‘স্পিনার হয়ে ঢুকে অলরাউন্ডার হয়ে বের হবো’
উনিশের যুবক ২৫ অক্টোবর টিনেজারের তকমা পার করবেন। এর মধ্যে ক্রিকেটের চোরাগলিতে বেশ ডুবেছেন। দেশের মাটির যুব-বিশ্বকাপে দলকে একাই টেনেছিলেন অনেকটা পথ। টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ও ছিলেন তিনি। সেই মেহেদি হাসান মিরাজকে আফগানিস্তানের বিপক্ষে জাতীয় দলে দেখলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। কিন্তু মিরাজ এই রোমাঞ্চে এতটাই শিহরিত যে ভাবতেই পারছেন না মাশরাফি-সাকিবদের সঙ্গে খেলবেন।
ছুটিতে এখন গ্রামের বাড়িতে আছেন। তিনদিন ধরে চেষ্টা করা হলেও মিরাজ কথা বলার সময় বের করতে পারছিলেন না। ঈদের একদিন আগে যখন ফোন করা হয়, তখন গরুর হাটে। দারুণ ব্যস্ততা। মিরাজ তাই দুঃখ প্রকাশ করে ফোন রেখে দেন। ঈদের দিন বিকেলে খাওয়া-দাওয়ায় ব্যস্ত ছিলেন। অবশেষে বুধবার ফোন ধরে নিজে থেকেই বললেন, ‘ভাই গ্রামের বাড়ি আছি তো। তাই দৌড়ের পর থাকতে হচ্ছে। একদম সময় পাচ্ছি না। আজ একটু ফ্রি আছি।’
অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের আগে থেকেই আলোচনায় ছিলেন মিরাজ। বিশ্বকাপের পর সেই আলোচনা জমে খির। টুর্নামেন্টে ১৭.৬৬ গড়ে ১২ উইকেট নেন। চারটি অর্ধশতকসহ ৬০.৫০ গড়ে করেন ২৪২ রান। ২০১৩ সালের এপ্রিলে অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেটে অভিষেক হয়। ৫৬ ম্যাচে ২০.৯০ গড়ে ৮০ উইকেট নিয়ে যুব ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি উইকেটও তার। পাশাপাশি ২০ গড়ে ১ হাজার ৩০৫ রানের মালিক। ব্যাটে-বলে এমন আলো ছড়ানো যুবককে অলরাউন্ডার না বলে উপায় আছে?
উপায় আর থাকে কই। তার মাঝে অনেকেই সাকিবের ছায়া দেখছেন। মিরাজকে কিন্তু অলরাউন্ডার হিসেবে প্রাথমিক দলে নেয়া হয়নি। স্পেশালিষ্ট অফ স্পিনার হিসেবে নেয়া হয়েছে। মিরাজ বললেন, ‘আগে চেষ্টা করবো ভালো খেলতে। তারপর স্পিনার হয়ে ঢুকে অল-রাউন্ডার হয়ে বের হবো।’
মিরাজকে এখন থেকেই ভবিষ্যতের সাকিব বলা হচ্ছে। চারদিক থেকে মিরাজের কানেও এসব তুলনা ভেসে আসে। মিরাজ ‘ওই ভাবে’ চিন্তা না করলেও এক ধরনের ভালো লাগা ঠিকই মনের আকাশে ভর করে, ‘মানুষ যেভাবে বলে, ওই ভাবে হয়তো চিন্তা করি না। তবে ভালো লাগে। সাকিব ভাই অনেক বড় ক্রিকেটার। দেশকে অনেক কিছু দিয়েছেন। আমিও কিছু দিতে চাই।’
মিরাজ ‘কিছু দেয়ার’ পথে হাঁটতে হাঁটতে ক্রিকেট থেকে পেতেও শুরু করেছেন। ঈদে এখন সবাইকে সালামী দেন। মা-বাবাকে উপহার দেন। এবার তো নিজেই গরু কিনে ফেলেছেন। দাম পড়েছে ৫৮ হাজার ২০০ টাকা। পরিবারের মতো যুব দলেও পরিণত এক মিরাজের দেখে মেলে। সংবাদ সম্মেলনে যেভাবে কথা বলেন, তাতে কে বলবে এই ছেলে এখনো টিনেজার! তাছাড়া গোটা দলকে নাকি মাশরাফির মতো সারাক্ষণ তাতিয়ে রাখতেন। মাশরাফি সম্পর্কে মিরাজ কী ভাবেন?
‘মাশরাফি ভাই তো গ্রেট ক্রিকেটার। ওনাকে অনুসরণ করা ভাগ্যের ব্যাপার। ভাবতেই পারি না ওনার সঙ্গে জাতীয় দলে খেলবো। আমাকে বলবেন- ওখানে যা, এখানে দাঁড়া। এবার বলে আয়। উফপপ!’ ফোনের এপার থেকে বোঝা যায় মিরাজ কথা বলছেন আর শিহরণের দুনিয়ায় হাঁটছেন। মিরপুর-সবুজ ঘাস-ফ্লাড লাইট-মাশরাফির ইশারা- চকিতে বল হাতে হাজির এক তরুণ। মিরাজ!
মন্তব্য চালু নেই