২০ ফরম্যাটে প্রথমবার আয়োজিত এই প্রতিযোগিতায় তাদের মোকাবেলা করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। যে দলটির কাছে ওয়ানডে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে বড় একটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছিল। শুধু তাই নয়, ঘরের মাটিতে ওয়ানডে সিরিজেও গত বছর তারা হেরেছে টাইগারদের কাছে। এই অবস্থায় প্রায় দেড়শ কোটি জনসংখ্যার দেশের দল হিসেবে ধোনিদের জন্য বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলাটা অবশ্যই চাপের।

সতর্কতার সঙ্গে বিষয়টি মাথায় নিয়ে এগুচ্ছেন ধোনিরা। শনিবার প্রাক-ম্যাচ সংবাদ সম্মেলনে অবশ্য ভারতের অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি আসেননি। এসেছিলেন টিম ডিরেক্টর রবি শাস্ত্রী। তিনি জানালেন, ভারত যেহেতু এর আগেও অনেকবার এমন ম্যাচ খেলেছে। তাই এ নিয়ে তাদের আলাদা কোনো চাপ নেই।

বাংলাদেশের ঘরের মাটিতে খেলা। সমর্থকরা তাই থাকবে পুরোটাই মাশরাফিদের পক্ষে। এতে অবশ্য চাপ নিচ্ছেন না শাস্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমরা এমন দর্শক সমাগমের মধ্যে খেলে অভ্যস্ত। এই লেভেলে খেলার সময় এসব নিয়ে ভাবার সময় কই। এটা অবশ্যই একটা সুবিধা। তবে এমন চাপেও খেলে অভ্যস্ত হতে হবে।’

বাংলাদেশের বিপক্ষে আসরের প্রথম ম্যাচে সংগ্রাম করতে হয়েছিল ভারতকে। সেই ম্যাচ থেকেই অনুপ্রেরণা খুঁজছে ভারত। শাস্ত্রী বলেন, ‘প্রথম ম্যাচে আমরা প্রথম ১০ ওভার চাপে ছিলাম। তবে ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হই। প্রত্যেক ম্যাচই কঠিন। তবে ব্যাট, বল ও ফিল্ডিংয়ে সমন্বয় করাটা এখানে গুরুত্বপূর্ণ।’

দুদলের মুখোমুখি লড়াইয়েও এগিয়ে আছে ভারতই। টি২০-তে তিনবারের সাক্ষাতে সবকটিতেই জিতেছে ভারত। তাই এই ম্যাচে বাংলাদেশ জিতলে একইসঙ্গে ভারতের বিপক্ষে প্রথম টি২০ ম্যাচ জেতা হবে। সঙ্গে এশিয়া কাপের শিরোপা জয় হবে প্রথমবার। প্রথম কোনো বড় শিরোপার দেখাও পাবেন মাশরাফিরা। চার বছর আগে পাকিস্তানের সঙ্গে যেই স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছিল ২ রানের জন্য। এবার তেমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি শের-ই-বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে হবে না; এমন প্রত্যাশা গোটা বাংলাদেশ।



মন্তব্য চালু নেই